বারাসত, 11 সেপ্টেম্বর: ন্যাশানাল, এসএসকেএম, এনআরএস। কলকাতার একের পর এক মেডিক্যাল কলেজে ঘুরেও মেলেনি বাইক দুর্ঘটনায় সঙ্কটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা। শেষমেশ বারাসতের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হলেও বাঁচানো যায়নি। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে দেগঙ্গার 38 বছরের যুবক সফিকুল ইসলামের।
আরজি কর-কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে যুবকের এই মর্মান্তিক পরিনতি বলেই দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের লোকজন। সরকারি হাসপাতালে এভাবে যদি দিনের পর দিন কর্মবিরতি চলতে থাকে, তাহলে গরিব মানুষেরা কোথায় যাবেন ? একজনের মৃত্যুর পরিবর্তে চিকিৎসা না পেয়ে তো হাজার হাজার মানুষ মারা যাবেন ? আন্দোলনরত ডাক্তারদের উদ্দেশে এমনই সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর সফিকুলের বাড়ি দেগঙ্গার সোহাই-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের গাংআটি গ্রামে। গত 1 সেপ্টেম্বর অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে হাবড়ার সোনাকেনিয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন সফিকুল। সেখান থেকে ভোরের দিকে বাইক চালিয়ে তিনি ফিরছিলেন দেগঙ্গার বাড়িতে।হাবড়া-বেঁড়াচাপা রোড ধরে ফেরার পথে কলাপোল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি ৷ রাস্তার ধারে রাখা ইটের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন সফিকুল। তাঁর মাথায় এবং শিরদাঁড়ায় আঘাত লাগে বলে জানা যায়। তার পরেই রক্তাক্ত অবস্থায় সফিকুলকে উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় 2 অগস্ট আহত সফিকুলকে রেফার করা হয় কলকাতার ন্যাশানাল মেডিক্যালে ৷ তারপর থেকে প্রায় আট ঘণ্টা চিকিৎসা পাওয়ার আশায় চক্কর কেটেছেন কলকাতার তিন নামি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।এমনটাই অভিযোগ পরিবারের ৷
অভিযোগ, কোথাও ভর্তি করাতে পারেননি রোগীকে। কোথাও শুনতে হয়েছে কর্মবিরতির জেরে ডাক্তার নেই। আবার কোথাও বেড না থাকার কথা।একের পর এক মেডিক্যাল কলেজে ঘুরেও রোগীর চিকিৎসা না মেলায় শেষ পর্যন্ত বারাসতের 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ওই বেসরকারি হাসপাতালে আহত সফিকুলকে ভর্তি করতে বাধ্য হন পরিবারের লোকজন। অস্ত্রোপচারের পর সেখানেই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা চলে যুবকের।যদিও, মঙ্গলবার রাতে ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় সফিকুলের। এরপরই ক্ষোভ উগরে দেন নিহতের পরিবার। তাঁদের আক্ষেপ, 'সঠিক সময়ে সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন বাইক দুর্ঘটনায় আহত ওই যুবক। তাহলে এভাবে তাঁকে মরতে হত না।'
মৃতের জামাইবাবু জাহাঙ্গীরর গাজি বলেন, "মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওযার পর অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওযার জন্য কোনও ট্রলি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক বলেন এখানে ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। ফলে, পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে অনেকবার আবেদন করেছিলাম ডাক্তারবাবুর কাছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এরপর এসএসকেএম এবং নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ থেকেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরতে হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আরজি করের ঘটনায় আমরাও দোষীদের বিচার চাই। কিন্তু একটা প্রাণের বিনিময়ে বহু গরীব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।আমাদের জাস্টিস কারা দেবেন ?"