ব্যারাকপুর, 5 জুন: স্বামীকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ৷ মৃতের নাম সুনীত মুখোপাধ্যায় (35) ৷ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার হালিশহরের শরৎপল্লি এলাকায় ৷ ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্তরা ৷ এই ঘটনায় মৃতের পরিবার অভিযুক্ত স্ত্রী ও তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বীজপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷
কাঁচরাপাড়া পুরসভার 21 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুনীত ৷ বছর দেড়েক আগে প্রেম করে প্রতিবেশী স্নেহাকে বিয়ে করেন তিনি ৷ অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগেছিল ৷ মাঝে মধ্যেই স্নেহার বাপের বাড়ির লোকজন এসে সুনীতের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাত বলে অভিযোগ পরিবারের ৷ সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চরমে উঠেছিল বলে জানা গিয়েছে ৷
মঙ্গলবার রাতে সুনীতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে আবারও তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ সেই সময় বাড়িতে কেউ ছিল না ৷ সুনীতের বউদি তাঁর সন্তানকে কোলে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু, তাতে খুব একটা লাভ হয়নি ৷ মারধরের চোটে সুনীতের মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে বলে অভিযোগ ৷ কিন্তু, এরপর পাল্টা সুনীতের বিরুদ্ধেই থানায় গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেন স্নেহা এবং তাঁর মা-বাবা ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে সুনীতকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ ৷ যদিও, জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷
নিহতের পরিবারের দাবি, তারপর থেকেই মনমরা হয়ে ছিলেন সুনীত ৷ বুধবার দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর নিজের ঘরে শুতে চলে যান তিনি ৷ অভিযোগ, তার আগে সুনীতের সঙ্গে ফের অশান্তি করেছিলেন স্নেহা এবং পাশেই বাপেরবাড়িতে চলে যান ৷ সন্ধের সময় বাড়িতে ফেরেন স্নেহা ৷ সেই সময় বাড়িতে সুনীতের মা, দাদা এবং বউদি কেউ ছিল না ৷

স্নেহা প্রতিবেশীদের জানান, তিনি ডাকাডাকি করেও সুনীতের কোনও সাড়াশব্দ পাননি ৷ এরপর পিছনের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন, সুনীতের দেহ ঝুলছে ৷ যদিও, স্নেহার সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা ৷ তাঁদের দাবি, ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিল না ৷ আর সুনীতের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়ার দাবি করেছেন স্নেহা ৷ আর তাই তাঁদের অভিযোগ, স্নেহা এবং তাঁর বাবা-মা সুনীতকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছেন ৷ অন্যদিকে, এই ঘটনার পর থেকে স্নেহা এবং তাঁর বাবা-মা পলাতক ৷ পুলিশ তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে ৷
এই বিষয়ে সুনীতের আত্মীয় অরুণাভ চৌধুরী বলেন, "শুনলাম ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে বেধড়ক মারধর করে ৷ শ্বশুর, শাশুড়ি ও সুনীতের স্ত্রী তিনজন মিলে মেরে রক্তাক্ত করে দেয় ৷ এরপর, ওরাই আবার থানায় গিয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে আসে ৷ থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ভাইকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হয় ৷ তারপর তো এই ঘটনা ৷ আমাদের সন্দেহ সুনীতকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে ওর স্ত্রী এবং পরিবারের লোকজন ৷ পুলিশ সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিক, এটাই আমরা চাই ৷"
মৃতের মা মাধবী মুখোপাধ্যায় বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমার ছেলের উপর অত্যাচার চালাত ওর স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ি ৷ মঙ্গলবারও বাড়ি বয়ে এসে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন মারধর করেছে ছেলেকে ৷ বউমার বাপের বাড়ির লোকজন চাইত, মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে ৷ কারণ, আমার ছেলের উপার্জন কম ছিল ৷ ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না, কাজে গিয়েছিলাম ৷ সেই সময় ফোন যায় আমার কাছে ৷ এসে দেখলাম বাড়ির সামনে ভিড় করে রয়েছে লোকজন ৷ ওরা তিনজনে মিলে আমার ছেলেকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে ৷ আমি ওদের ফাঁসি চাই ৷"
এই নিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (নর্থ) গণেশ বিশ্বাস বলেন, "এটি খুন না আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই স্পষ্ট হবে ৷ গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে ৷ কাউকে রেয়াত করা হবে না ৷"