আমডাঙা, 26 মার্চ: দত্তপুকুর-কাণ্ডের ছায়া এবার আমডাঙায় । চাষের জমিতে মিলল মহিলার অর্ধনগ্ন, আধপোড়া দেহ । সাতসকালে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের শশীপুর খাসপাড়া গ্রামে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে আমডাঙা ও শিবদাসপুর থানার পুলিশ ।ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে ডগ স্কোয়াডও । দেহ উদ্ধারের পর এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে । রয়েছে র্যাফ । তবে, ওই মহিলার পরিচয় এখনও জানা সম্ভব হয়নি । প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে । তবে, এর পিছনে আরও নৃশংস কিছু লুকিয়ে রয়েছে কি না,তার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
উত্তর 24 পরগনার আমডাঙার শেষ প্রান্তে রয়েছে শশীপুর খাসপাড়া গ্রাম । গ্রামের এক দিকে রয়েছে বাসুদেবপুর । আরেক দিকে রয়েছে শিবদাসপুর । খাসপাড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে ফাঁকা একটি চাষের জমিতে এদিন সকালে ওই মহিলার দেহ পড়ে দেখতে দেখেন কয়েকজন কৃষক । সেই সময় তাঁরা চাষের জমিতে যাচ্ছিলেন । কাছে গিয়ে দেখতেই দেখা যায়, মহিলার পরনে কোনও জামা-কাপড় নেই । দেহও অর্ধেক পোড়া । খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়ে যায় গ্রামে । বাড়তে থাকে কৌতূহলী মানুষের ভিড় । খবর যায় পুলিশে ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের বিশাল টিম । তদন্তের স্বার্থে নিয়ে আসা হয় ডগ স্কোয়াডও । সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মহিলার দুই পায়ের উপরের এবং পেটের কিছুটা অংশ একেবারে ঝলসানো অবস্থায় ছিল । শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গও ছিল কিছুটা পোড়া । হাতে ছিল শাখা, পলা ও এবং মাথায় সিঁদুর । তা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই মহিলা সম্ভবত বিবাহিত ছিলেন । শুধুই খুন নাকি শারীরিক নির্যাতনের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ ৷

অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার অর্ধনগ্ন ও আধপোড়া দেহ উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ । তাই, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা । এই বিষয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা স্থানীয় কেউ নন ! তাই, বাইরে কোথাও তাঁকে খুন করে দেহ ওই চাষের জমিতে ফেলে আসা হয়েছে বলে মনে করছি আমরা । শারীরিক নির্যাতন হয়েছে কি না,তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে বোঝা যাবে । ওই মহিলার পরিচয় জানতে বিভিন্ন থানায় ছবি পাঠানো হয়েছে । দেখা হচ্ছে, সম্প্রতি কোনও মিসিং ডায়রি হয়েছে কি না । জোরকদমে তদন্ত শুরু হয়েছে ।"

অন্যদিকে, দেহ উদ্ধারের ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কিত এলাকার লোকজন । বিশেষ করে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, "এই এলাকা দিয়ে দিন-রাত যাতায়াত করেন তাঁরা । গ্রামের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা তাঁরা ভাবতেই পারছেন না ।"
এই বিষয়ে স্থানীয় চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের সদস্য আক্রম হোসেন বলেন, "সকালে শুয়েছিলাম । সেই সময় খবর পাই এলাকায় এক মহিলার লাশ পড়ে রয়েছে উলঙ্গ অবস্থায় । দেহ পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কোথায় পোড়ানো হয়েছে জানি না । পরিচয় জানা যায়নি । কোন এলাকার বাসিন্দা, কী নাম কেউই বলতে পারছে না । তবে শুনলাম, মহিলার বয়স 35 থেকে 40 বছরের মধ্যে হতে পারে । খবর পেয়ে পুলিশ আসে । পুলিশ দেহ নিয়ে চলে যায় ।" ঘটনাটি যে যথেষ্ট উদ্বেগের তা মেনে নিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য । তাঁর কথায়, "এরকম ঘটনা আগে এখানে কখনও দেখিনি, শুনিনি ।"
প্রসঙ্গত, গত 3 ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বাজিতপুর এলাকার একটি চাষের জমি থেকে বছর চল্লিশের এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । প্রমাণ লোপাটে দেহটি'র হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল । যৌনাঙ্গও ছিল ক্ষতবিক্ষত । হাড়হিম করা সেই ঘটনার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল বাজিতপুর সংলগ্ন মালিয়াকুর গ্রাম । ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের বেশকিছু প্যাকেট বাজেয়াপ্ত হয়েছিল । ঘটনার দু'দিনের মাথায় যুবকের বাঁ হাতের ট্যাটু ও পোশাকের ছেঁড়া অংশের সূত্র ধরে পরিচয় মেলে যুবকের । জানা যায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর ।
সেই নৃশংস ঘটনায় একে একে ধরা পড়ে সব খুনিরা । মূল অভিযুক্ত আবদুল জলিলকে জম্মুর সাম্বা থেকে ধরে এ রাজ্যে নিয়ে আসে জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল । ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর বামনগাছি রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় হজরত লস্করের মুণ্ডহীন দেহ । তদন্ত শুরু হতেই মেলে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও । সেই ঘটনারই ছায়া এবার উত্তর 24 পরগনার আমডাঙাতে । তবে, পুরুষ নয় ! এখানে মহিলার অর্ধনগ্ন ও আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে চাষের জমি থেকে । তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