বারাসত, 9 জুন: কম্বল মোড়ানো অবস্থায় বিছানায় পড়ে মহিলার নিথর দেহ । পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মুখও । ভাড়াটিয়া মহিলার রহস্যমৃত্যু ঘিরে রবিবার রাতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় উত্তর 24 পরগনার বারাসতের অশ্বিনী পল্লী এলাকায়। ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা মহিলার সঙ্গে থাকা ব্যাক্তি ।
ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে অন্য ভাড়াটিয়ারা বাড়ির মালিককে খবর দেন ৷ এরপর তিনিই খবর দেন বারাসত থানায় ৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘরের তালা ভেঙে ভিতর থেকে মহিলার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে । ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজে । প্রাথমিকভাবে পুলিশ একে খুনের ঘটনা মনে করলেও তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ৷ অভিযুক্তকে সোমবার সকালে চাঁপাডালি মোড় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
বিষয়টি নিয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন,"মৃত মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তের নাম বিজু সাহা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ তাঁকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই গোটা ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।"
ফলে,পর্যাপ্ত নথিপত্র ছাড়াই বহাল তবিয়তে ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকেন মহিলা এবং তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাক্তি।অভিযোগ, ভাড়াটিয়া হিসেবে আসার পর থেকে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকতে দু'জনের মধ্যে । এ নিয়ে অন্য ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করেন বাড়ির মালিকের কাছে।সম্প্রতি তিনি ভাড়া ঘর থেকে উঠে যেতে বলেছিলেন দু'জনকে । তারই মধ্যে গত তিন দিন ধরে ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাক্তির কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। ভাড়াটিয়াও তাঁদের আর দেখেননি।
ঘরের কলাপসিবলের গেট বাইরে থেকে তালা দেওয়া থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো বাইরে কোথায়ও গিয়েছেন ৷ রবিবার সন্ধ্যা থেকে ওই ভাড়া ঘরের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ বেরতে থাকে ৷ গন্ধ পেয়ে সন্দেহ জাগে অন্য ভাড়াটিয়াদের মনে ৷ তাঁরা বিষয়টি জানান, বাড়ির মালিক রঞ্জিত বড়ালকে। এরপর তড়িঘড়ি তিনি তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যান ভাড়া বাড়িতে ৷ সেখানে গিয়ে তাঁরাও প্রত্যক্ষ করেন বিষয়টি ৷ এরপর স্থানীয় কাউন্সিলরের অফিসে গিয়ে গোটা ঘটনাটি খুলে বলেন বাড়ির মালিক ৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বারাসত থানায় ৷
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে ঘরের তালা ভেঙে ভিতর ঢুকতেই তাজ্জব বনে যায় ৷ তাঁরা দেখেন, ওই মহিলার দেহ কম্বল মোড়ানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিছানায় ৷ গোটা মুখে রয়েছে পোড়া দাগও। তাহলে কী মহিলাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে ? খুনের পর প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতেই কী এই কাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন ওই ব্যাক্তি ? নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে ? এই সমস্ত প্রশ্নেরই এখন উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা সজল ভট্টাচার্য বলেন,"দলীয় কর্মসূচি সেরে সবে কাউন্সিলরের অফিসে এসে বসেছি। এমন সময় বাড়ির মালিক এই ঘটনার কথা জানাই। এরপর ওনাকে সঙ্গে নিয়ে বারাসত থানায় গিয়ে গোটা ঘটনাটি খুলে বলা হয়। দেহ দেখে মনে হয়েছে, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। মহিলাকে খুন করা হতে পারে। সবচেয়ে অবাক বিষয়, মহিলার সঙ্গে থাকা ওই ব্যাক্তিও উধাও হয়ে গিয়েছেন ৷ ফলে, তাঁর উপরই সন্দেহ জাগছে ৷ বাকিটা পুলিশের তদন্তের ব্যাপার ৷ তাঁরাই বলতে পারবে ৷ পুলিশ প্রশাসন বারবার বলছে, কোনও পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ভাড়া দেবেন না। তা সত্ত্বেও কিছু লোক প্রশাসনের নিয়ম অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশি মতো ভাড়া দিচ্ছে। কে ভাড়া নিচ্ছে । কী তাঁর পরিচয় সে সব দেখার বালাই নেই । এটা খুবই দুর্ভাগ্যের। এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমরা প্রচার অভিযানে নামব।"
এদিকে,পরিচয়পত্র ছাড়াই যে মহিলা ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাক্তিকে ঘর ভাড়া দিয়েছিলেন তা স্বীকার করে নিয়েছেন বাড়ির মালিক রঞ্জিত বড়াল। তিনি বলেন,"ভাড়া বাড়ি হলেও আমি এখানে থাকি না। পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করি। দেখলাম ওই মহিলার দেহ বিছানায় কম্বল মোড়ানো অবস্থায় রয়েছে । খুন না অন্য কিছু তা বলতে পারব না। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করুক সেটাই চাই।"