কলকাতা, 30 মার্চ: প্রতি পাঁচবছর পরপর সাধারণ নির্বাচন আসে ৷ মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ৷ সেই ভোটারদের মধ্যে একটি শ্রেণি হল বিশেষভাবে সক্ষম ৷ আর পাঁচজন মানুষের মতো, তাঁদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে ৷ আর সেখানে যদি প্রথমবারের কেউ ভোটার হন, তাঁদের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও বেশি থাকে ৷ তেমনি কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷
প্রথমবারের ভোটার বারুইপুরের বাসিন্দা আলিয়া খাতুন (19) ৷ তিনি চোখে দেখতে পান না ৷ কীভাবে ভোটগ্রহণ হয় ? বা এর পুরো প্রক্রিয়া কী তাও জানা নেই ৷ তবুও, প্রথম ভোট ৷ তাই উত্তেজনা তো রয়েছেই ৷ নয়া নির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা তাঁর ? আলিয়া বলেন, "আমাদের মত যারা দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী রয়েছেন তাঁদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রকে আরো সুগম করা হোক ৷ মানুষ যেন একে অপরের সঙ্গে মিলে মিশে থাকতে পারে ৷" শহরের পরিবহণের ক্ষেত্রে, ট্রাফিক বড় ভূমিকা পালন করে ৷ তাই আলিয়ার দাবি, তাঁদের মতো দৃষ্টিহীনদের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন আরও সুষ্ঠুভাবে সাজানো হয় ৷ সেই সঙ্গে প্রথমবারের ভোটার হিসেবে, এই পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর ৷
আরের বিশেষভাবে সক্ষম প্রথমবারের ভোটার শীর্ষ নাগ (19) ৷ তাঁর মধ্যেও প্রথম ভোট নিয়ে উত্তেজনা কাজ করছে ৷ তাঁরও সরকারের কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়ার তালিকা আছে ৷ তিনি বলেন, "আমি এই প্রথমবার ভোট দেব ৷ আমি খুবই উত্তেজিত ৷ যাকেই ভোট দিইনা কেন, এলাকার মানুষ যেন সেই রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে চেনেন এবং তিনি যাতে শিক্ষিত মানুষ হন ৷ নব নির্বাচিত সরকারের কাছে এটাই আমার আবেদন থাকবে যে, আমাদের মতো বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ যাতে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, সেই ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন খোলা হয় ৷"
বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য, নির্বাচিত সরকার কী করবে ? বা না করবে, তা সময় বলবে ৷ তবে, জনপ্রতিনিধি আইনে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য বিশেষত, প্রথমবারের ভোটাদের সুবিধার্থে কী কী ব্যবস্থাপনা থাকছে ? ভোটদানের জন্য কী করণীয় ? সেই সব নিয়ে বুকলেট প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এ নিয়ে অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী জানান, প্রথমবার এই উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৷ প্রতিটি রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষায় এই বুকলেট প্রকাশ করা হয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গের জন্য বাংলায় বুকলেটটি প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার ৷
বিশেষভাবে সক্ষম এবং প্রবীণ ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনা--
- ভোটারদের সুবিধার জন্য প্রথম তল বা গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ৷
- ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা বা এএমএফের ব্যবস্থা করা ৷ যেমন, হ্যান্ডরেইল-সহ ঢাল যুক্ত ব়্যাম্প ৷
- ভোটকেন্দ্রে হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা ৷
- ভোটের দিন পরিবহণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ৷
- ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য বিশেষ ভোট স্বেচ্ছাসেবক ৷
- প্রতীক চিহ্ন, ভোটগ্রহণ কক্ষে প্রবেশ করা পর্যন্ত সমান পথ নিশ্চিত করা ৷
- দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ব্রেইল সুবিধা-সহ ভোটারদের তথ্য সম্বলিত চিরকুট (জিআইএস ) বা এপিক ৷
- ব্রেইলের সুবিধা-সহ নকল ব্যালট পেপার (ডামি ব্যালট পেপার) ৷
- ব্রেইল সুবিধা যুক্ত ইভিএম ৷
- ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ম্যাগনিফাইন গ্লাস/কাগজ ৷
এর পাশাপাশি 2021 সাল থেকে করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে মাথায় রেখে এবসেন্টি ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ৷ তবে, প্রবীণদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটির কিছুটা রদবদল হয়েছে ৷ এবার থেকে 85 বছর এবং তার উর্ধ্বের প্রবীণ ভোটাররা বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারবেন ৷ এই সুবিধা শুধু প্রবীণ ভোটারদের জন্যই নয় বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ৷ তবে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের তরফে বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী, 40 শতাংশ দৃষ্টিশক্তিহীন ভোটারদের 12ডি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে ৷ সেই আবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় নির্বাচনী আধিকারিক সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বাড়িতে গিয়ে গোপনীয়তার সঙ্গে ভোটদান করাবেন ৷ সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকা বাধ্যতামূলক ৷
আরও পড়ুন: