আলিপুরদুয়ার, 18 এপ্রিল: আদরের পোষ্য এক পথ কুকুরকে বাঁচাতে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিলেন এক মহিলা ৷ পোষ্যকে বাঁচাতে চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়লেন ৷ অসীম সাহসী ওই মহিলা আলিপুরদুয়ারের তোপসিখাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটকাপাড়ার মাতাল মোড় এলাকার বাসিন্দা দীপশিখা সমাদ্দার ৷ একদিকে যেমন তিনি এক ছ’মাসের কন্যাসন্তানের মা ৷ এর পাশাপাশি সাত-সাতটি পথকুকুরকে দু’বেলা দেখভাল করেন ৷ এমনকি বাড়িতেও রয়েছে একটি কুকুর ও বিড়াল ৷ সন্তান স্নেহে তাদের লালনপালন করেন ৷
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাতে ওই কুকুরদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় দীপশিখার ৷ বিপদের গন্ধ আঁচ করে বারান্দায় আসতেই চোখ কপালে ওঠে ওই গৃহবধূর ৷ দেখেন একটি চিতাবাঘ পাঁচিল টপকে তাঁর উঠোনে ঢুকেছে ৷ আর সেটি একটি কুকুরকে মুখে করে নিয়ে যাচ্ছে ৷ আর প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া ওই পোষ্য চিৎকার করে যাচ্ছে ৷
আর তা দেখে মনে সাহস এনে ওই চিতাবাঘকে ধাওয়া করেন দীপশিখা ৷ যদিও, পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিষেধ করছিলেন ৷ কিন্তু, সেই বারণে কর্ণপাত করেননি তিনি ৷ শুধুমাত্র স্নেহের পোষ্যের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন । তাঁর পোষ্যকে নিয়ে চিতাবাঘটি যেই গেট টপকাতে যাবে, ঠিক তখনই হাতের সামনে পাওয়া একটি আধলা ইট ছুড়ে মারেন দীপশিখা ৷ ইট গায়ে লাগতেই কুকুরটিকে ফেলে রেখে পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় সেটি ৷ তখনই ছুটে গিয়ে জাপটে ধরেন ওই সারমেয়কে ৷ ওই রাত থেকেই জখম কুকুরটির চিকিৎসা শুরু করেন দীপশিখা ৷ আপাতত সে অনেকটাই সুস্থ ৷
দীপশিখা বলেন, "রাত আড়াইটা নাগাদ চিৎকার শুনি কুকুরগুলোর ৷ লাইট জ্বালিয়ে দেখি একটা চিতাবাঘ আমার কুকুরটাকে মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তখন গ্রিলের তালা খুলে ধাওয়া করি চিতাবাঘটিকে ৷ সে সময় কোনও কিছু মাথায় ছিল না ৷ একটাই চিন্তা ছিল কুকুরটাকে বাঁচাতে হবে ৷ এর জন্য আমাকে বাড়ির লোকের কাছে বকাও খেতে হয়েছিল ৷ তবে, বকা খাওয়াটা সার্থক হয়েছে ৷"
দীপশিখার পিসি মিনতি শিখা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এখানে সাধারণত হাতির খুব উপদ্রব আছে ৷ হাতি এলেই কুকুরগুলি সাধারণত অস্বাভাবিক চিৎকার করে ৷ আমি প্রথমে সেটাই ভেবেছিলাম ৷ চিতাবাঘ একবারও মাথায় আসেনি ৷ চিৎকার শুনে বের হই ৷ আমি যখন বাইরে বের হই, তখন চিতাবাঘটি কুকুরটিকে নিয়ে চলে গেছে ৷ আর দীপশিখা ওই বাঘটির পিছন-পিছন দৌড়াচ্ছে ৷ আমি তখন চিৎকার করছি, তুই চলে আয় যাস না ৷"