কলকাতা, 5 মার্চ: ভারতের নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা আধার কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন ৷ মূলত, বোঝাতে চেয়েছিলেন আধারের মতো পরিচয়পত্র না থাকলে, সাধারণ ভোটাররা ভোটদান কীভাবে করবেন ? তৃণমূলের সেই আশঙ্কাকে খারিজ করে দিল কমিশন ৷ জানিয়ে দেওয়া হল, আধার কার্ড না থাকলেও ভোটদানে কোনও সমস্যা নেই ৷ ভারত সরকার প্রদত্ত বাকি 12-13টি পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন নাগরিকরা ৷
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে দু’দিনের কলকাতা সফরে এসেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ ৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্ব সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং রাজ্য পুলিশ ও কমিশনারেটের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা ৷ প্রত্যেক জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নির্বাচনের আগে ও পরের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে ৷ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনকে সবদিক থেকে শান্তিপূর্ণ, প্রভাব ও প্রলোভন মুক্ত করতে একেবারে কোমর বেঁধে নেমেছে কমিশন ৷
আজ কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনভাবেই অশান্তি সহ্য করা হবে না ৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, গত দুদিনের বৈঠকে সমস্ত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে ৷ অর্থাৎ, কোনওভাবেই নির্বাচনের সময় বা তারপরে অশান্তি ও হিংসা সহ্য করা হবে ৷
আজ রাজীব কুমার জানান, জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নিয়মিত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করতে হবে ৷ রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বামেদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, একাধিক জেলার ডিএম ও এসপিরা অভিযোগ নেওয়া দূরের, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেন না ৷ তারপরেই জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সতর্ক করেছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ ৷ কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ছাড়াও, তারা কী কী অভিযোগ করল, তার নিষ্পত্তি কত দ্রুত হচ্ছে এবং কোন সমস্যার নিষ্পত্তি করা গেল না ? কেন করা গেল না ? সেই বিষয়গুলি বিস্তারিত লিখিত আকারে দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ৷
নির্বাচনকে কোনওভাবে প্রভাবিত করার অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাব সহ্য করা হবে না, বলে আজ জানিয়ে দিয়েছে ফুল বেঞ্চ ৷ এমনকি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পেশির জোর ও টাকার জোর খাটানো বরদাস্ত করা হবে না ৷ নির্ভয়ে ভোটারদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহী করতে হবে প্রশাসনকেই ৷
নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে এদিন মনে করিয়ে দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ৷ তাঁরা নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন না করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ করা হবে ৷ তাঁদের আধিকারিকদের কাজ করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ডিএম ও এসপিদের উপর বর্তায় ৷ এক্ষেত্রে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপাররা ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথা না শুনলে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কীভাবে কাজ করিয়ে নিতে হয়, তা জানা আছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিশন ৷
রাজিব কুমার এদিন বলেন, "রাজ্যের সব রিপোর্ট আমাদের কাছে ৷ ভোটের সময় এবং ভোর পরবর্তী সময় যাতে কোনওরকম হিংসার ঘটনা না ঘটে, সেটা দেখতে হবে ৷" আজ রাজীব কুমার জানান যে 50 শতাংশ বুথে ওয়েব কাস্টিং করা হবে ৷ তবে, তার চেয়ে বেশির চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ বুথের দায়িত্বে রাখা হতে পারে বিশেষভাবে স্বক্ষম ব্যক্তিদেরও ৷ মহিলা পরিচালিত বুথও থাকবে ৷ নির্বাচন কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কথা বলেছে রাজনৈতিক দলগুলিও ৷
সঙ্গে নির্বাচনের সময় অনুপ্রবেশকারীদের আটকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে কমিশন ৷ 85 বছরের বেশি বয়সী মানুষ যদি বাড়ি থেকে ভোট দিতে চান, তারও ব্যবস্থা করা হবে ৷ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ ৷ এনিয়ে সকল কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে আজ বৈঠক করেছেন কমিশনের সদস্যরা ৷ এছাড়া নির্বাচনের কাজে কোনও চুক্তিভিত্তিক ব্যক্তিকে ব্যবহার করা যাবে না বলে, স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: