তিস্তার তাণ্ডবে জারি লাল সতর্কতা, বাংলা-সিকিম জাতীয় সড়কে ধস
লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে উত্তরবঙ্গে, যার জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোপে বাংলা থেকে সিকিম ৷ ইতিমধ্যেই তিস্তা নদীতে লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর ৷

Published : July 29, 2025 at 1:45 PM IST
|Updated : July 29, 2025 at 1:56 PM IST
জলপাইগুড়ি, 29 জুলাই: একে বর্ষা সঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত ৷ দুইয়ের জেরে বঙ্গের পাহাড় থেকে সমতল অতিবৃষ্টির প্রকোপে ৷ পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরে তিস্তা নদীর জল ফুঁসছে ৷ তাই লাল সতর্কতা জারি করল সেচ দফতর। শিলিগুড়ি থেকে সিকিমগামী 10 নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়েও তিস্তা নদীর জল বইছে। ময়নাগুড়ি দোমহনী থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেচ দফতরের তরফে।
টানা বৃষ্টির জেরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলা-সিকিম লাইফ লাইন 10 নম্বর জাতীয় সড়ক। যার ফলে সমস্যায় নিত্যযাত্রী থেকে পর্যটকরা। মেল্লি ও তিস্তা বাজারে মাইকিং করা হচ্ছে। এলাকায় নজর রাখছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। নদীর জল জাতীয় সড়কের ওপর চলে আসায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিস্তা নদীতে জল বাড়ার কারণে গাজোলডোবা ব্যারেজ থেকে দফায় দফায় জল ছাড়া হচ্ছে । মালবাজারের টট গাও, টাকিমারি, চাপাডাঙা এলাকায় তিস্তার জল ঢুকে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ।
জিটিএ'র চেয়ারম্যান রাজেশ চৌহান বলেন, "টানা বৃষ্টির জেরে পাহাড়ে একাধিক জায়গায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। কিছু মানুষকে সরকারি ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।"
কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালা শুভ্র মনিয়ম টি জানান, কালিম্পং জেলার মল্লি ও তিস্তা বাজার এলাকা থেকে ধস ও তিস্তার জল বাড়ার কারণে 70 জনকে অনত্রে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিস্তার জল রাস্তায় চলে আসার কারণে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রয়েছে । আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোপে বাংলা থেকে সিকিম
- 10 নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় সিকিম এবং কালিম্পং, দার্জিলিং জেলার কিছু অংশে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে
- কালিম্পংয়ের তারখোলা এলাকায় ভূমিধসের ঘটনাও সামনে এসেছে ৷ এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের সেবক এবং সিকিমের রংপোর মধ্যে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রবিবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে এই অবস্থা ৷
- অবরুদ্ধ রাস্তা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে। তিস্তার জলস্তর কমে না-আসা পর্যন্ত 10 নম্বর জাতীয় সড়ক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷
- সিংটাম, রংপো, বারদাংয়েও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে ৷ এর ফলে রাস্তাগুলিতে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েচে ৷ ভূমিধসের ফলে বড় বড় গাছ রাস্তায় উপড়ে পড়েছে ৷ রাস্তায় পার্ক করে রাখা গাড়িগুলি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ৷
স্থানীয়দের বক্তব্য
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিবেকানন্দ পল্লীর পঞ্চায়েত সদস্যা জয়া সরকার বলেন, "রাত থেকেই আমাদের এলার্ট করা হয়েছে ৷ গতকাল তিস্তা নদীতে হলুদ সতর্কতা ছিল ৷ আজ লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। সেচ দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিস্তা সংলগ্ন এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বলা হয়েছে। অনেকেই তিস্তা নদীর বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।"
গ্যাংটক, মঙ্গন, নামচি এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ
জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে গ্যাংটক, মঙ্গন, নামচি এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে।
- গ্যাংটকে বৃষ্টিপাত হয়েছে 123.4 মিলিমিটার
- মঙ্গনে 116.2 মিলিমিটার
- লাভাতে 71.0 মিলিমিটার
- দামথাং 108.0 মিলিমিটার
- মুনসুঙ্গ এলাকায় 65.0 মিলিমিটার
- গাজোলডোবায় বৃষ্টিপাত 01.78 মিলিমিটার
- শিলিগুড়িতে 23.0 মিলিমিটার
- জলপাইগুড়িতে 27.60 মিলিমিটার
- ময়নাগুড়িতে 14.0 মিলিমিটার
- আলিপুরদুয়ারে 06.20 মিলিমিটার
- কোচবিহারে 12.0 মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে
- ডুয়ার্সের মালবাজার, বানারহাট, নাগরাকাটা, হাসিমারাতে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি।
আজ থেকে আগামী 5দিন কেমন থাকবে উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া ?

- আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলায় ।
- বুধবার বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়।
- বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে উত্তরবঙ্গে । ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ।
- শুক্রবার আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস ।
- শনিবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়বে । অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় । পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কোচবিহারে রয়েছে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা ।

