জলপাইগুড়ি, 24 মার্চ: আর্থ সামাজিক অবস্থা ভালো নয় জলপাইগুড়ির । এখানকার বেশির ভাগ মানুষরা চা বাগানে কাজ করেন । চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণেই যক্ষ্মার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে এই সব এলাকায় ৷ যক্ষ্মা দিবসে অকপট স্বীকারোক্তি জলপাইগুড়িরর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ।
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষ্যে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল । সেখানে যক্ষ্মা রোগীদের দত্তক নেওয়া (নিক্ষয় মিত্র) শুভানুধ্যায়ীদের সম্মান জানানো হয় । জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতর, জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে অনেকেই যক্ষ্মা রোগীদের সাহায্য করার জন্য নিক্ষয় মিত্র হয়েছেন । যক্ষ্মা রোগীদের প্রতি মাসে 500 টাকা করে ছয় মাসের খরচ দিয়ে হয় নিক্ষয় মিত্রদের । এভাবে এই রোগ সারাতে অনেকটাই সাফল্য পেয়েছে জলপাইগুড়ি ।
জলপাইগুড়ি জেলার যক্ষ্মা আধিকারিক ড. শুভদীপ সরকার ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গার ডাক্তার, ব্যবসায়ী, পুলিশ আধিকারিক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মীদের নিক্ষয় মিত্র করেছেন । তাঁরা যক্ষ্মা রোগীদের পুষ্টি আহার দিচ্ছেন প্রতি মাসে । শুভদীপ সরকারের কথায়, ‘‘শুধু ওষুধ দিলেই হবে না । যক্ষ্মা রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, তবেই তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠবেন ৷ আর আমরা এই ভাবেই অনেক সফল হয়েছি ।’’
2020 সালে জলপাইগুড়ি জেলায় মোট যক্ষ্মা রোগী ছিল 2457 জন । চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন 2113 জন । 2021 সালে জলপাইগুড়ি মোট যক্ষ্মা রোগী ছিল 2479 জন । চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন 2132 জন । 2022 সালে জলপাইগুড়ি জেলায় মোট যক্ষ্মা রোগী ছিল 3095 জন । চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন 2693 জন । রোগী মারা গিয়েছেন 175 জন ।
2023 সালে মোট যক্ষ্মা রোগী ছিল 3338 জন । চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন 2937 জন । 155 জন রোগী মারা গিয়েছেন । 2024 সালে মোট যক্ষ্মা রোগী ছিল 3362 জন । চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন 3026 । 177 জন রোগী মারা গিয়েছেন । 2025 সালে এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা 702 জন । চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত 17 জন রোগী মারা গিয়েছেন যক্ষ্মা রোগে ।
2024 সালে জলপাইগুড়ি জেলার 10টি টিবি ইউনিটের মধ্যে মোট জনসংখ্যার 24 লক্ষ 16 হাজার 755 জনের মধ্যে 3362 জন রোগীর যক্ষ্মা হয়েছিল । তার মধ্যে বানারহাটে 474 জন, ধূপগুড়িতে 223 জন, বেলাকোবায় 316 জন, জলপাইগুড়ি পুরসভা এলাকাতে 254 জন, ওদলাবাড়িতে 316 জন, মালবাজার পুরসভায় 326 জন, মেটেলিতে 284 জন, ময়নাগুড়িতে 272 জন, নাগরাকাটাতে 383 জন ও রাজগঞ্জে 556 জনের নাম যক্ষ্মা রোগী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে ।
জেলা যক্ষ্মা ইউনিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি জেলায় 2023 সালে 63 নিক্ষয় মিত্র 129 জন যক্ষ্মা রোগীকে সাহায্য করেছেন । 2024 সালে নিক্ষয় মিত্র ছিল 121 জন । তাঁরা মোট 404 জন রোগীকে দত্তক নিয়েছিলেন । 2025 সালে এখনও পর্যন্ত 52 জন নিক্ষয় মিত্র প্রত্যেকে একজন করে মোট 52 জন যক্ষ্মা রোগীকে দত্তক নিয়েছেন ।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. অসীম হালদার বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় আর্থ সামাজিক অবস্থা উপরের দিকে দিক তা নয় । এখানকার মানুষ বেশির ভাগ চা শ্রমিক । তাঁরা চা বাগানে কাজ করেন । বানারহাট, মালবাজার, নাগরাকাটা, মেটেলি-সহ বিভিন্ন ব্লকে চা বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা । মেটেলি ব্লকে দেড় লক্ষের বাসিন্দার মধ্যে 1 লক্ষ 31 হাজার মানুষ চা বাগানে বাস করেন । আর্থ সামাজিক অবস্থা ভালো না ।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘আর্থ সামাজিক অবস্থা ভালো না হলেই সেখানে রোগের বাসা বাঁধে । বসবাসের উপযোগী থাকে না । ভেক্টরবোর্ন ডিজিজ বাড়ে । আবহাওয়া বা বসবাসের উপযোগী হয় রোগ ছড়ানোর জন্য । এই জেলায় ভেক্টরবোর্ন ডিজিজ চা বাগান ও বন জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বেশি হয় ৷’’
জলপাইগুড়ি ফরেনসিক বিভাগের আধিকারিক ড. মৌসুমী রক্ষিত যক্ষ্মা দিবসের অনুষ্ঠানে এসে বলেন, ‘‘আমি লক্ষ্য করেছি চা বাগানের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন । আমরা যদি এই সমস্ত রোগীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারি, তাহলে ওই রোগী বা তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারব । আগামীতে যক্ষ্মা মুক্ত ভারত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি টিবি ইউনিট যেভাবে কাজ করছে, তাতে এই জেলাকে যক্ষ্মা মুক্ত করতে পারব বলে আশা রাখছি । এছাড়া আমরা অনেকেই সাহায্য করতে ইচ্ছা প্রকাশ করি ৷ কিন্তু কীভাবে করব তা জানতে পারি না বলেও সাহায্য করতে পারি না । তবে জেলা যক্ষ্মা আধিকারিক ড. শুভদীপ সরকার যেভাবে যক্ষ্মা রোগীদের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য এক জায়গায় পুলিশ-প্রশাসনকে এক করেছেন । তাতে আমরাও সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি ।’’
এদিন জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. অসীম হালদার, জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি ড. কল্যাণ খাঁ, জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৌভনিক মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যরা ।