হায়দরাবাদ: যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে 50 বছর আগে ৷ দিনটি 1975 সালের 19 এপ্রিল। এদিন ভারতীয় সময় দুপুর 1 টা বেজে 28 মিনিট 55 সেকেন্ড প্রথম উপগ্রহ, আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ হয়েছিল । ভারত সোভিয়েত-নির্মিত কসমস-3এম রকেট থেকে এটি পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে ৷ মাত্র 30 মাসের মধ্যে ইসরোর তরুণ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দল এটি তৈরি করেছিলেন ৷ এই উপগ্রহটি কেবল ভারতের মহাকাশ যুগের সূচনাই করেনি, উন্নয়নশীল দেশের মতো ভারতকতেও বৈজ্ঞানিক দিক থেকে এগিয়ে দিয়েছে । ভারতে প্রতি বছর 19 এপ্রিল 'স্যাটেলাইট প্রযুক্তি দিবস' হিসবে পালিত হয়।
1987 থেকে 1990 সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল ৷ সেই সময়েই রাশিয়ার কাপুস্তিন ইয়ার থেকে সোভিয়েত কসমস-3এম রকেটে আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল । এই সময়েই ভারতের দিকে রাশিয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ৷ দিনটি ছিল 19 এপ্রিল ৷ এই বিশেষ দিনে ভারত প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল ৷
আর্যভট্ট (Aryabhata) : ভারতের প্রথম উপগ্রহ
- প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ আর্যভট্টের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল, এটি ছিল ভারতের প্রথম উপগ্রহ
- এটি সম্পূর্ণরূপে ভারতে ডিজাইন এবং তৈরি করা হয়েছিল। এটি 19 এপ্রিল, 1975 সালে রাশিয়ার কাপুস্তিন ইয়ার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল
- ভারত মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণকারী বিশ্বের 11তম দেশের জায়গায় স্থানঅধিকার করেছিল সেসময়ে
- ইসরোর উপগ্রহ আর্যভট্ট এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা, বায়ুগতিবিদ্যা এবং সৌর পদার্থবিদ্যার উফর পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়েছে
আর্যভট্ট উপগ্রহের বিশেষত্ত্ব কি
- মিশন: বৈজ্ঞানিক ও পরীক্ষামূলক
- ওজন: 360 কেজি
- অনবোর্ড পাওয়ার: 46 ওয়াট
- যোগাযোগ: ভিএইচএফ ব্যান্ড
- পেলোড: এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা, অ্যারোনমিক্স এবং সৌর পদার্থবিদ্যা
- উৎক্ষেপণের দিন: 19 এপ্রিল, 1975
- উৎক্ষেপণ স্থান: ভলগোগ্রাদ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র (বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থিত)
- উৎক্ষেপণ যান: সি-1 ইন্টারকসমস
- কক্ষপথ: 569 x 619 কিমি
- অবস্থান: 50.7 ডিগ্রি হেলে
- মিশনের সময়কাল: 6 মাস
- কক্ষপথে অবস্থান: প্রায় 17 (10ফেব্রুয়ারী, 1992) বছর পর পৃথিবীর কক্ষপথে পুনরায় প্রবেশ করে ৷
ভারতের প্রথম উপগ্রহের ইতিহাস
এই মিশনটি ছিল ভারতীয় বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়ন। 1960-এর দশকে আমেরিকা এবং রাশিয়া ভ্রমণের সময় মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু করেন । ভারতে আসার পর, তাঁর প্রিয় শিষ্য ইউর রাওকে ভারতের প্রথম উপগ্রহ অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন । বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চলতে থাকে । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সম্মতিতে, রাশিয়াও 1971 সালে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
মিশনটি সাময়িকভাবে থমকে যায়
52 বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিক্রম সারাভাই-এর প্রয়াণের পর ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনটি ধাক্কা খায়। সাময়িক ভাবে থমকে যায় ৷ পরে আবারও শুরু হয় ৷
আর্যভট্ট নামটি কেন ?
1975 সালে উপগ্রহটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীকালে, ইন্দিরা গান্ধী এবং ইসরো বিজ্ঞানীদের মধ্যে উপগ্রহের নামকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। তিনটি নাম সুপারিশ করা হয়েছিল: মৈত্রী, আর্যভট্ট এবং জওহর। 'মৈত্রী' ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বকে বোঝায়, আর্যভট্ট - ছিল ভারতের মহান গণিতবিদ এবং 'জওহর' বলতে ছিল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নাম উল্লেখ করা হয়েছিল । পরবর্তীকালে, ভারতের প্রথম উপগ্রহের নাম 'আর্যভট্ট' রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর্যভট্টের ইতিহাস
আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল 19 এপ্রিল, ভারতীয় ইতিহাসের এক স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয় দিনটি । সফল উৎক্ষেপণের পর, প্রতিটি ভারতীয় গর্বিত বোধ করেছিলেন, কারণ ভারত মহাকাশ যুগে প্রবেশ করেছে। অভিযানটি 6 মাস স্থায়ী হলেও, আর্যভট্ট মাত্র 4 দিনের জন্য সংকেত পাঠিয়ে ছিল ৷ দীর্ঘ 17 বছর পর, 1992 সালের 10 ফেব্রুয়ারি, আর্যভট্ট আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।
ভারতের 'স্যাটেলাইট ম্যান' মনে আছে?
উদুপি রামচন্দ্র রাওকে ভারতের 'স্যাটেলাইট ম্যান' বলা হয়। তিনি ভারতের উপগ্রহ প্রযুক্তি এবং মহাকাশ কর্মসূচির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের প্রথম উপগ্রহ আর্যভট্টের উন্নয়নেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য । তিনি যোগাযোগ, দূরত্ব অনুধাবন এবং আবহাওয়ার পরিস্থিতি জানতে অন্যান্য উপগ্রহের নকশা এবং উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধান করেছিলেন। তাঁর অবদান ভারতের উপগ্রহ প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতার দিকে পরিচালিত করে ৷ ভারতীয় উপগ্রহ কর্মসূচির ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়। রাও 1976 সালে পদ্মভূষণ এবং 2017 সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।
প্রাণের অস্তিত্ত্ব! ভিনগ্রহে জৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বিশেষ রাসায়নিক গ্যাসের সন্ধান