ETV Bharat / state

রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের - Lok Sabha Election 2024

Vote Boycott in Kalimpong: রাস্তা না হলে ভোট নয় ৷ দার্জিলিং লোকসভায় ভোট 26 এপ্রিল ৷ তার দু'দিন আগে ভোট বয়কটের ডাক দিলেন কালিম্পং জেলার অন্তর্গত গেন্দং গ্রামের বাসিন্দারা ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 24, 2024, 11:00 PM IST

Vote Boycott in Gendong, Kalimpong
রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের
রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের

কালিম্পং, 24 এপ্রিল: কালিম্পং শহর থেকে প্রায় 35 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দং ৷ প্রায় শতাধিক বাড়ি রয়েছে এই গ্রামে, যার মধ্যে হাজারো লোকের বাস ৷ তাঁদের মধ্যে থেকে প্রায় 450 জনের ভোট দেওয়ার কথা এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৷ দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের এইসব ভোটারদের প্রধান দাবি রাস্তা ৷ সেই রাস্তা না হওয়ায় ভোট থেকে বিরত থাকতে চলেছেন এখানকার বাসিন্দারা ৷

গ্রামবাসী সোমবাহাদুর ছেত্রী বলেন, "বর্ষার সময় নদী পার করা যায় না ৷ গেন্দংবাসী খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছে ৷ এদিক-ওদিক যাওয়ার রাস্তা নেই ৷ অসুস্থ হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ৷ এই পাহাড়ি ঝোরোর উপর দিয়ে ছেলেমেয়েরা সিকিমে স্কুলে যায় ৷ বৃষ্টির সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে খুবই সমস্যা হয় ৷"

যেখানে উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে মাথা তোলার জো নেই সেখানে ব্যতিক্রমী এই গ্রাম ৷ বছরের পর বছর ধরে নেই রাস্তা ৷ শহর থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত তাই সরকারি পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত গ্রামবাসীরা ৷ রাস্তার না থাকার ফলে তাদের কাছে পৌছয় না বার্ধক্য ভাতা থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সরকারি প্রকল্লের সুবিধাগুলিও ৷

খাবার থেকে যে কোনও জিনিস গ্রামে আনার জন্য ভরসা বলতে বাঁশের সাঁকো ৷ এই সাঁকো পেরিয়েই নিত্যদিন ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে বয়স্কদের চিকিৎসা করাতে যেতে হয় ৷ নীচে বইছে পাহাড়ি ঝোরো, উপর রয়েছে বাঁশের সাঁকো ৷ ফলে বর্ষাকালে ঝোরোর জল বেড়ে বেহাল অবস্থা হয় গ্রামবাসীদের ৷ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাকি দুনিয়ার সঙ্গে গেন্দং গ্রামের ৷

গ্রামবাসী চন্দ্রকলা থাপার কথায়, "রাস্তা না থাকায় খুব সমস্যা পোহাতে হয় আমাদের ৷ তিন-চারমাসের রেশন একেবারে এনে মজুত করে রাখতে হয় বাড়িতে ৷ বৃষ্টির সময় ঝোরোর জল বেড়ে যাওয়ায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না ৷ বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ৷ কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পরে স্টেচারে করে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে নিয়ে যেতে হয় ৷ ঝোরোর জল বেড়ে গেলে বাড়িতেই রাখতে হয় ৷"

নবম শ্রেণির ছাত্রী মুসকান গুরুং বলে, "রাস্তা নেই, তাই হেঁটে স্কুলে যাই ৷ বৃষ্টির সময় সাঁকো পেরতে খুব সমস্যা হয় ৷ জামাকাপড়, বইখাতা সব ভিজে যায় ৷ পড়াশোনার ক্ষেত্রে আরও সমস্যা হয় ৷ আমাদের এখানে রাস্তার খুব দরকার ৷ রাস্তা হলে আমাদের খুব ভালো হবে ৷"

