কুলটি, 21 জুন: পরপর দু'বছর জাতীয় তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ এবং রুপো জয় করেছিল কুলটির সাঁকতোড়িয়ার তিন বিস্ময় বালিকা ৷ তাঁরা যমজ তিন বোন (Triplett) ৷ কিন্তু, সোনা জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও অনেক বেশি অনুশীলন ৷ আর তার জন্য সরঞ্জাম, ডায়েট-সহ আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন ছিল ৷ প্রয়োজন ছিল অনেক টাকার ৷ কিন্তু, কোনও জায়গা থেকেই সেভাবে সহায়তা পাযননি কুলটির তিনকন্যের বাবা, গৃহ শিক্ষক বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ৷
তবে, তিনকন্যার ঠাকুরদা নির্মলকুমার চট্টোপাধ্যায় নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন নাতনিদের খেলার সরঞ্জাম কিনতে ৷ দাদুর সেই ত্যাগের মান রাখল তারা ৷ আসানসোলের কুলটির সাঁকতোড়িয়ার তিন বোন সুচেতা, সুপ্রিতা এবং রঞ্জিতা জাতীয় স্তরের তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় মোট 7টি সোনা, দুটি রূপো এও একটি ব্রোঞ্জ জিতেছে ৷
কুলটির সাঁকতোড়িয়ার তিন বোন সুচেতা, সুপ্রিতা ও রঞ্জিতা ৷ যমজ তিন বোনের কাহিনী অনেকটা মহাবীর ফোগতের দুই যমজ মেয়ের গল্প ৷ তিনজনের বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় একজন গৃহশিক্ষক ৷ মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় স্বামীর পড়ানোর কাজে সহায়তা করেন ৷ তেরো বছর বয়সি এই তিনকন্যে একটি সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে ৷ কিন্তু ছোট থেকেই তাঁরা তাইকোন্ডোতে পারদর্শী ৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে প্রতিযোগিতায় সোনা জয় করেছে ৷ জাতীয় স্তরেও রূপো ও ব্রোঞ্জ জয় করে ফিরেছিল ৷ লক্ষ্য ছিল জাতীয় স্তরে সোনা জেতা ৷
কিন্তু, তার জন্য প্রচুর অনুশীলন দরকার ৷ আর তার জন্য ম্যাট, কস্টিউম, নানান ডায়েট, হেলথ ড্রিংক, প্রোটিন পাউডার বিস্তর খরচ ৷ এত খরচ সামলাতে পেরে উঠেছিলেন না গৃহশিক্ষক বামাপ্রসাদবাবু ৷ আর তখন নাতনিদের স্বপ্ন সত্যি করতে পৈতৃক সম্পত্তি বেঁচে দিতেও পিছু-পা হননি নির্মলকুমার চট্টোপাধ্যায় ৷ ঠাকুরদার সেই ত্যাগের মান রেখেছে তারা ৷ চলতি মাসেই মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নীতে আয়োজিত হয়েছিল জাতীয় ওপেন তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতা । এই প্রতিযোগিতায় পুমসে ও কায়রোগি গার্লস সিঙ্গলস, ডাবল ও গ্রুপ ইভেন্টে 7টি সোনা, 2টি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ জিতেছে আসানসোলের কুলটির সাঁকতোড়িয়ার তিনকন্যে সুচেতা, রঞ্জিতা এবং সুপ্রীতা । শুধু তাই নয়, রঞ্জিতা চারটি বিভাগে লড়াই করে 4টি সোনা জিতেছে ৷
গত মঙ্গলবার প্রতিযোগিতা জিতে আসানসোলে ফিরেছে তারা ৷ এসেই পুরোদমে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে তিনবোন ৷ তিনকন্যের মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় জানালেন, জিতেছে ভালো, কিন্তু আগামী দিনের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জয় ৷ যদিও, বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া হয়েছে ৷ একবার দাদু সম্পত্তি বেচে পাশে থেকেছেন ৷ আগামীতে কী হবে ? তা ভেবেই ঘুম ছুটেছে চট্টোপাধ্যায় দম্পত্তি ৷