পানিহাটি, 24 মার্চ: যত কাণ্ড পানিহাটিতে। চেয়ারম্যান বদলের পরই পুরসভার শাসকদলের একের পর এক কাউন্সিলর 'হুমকি' ফোন পেতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ। প্রথমে পানিহাটি পুরসভার 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র সম্রাট চক্রবর্তীর মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে আসে 'হুমকি' ফোন। সেখানে সরাসরি তাঁকে প্রাণনাশের 'হুমকি' দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শাসকদলের আরও দুই কাউন্সিলর 'হুমকি' ফোন পেলেন। একজন 16 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তাপস দে। অন্যজন, পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষ চক্রবর্তী। পরপর খুনের 'হুমকি' ফোন ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে পানিহাটি পুর এলাকায়।ইতিমধ্যে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন দুই তৃণমূল নেতা। অভিযোগও দায়ের হয়েছে খড়দা থানায়। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, 2022-এর পুর নির্বাচনে 16 নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তাপস দে। সেবারই প্রথম পুর পারিষদ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাপস বাবু। তাঁর মোবাইলেই রবিবার সন্ধ্যায় অচেনা একটি নম্বর থেকে পরপর দু'বার হুমকি ফোন আসে বলে জানা যায়। হুমকি ফোনে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়, সোমবার বেলা 12টার মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা না করলে 'লাশ' ফেলে দেওয়া হবে তাঁর। এমন 'হুমকি' ফোন পেয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তৃণমূল কাউন্সিলর। রাতেই যান খড়দা থানায়। অভিযোগও দায়ের করেন । সেদিনই সন্ধ্যায় আবার 'হুমকি' ফোন পান পানিহাটি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষ চক্রবর্তী।
তাঁকেও একইভাবে খুনের 'হুমকি' দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হুমকি ফোন পেয়ে তাপসবাবুর মতো তিনিও দ্বারস্থ হন পুলিশের। দায়ের করেন অভিযোগও। দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে খড়দা থানার পুলিশ। এই বিষয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, "ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অচেনা ওই ফোন কলটি কোথা থেকে এসেছিল তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে তথ্য পেতে প্রযুক্তিগত সংস্থার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।"
এদিকে, খুনের 'হুমকি' ফোন পেয়েও এতটুকু বিচলিত নন পানিহাটি পুরসভার 16 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তাপস দে। বরং তিনি পুলিশের উপরই ভরসা রাখছেন। এই বিষয়ে ওই তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, "রবিবার সকালের দিকে প্রথমে পাঁচ বার অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে। যেহেতু নম্বরটি অপরিচিত তাই তখন ফোনটি ধরিনি। এরপর সন্ধ্যার দিকে আবারও পরপর দু'বার ফোন আসে। তখন ফোনটি ধরতে বাধ্য হই। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ভারী গলায় একজন বলেন, সোমবার বেলা 12টার সময় একটি ধাবার সামনে চলে আসবি। নইলে তোর লাশ পড়ে যাবে। সরাসরি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন ওই অপরিচিত ব্যাক্তি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যেটা, সম্রাট চক্রবর্তীকে যে নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল সেই নম্বর থেকেই হুমকি দেওয়া হয়েছে আমাকে।"
প্রসঙ্গত, পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান বদল ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল তৃণমূলের অন্দরে। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় মলয় রায়কে। অমরাবতী মাঠে বিতর্কের জেরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে কানাঘুষো শুরু হয় পানিহাটিজুড়ে। যদিও, মাঠ বিক্রি কিংবা সেখানে আবাসন প্রকল্প নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত পুরসভা নেয়নি বলে দাবি করেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান। উল্টে, তাঁর পদত্যাগের পিছনে দলেরই একাংশের চক্রান্ত ছিল বলে মনে করেন মলয় রায়। এসবের মধ্যেই পানিহাটি পুরসভার তৃণমূলের একের পর এক কাউন্সিলরের কাছে 'হুমকি' আসায় যথারীতি শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুর এলাকায়।