গ্রামবাসীদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন আসে যায় রাস্তার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় ৷ প্রতিটি নির্বাচনের আগে কেবল প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে হাজির হন রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসকরা ৷ সেই প্রতিশ্রুতিতে ভোট চলে গেলে আর কোনও কাজ হয় না ৷ এবার তাই গ্রামবাসীদের চায় লিখিত আশ্বাস ৷ নইলে তারা আর এবারে ভোট কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না ৷

গ্রামবাসী লক্ষ্মণ কাঁকি বলেন, "আমাদের রাস্তার দাবি বহুদিনের ৷ নেতারা ভোটের সময় আসেন আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ আমরা সাংসদ ও বিধায়ক সকলকে লিখিতভাবে জানিয়েছি ৷ কোনও কাজ হয়নি ৷ ভোট জেতালে রাস্তা হবে বলেছিল, এতবার ভোটে জেতালাম তারপরেও রাস্তা হল না ৷ এবারে তাই আমরা আর ভোট দেব না ৷ প্রয়োজনে পরের বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনও বয়কট করব ৷"

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, নির্মীয়মান জাতীয় সড়ক 717 থেকে মাত্র 2 কিমি দূরে অবস্থিত গেন্দং গ্রাম ৷ তবুও গেন্দংয়ের সঙ্গে কোনও সংযোগ রাস্তা নেই জাতীয় সড়কের । তাই এই ক্ষোভ থেকেই গ্রামের প্রথমবার ভোট দেবে এমন 10 জন-সহ বাকিরা 26 এপ্রিল আসন্ন নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তারা রাস্তা নয় তো ভোট নয়-এর স্লোগান তুলছেন ।

আরও পড়ুন:

  1. শুক্রবার বস্তারে ভোট বয়কট! 'কাদের জন্য নেতা তৈরি করা হবে ?' দেওয়ালে লিখল মাওবাদীরা
  2. প্রতিশ্রুতিই সার ! পুনর্বাসন না পেলে ভোট বয়কটের পথে গঙ্গা ভাঙনের দুর্গতরা
  3. জিটিএ নির্বাচনের পরও অনিত থাপার এলাকায় রাস্তা না হওয়ার অভিযোগ, ভোট বয়কটের ডাক

রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের

কালিম্পং, 24 এপ্রিল: কালিম্পং শহর থেকে প্রায় 35 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দং ৷ প্রায় শতাধিক বাড়ি রয়েছে এই গ্রামে, যার মধ্যে হাজারো লোকের বাস ৷ তাঁদের মধ্যে থেকে প্রায় 450 জনের ভোট দেওয়ার কথা এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৷ দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের এইসব ভোটারদের প্রধান দাবি রাস্তা ৷ সেই রাস্তা না হওয়ায় ভোট থেকে বিরত থাকতে চলেছেন এখানকার বাসিন্দারা ৷

গ্রামবাসী সোমবাহাদুর ছেত্রী বলেন, "বর্ষার সময় নদী পার করা যায় না ৷ গেন্দংবাসী খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছে ৷ এদিক-ওদিক যাওয়ার রাস্তা নেই ৷ অসুস্থ হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ৷ এই পাহাড়ি ঝোরোর উপর দিয়ে ছেলেমেয়েরা সিকিমে স্কুলে যায় ৷ বৃষ্টির সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে খুবই সমস্যা হয় ৷"

যেখানে উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে মাথা তোলার জো নেই সেখানে ব্যতিক্রমী এই গ্রাম ৷ বছরের পর বছর ধরে নেই রাস্তা ৷ শহর থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত তাই সরকারি পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত গ্রামবাসীরা ৷ রাস্তার না থাকার ফলে তাদের কাছে পৌছয় না বার্ধক্য ভাতা থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সরকারি প্রকল্লের সুবিধাগুলিও ৷

