খড়দা, 8 এপ্রিল: বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিবেশীর কাছে জিনিস আনতে যাচ্ছিলেন বিধবা মহিলা । সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিচিত আরেক মহিলা । তাঁকে মারধর করে রাতের অন্ধকারে ওই বিধবা মহিলাকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল চার দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে । ঘটনার জেরে মঙ্গলবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে খড়দায় ৷ রহড়া থানায় গণধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা মহিলা । তারপর থেকেই মামলা তুলে নিতে ওই নির্যাতিতাকে প্রাণনাশের 'হুমকি' দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । ফলে, দুই মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে মহিলার । পুলিশ দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করলেও বাকি দু'জন এখনও অধরা । তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে ।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দ্রবদন ঝাঁ বলেন,"ইতিমধ্যে নির্যাতিতা মহিলার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে ।নেওয়া হয়েছে তাঁর গোপন জবানবন্দিও । বাকি দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে । আশা করা যায়, দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে ।"
জানা গিয়েছে, ওই মহিলার স্বামী মারা গিয়েছে কয়েক বছর আগে । পরিবার বলতে তার দুই মেয়ে । তাদের নিয়েই থাকেন । পরিচারিকার কাজ করে কোনওরকমে সংসার চলে ৷ সোমবার রাতে পরিচিত এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে যাচ্ছিলেন জিনিস আনতে । সেই সময় চার দুষ্কৃতী পথ আটকায় ওই মহিলার । সঙ্গে থাকা মহিলাকে মারধর করে তাঁকে দুষ্কৃতীরা জোর করে পাশের একটি জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ । এর পরেই চারজন মিলে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করে ।
আরও অভিযোগ, গণধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে 'হুমকি' দিয়ে বলা হয় কাউকে কিছু বললে তার ফল মারাত্মক হবে । এরপর, কোনওক্রমে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে গোটা ঘটনাটি এলাকার লোকজনকে জানান মহিলা । তাঁদের পরামর্শে রাতেই রহড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি ।অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে এলাকা থেকেই হাতেনাতে ধরা হয় শেখ জাভেদ এবং মহম্মদ সোনা ওরফে ছোটুকে । আলামিন ও আকবর নামে বাকি দুই দুষ্কৃতী এখনও অধরা । অভিযোগ, ওই দু'জন গ্রেফতার না হওয়ায় নির্যাতিতা মহিলাকে ক্রমাগত প্রাণনাশের 'হুমকি' দিচ্ছেন মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য । এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে নির্যাতিতার পরিবারের ।
এদিকে, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকার লোকজন । ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চারও হয়েছেন তাঁরা । স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি কঠোর শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হোক পুলিশ প্রশাসনের তরফে ।
এই বিষয়ে নির্যাতিতা মহিলা বলেন,"দু'জন গ্রেফতার হলেও এখনও অধরা বাকি দুই দুষ্কৃতী । সেই দু'জন বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য । এর ফলে দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই দুষ্কৃতীরা সকলেই তৃণমূলের মদতপুষ্ট । অসামাজিক কার্যকলাপ করে বেড়ানোই এদের কাজ । আমি চাই, এদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক । যাতে আর কোনও মহিলার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে ।"
ঘটনাটির নিন্দা করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সফিয়ার রহমানও । তাঁর কথায়,"দুষ্কৃতী দুষ্কৃতীই হয় । এদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় হয় না । যে-ই করে থাকুক, তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয় । সেটা আমরাও পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি । এই সমাজে দুষ্কৃতীদের কোনও স্থান নেই ।"