কলকাতা, 14 এপ্রিল: মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখ ৷ বাংলা নববর্ষের প্রথমদিনটি সন্তান ও পরিবারকে ছেড়ে থাকতে হবে এসএসসি-র ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশকে ৷ কারণ, শিক্ষক হিসেবে নিজেদের সম্মান ফিরে পেতে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন তাঁরা ৷ সোমবার ধর্মতলা থেকে বাসে দিল্লি রওনা দিয়েছেন 65 জনের একটি দল ৷ আগামী 16 এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে ন্যায় বিচারের দাবিতে তাঁরা ধরনায় বসবেন ৷
শুধু কলকাতা বা জেলায় নয় ৷ এসএসসি-র ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা নিজেদের ন্যায়ের দাবিতে আন্দোলনকে জাতীয় রাজধানী পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে চাইছেন ৷ সেই উদ্দেশ্যে নিজেদের আন্দোলনকে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছেন ৷ 16 এপ্রিল যন্তর মন্তরে 65 জন ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক অবস্থান বিক্ষোভে বসবেন ৷ বাসের পাশাপাশি ট্রেনেও বেশ কয়েকজন দিল্লি পৌঁছাবেন ৷
দিল্লি রওনা দেওয়ার আগে ‘যোগ্য’দের আন্দোলনের অন্যতম মুখ শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, "আমাদের সবার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে ৷ রাজ্য সরকার অন্যায় করেছে ৷ তারপর কোর্টের কাছে সহানুভূতির সঙ্গে দেখার জায়গা ছিল ৷ জানি না কেন সেটা হল না ৷ গোটা ভারতবর্ষের কাছে আমাদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, সেই কথা ছড়িয়ে দিতে চাই ৷ আমাদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তার থেকে যাতে আমরা ন্যায়ের রাস্তা পাই, সেজন্যই দিল্লি যাওয়া ৷ আপাতত আমরা একদিনের জন্য দিল্লির কর্মসূচি রেখেছি ৷ কিন্তু আগামিদিনে আমরা আবারও দিল্লি যাব ৷"
তবে, শুধু দিল্লিতে নয় ৷ পথে যে-যে জায়গায় হল্ট করবেন চাকরিহারা শিক্ষকরা, সেখানে লিফলেট বিলি করবেন তাঁরা ৷ তাঁদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ এর জন্য হিন্দি ও ইংরাজি ভাষায় লিফলেট ও পোস্টার ছাপানো হয়েছে ৷
কসবা ডিআই অফিসে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছিলেন শিক্ষিকা শিল্পা বসু ৷ হাতে পুলিশের লাঠির কালসিটে দাগ নিয়ে দিল্লি রওনা দিয়েছেন তিনি ৷ নববর্ষে সন্তানকে ছেড়ে অধিকারের দাবিতে রাস্তায় থাকবেন ৷ একথা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে তাঁর ৷ তিনি বলেন, "কোনোদিন ভাবিনি এমনটা হতে পারে ৷ স্কুল, স্টুডেন্টদের ছেড়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে ভাবিনি ৷ যেদিন রায় বেরলো, সেদিনও স্কুলে গিয়েছিলাম ৷ খুবই আশাবাদী ছিলাম ৷ কিন্তু, আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে ৷ আগামিকাল নববর্ষ ৷ আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে ৷ তাঁকে ছেড়ে বাড়ির বাইরে থাকতে হবে এটা কখনও ভাবিনি ৷"
আরেক চাকরিহারা শিক্ষিকা বললেন, "আমার স্বপ্ন ছিল স্কুল টিচার হওয়ার ৷ ছোটবেলা থেকে জানতাম সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিন্তের চাকরি ৷ একবার পেয়ে গেলে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করা যায় ৷ সেই জন্য শিক্ষকতা বেছে নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু, 2016-র এসএলএসটি-র অন্তর্গত হওয়ায় আমাদের উপর যেভাবে বিপর্যয় নেমে এল সেটা ভাবতে পারিনি ৷ এখন আমরা আমাদের দাবির জন্য আন্দোলন করছি, দিল্লিমুখী হচ্ছি ৷ জানি না কতটা সফল হব ৷ তবে, আশা ছাড়ছি না ৷"