কলকাতা, 26 মার্চ: জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষকরা বঙ্গোপসাগরে লোবোথোরাক্স ভারত (Lobothorax bharat) নামক একটি নতুন প্রজাতির পরজীবী আইসোপড চিহ্নিত করেছেন । গোপালপুর-অন-সি, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার এস্টুয়ারিন বায়োলজি রিজিওনাল সেন্টার এবং বেরহামপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌথ গবেষণার ফলস্বরূপ এই আবিষ্কারটি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং মাছের পরজীবীতত্ত্বের বিদ্যমান জ্ঞানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ।
ZSI-এর গবেষণা দলে ড. সন্দীপ কুমার মহাপাত্র, ড. সন্মিত্র রায়, ড. জয় কিশোর শেঠ, ড. বাসুদেব ত্রিপাঠী ও ড. অনিল মহাপাত্র ছিলেন । ড. জয় কিশোর শেঠ, ড. অনিল মহাপাত্র এবং ড. বাসুদেব ত্রিপাঠীর যৌথ নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল ।
নতুন চিহ্নিত প্রজাতি লোবোথোরাক্স গণের অন্তর্ভুক্ত, যা সামুদ্রিক মাছের মুখগহ্বরে পরজীবী হিসাবে পরিচিত আইসোপডের একটি দল । এই পরজীবীরা তাদের পোষকের রক্ত এবং শ্লেষ্মা খেয়ে বেঁচে থাকে, যা প্রায়শই আক্রান্ত মাছের রক্তাল্পতার কারণ হয় ।

ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহাবলপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও গঞ্জাম জেলার গোপালপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ফিতা মাছ, ট্রাইচিউরাস লেপটুরস লিনিয়াস 1758-এর মুখ থেকে লোবোথোরাক্স-এর ছয়টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল । প্রায় 3 সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এবং ক্রিমযুক্ত সাদা রঙের আইসোপডটি সাতটি পেরেওনাইট এবং পাঁচটি প্লিয়োনাইট দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । এটি সাত জোড়া পা ব্যবহার করে, যার প্রতিটি হুকের মতো ড্যাকটিলি দিয়ে সজ্জিত, যা মাছের মুখগহ্বরে দৃঢ়ভাবে নিজেকে সংযুক্ত করে ।
জেডএসআই-এর অধিকর্তা ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই আবিষ্কারটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র লোবোথোরাক্স আইসোপডের পরিচিত বৈচিত্র্যকেই বাড়িয়ে তোলে না, বরং বঙ্গোপসাগরের জটিল পরিবেশগত সম্পর্ককেও তুলে ধরে ।"
লোবোথোরাক্সের ভারত-এর নিকটতম প্রজাতি লোবোথোরাক্স টাইপাস ব্লিকার, 1857 ৷ এর থেকে লোবোথোরাক্সে ভারত-কে বেশ কয়েকটি মূল অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- পেরেওনের উপর একটি স্বতন্ত্র ডরসো-মধ্যবর্তী শৈলশিরা ।
- ম্যাক্সিলিপেডে তিনটি কাঁটার উপস্থিতি ।
- প্রথম পেরেওনাইটে ছোট, চামচের মতো অ্যান্টেরোলেটারাল প্রক্রিয়া ।
- সেফালোনের একটি উপ-কর্তিত অ্যান্টেরোলেটারাল মার্জিন ।
এছাড়া, জেনেটিক বিশ্লেষণে লোবোথোরাক্স ভারত ও লোবোথোরাক্স টাইপাসের মধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়াল সাইটোক্রোম সি অক্সিডেস সাবইউনিট 1 (COI) জিন সিকোয়েন্সে 2.5 শতাংশ পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে, যা একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসাবে এর অবস্থান নিশ্চিত করে ।
এই আবিষ্কারের আগে লোবোথোরাক্স গণে মাত্র তিনটি পরিচিত প্রজাতি ছিল । লোবোথোরাক্স ভারত-এর সংযোজন মোট সংখ্যা চারটিতে নিয়ে আসে, যা ব্যাপক সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য গবেষণার চলমান প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় ।
2023 সালে শুরু হওয়া গবেষণাটি সামুদ্রিক জীবের জটিল জীবন উন্মোচন ও বোঝার জন্য সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্রমাগত অনুসন্ধান ও অধ্যয়নের গুরুত্বের উপর জোর দেয় ।