খাবার থেকে যে কোনও জিনিস গ্রামে আনার জন্য ভরসা বলতে বাঁশের সাঁকো ৷ এই সাঁকো পেরিয়েই নিত্যদিন ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে বয়স্কদের চিকিৎসা করাতে যেতে হয় ৷ নীচে বইছে পাহাড়ি ঝোরো, উপর রয়েছে বাঁশের সাঁকো ৷ ফলে বর্ষাকালে ঝোরোর জল বেড়ে বেহাল অবস্থা হয় গ্রামবাসীদের ৷ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাকি দুনিয়ার সঙ্গে গেন্দং গ্রামের ৷

গ্রামবাসী চন্দ্রকলা থাপার কথায়, "রাস্তা না থাকায় খুব সমস্যা পোহাতে হয় আমাদের ৷ তিন-চারমাসের রেশন একেবারে এনে মজুত করে রাখতে হয় বাড়িতে ৷ বৃষ্টির সময় ঝোরোর জল বেড়ে যাওয়ায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না ৷ বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ৷ কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পরে স্টেচারে করে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে নিয়ে যেতে হয় ৷ ঝোরোর জল বেড়ে গেলে বাড়িতেই রাখতে হয় ৷"

নবম শ্রেণির ছাত্রী মুসকান গুরুং বলে, "রাস্তা নেই, তাই হেঁটে স্কুলে যাই ৷ বৃষ্টির সময় সাঁকো পেরতে খুব সমস্যা হয় ৷ জামাকাপড়, বইখাতা সব ভিজে যায় ৷ পড়াশোনার ক্ষেত্রে আরও সমস্যা হয় ৷ আমাদের এখানে রাস্তার খুব দরকার ৷ রাস্তা হলে আমাদের খুব ভালো হবে ৷"

গ্রামবাসীদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন আসে যায় রাস্তার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় ৷ প্রতিটি নির্বাচনের আগে কেবল প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে হাজির হন রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসকরা ৷ সেই প্রতিশ্রুতিতে ভোট চলে গেলে আর কোনও কাজ হয় না ৷ এবার তাই গ্রামবাসীদের চায় লিখিত আশ্বাস ৷ নইলে তারা আর এবারে ভোট কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না ৷

গ্রামবাসী লক্ষ্মণ কাঁকি বলেন, "আমাদের রাস্তার দাবি বহুদিনের ৷ নেতারা ভোটের সময় আসেন আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ আমরা সাংসদ ও বিধায়ক সকলকে লিখিতভাবে জানিয়েছি ৷ কোনও কাজ হয়নি ৷ ভোট জেতালে রাস্তা হবে বলেছিল, এতবার ভোটে জেতালাম তারপরেও রাস্তা হল না ৷ এবারে তাই আমরা আর ভোট দেব না ৷ প্রয়োজনে পরের বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনও বয়কট করব ৷"

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, নির্মীয়মান জাতীয় সড়ক 717 থেকে মাত্র 2 কিমি দূরে অবস্থিত গেন্দং গ্রাম ৷ তবুও গেন্দংয়ের সঙ্গে কোনও সংযোগ রাস্তা নেই জাতীয় সড়কের । তাই এই ক্ষোভ থেকেই গ্রামের প্রথমবার ভোট দেবে এমন 10 জন-সহ বাকিরা 26 এপ্রিল আসন্ন নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তারা রাস্তা নয় তো ভোট নয়-এর স্লোগান তুলছেন ।

আরও পড়ুন:

  1. শুক্রবার বস্তারে ভোট বয়কট! 'কাদের জন্য নেতা তৈরি করা হবে ?' দেওয়ালে লিখল মাওবাদীরা
  2. প্রতিশ্রুতিই সার ! পুনর্বাসন না পেলে ভোট বয়কটের পথে গঙ্গা ভাঙনের দুর্গতরা
  3. জিটিএ নির্বাচনের পরও অনিত থাপার এলাকায় রাস্তা না হওয়ার অভিযোগ, ভোট বয়কটের ডাক
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.