ETV Bharat / state

পড়ুয়ার চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি, ভিন্ন ছবি সোদপুরের দুই সরকারি স্কুলে - SODEPUR SCHOOLS

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বেশি হওয়ায় পঠন-পাঠনের চেয়ে স্কুলগুলিতে আড্ডাই বেশি হয় ৷ যেখানে শিক্ষক নেই সেখানে তাঁদের বদলি করা হোক ৷

sodepur schools
সোদপুরের দুই সরকারি স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 16, 2025 at 2:33 PM IST

4 Min Read

পানিহাটি, 16 এপ্রিল: পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ৷ ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল উত্তর 24 পরগনার সোদপুরের দুই সরকারি স্কুলে । পঠন-পাঠন না হওয়ায় অন‍্যান‍্য স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি মেটানোর দাবিতে সরব এলাকাবাসী ।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি বাতিল হয়েছে রাজ্যে প্রায় 26 হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর । এর ফলে শিক্ষকের ঘাটতি দেখা গিয়েছে রাজ‍্যের বহু সরকারি স্কুলেই । এতে সমস্যায় পড়েছেন পড়ুয়ারা ৷ শিক্ষকের অভাবে পঠন-পাঠন কীভাবে চলবে । নির্দিষ্ট সময়ে আদৌও সিলেবাস শেষ হবে কি না, তা নিয়ে যখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষকরা, তখন অন্যরকম ছবি ধরা পড়ল সোদপুরের ওই দু'টি সরকারি স্কুলে ।

sodepur schools
পড়ুয়া না থাকায় ক্লাস করাতে হচ্ছে না শিক্ষকদের (নিজস্ব ছবি)

পড়ুয়া'র তুলনায় ওই দু'টি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় পঠন-পাঠনের চেয়ে সেখানে আড্ডাই বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ । তাই, অন‍্যান‍্য স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে সরকারি এই দু'টি স্কুল থেকে শিক্ষক বদলির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা । তাঁদের একটাই প্রশ্ন, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা নগণ্য সেখানে এতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রেখে দিয়ে কী লাভ হচ্ছে? সরকারি টাকা অপচয় না করে বরং যেসব স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি রয়েছে, সেখানে কেন তাঁদের পাঠানো হচ্ছে না? বদলি করা হলে তো সেই সব স্কুলের পড়ুয়ারাই উপকৃত হবেন?

sodepur schools
সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজে পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচ (নিজস্ব ছবি)

বাসিন্দারা যখন এই প্রশ্ন তুলছেন, তখন কিন্তু দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকই মুখে কুলুপ এঁটেছেন । সোদপুরের এইচবি টাউনের পাশেই রয়েছে সরকারি এই দুটি স্কুল । পাশাপাশি অবস্থিত ঘোলা ভুবনেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় এবং সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজ । এর মধ্যে ভুবনেশ্বরী স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে দাঁড়িয়েছে ৷ অথচ, স্কুলে শিক্ষিকার অভাব নেই । নয় নয় করে 19 জন । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যেখানে পড়ুয়াই নেই সেখানে শিক্ষিকারা কাদের পড়ান?

sodepur schools
ঘোলা ভুবনেশ্বরী স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্য (নিজস্ব ছবি)

যদিও এ নিয়ে শিক্ষিকাদের কেউই মুখ খুলতে চাননি । স্থানীয়দের দাবি, প্রায় সব শিক্ষিকাই প্রতিদিন স্কুলে আসেন । হাজিরা খাতায় সই করেন । এরপর টিচার্স রুমে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে, মোবাইল ঘেঁটে স্কুল টাইম শেষে যে যার মতন রওনা দেন বাড়িতে ।

একই অবস্থা সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তনেও । সেখানেও পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে পাঁচ জনে এসে ঠেকেছে । অথচ, এখানে শিক্ষক রয়েছেন 11 জন ৷ হাতে গোনা যে ক'জন ছাত্র রয়েছে তাঁরাও ঠিকমতো স্কুলে আসে না । তবে স্কুলে রোজই আসছেন শিক্ষকরা । হাজিরা খাতায় সই করে নির্দিষ্ট সময় স্কুলের টিচার্স রুমে থাকার পর আবার যে যার মতো বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন । পড়ুয়ার অভাবে কোনও ক্লাসই তাঁদের করাতে হচ্ছে না বলে অভিযোগ ।

তবে সেই অভিযোগ যে ফেলে দেওয়ার মতো নয়, তা কিন্তু দেখা গেল স্কুলে গিয়েই । সেখানে খোশ মেজাজে নিজেদের মধ্যে গল্পে মত্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী না আসার সুযোগে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত এলাকার কচিকাঁচারা । স্থানীয়দের অভিযোগ, এটাই প্রতিদিনের চিত্র । দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে দু'টি সরকারি স্কুল । অথচ প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই ।

অবিলম্বে প্রশাসনের বিষয়টির উপর নজর দিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসীরা । যদিও এই বিষয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক অমিত বিশ্বাস । শুধু তিনি বলেছেন, "আলাদা করে এ নিয়ে কিছু বলার নেই । এটা সকলেই জানে ।"

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ থাকলেও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ডিআই অফিসে রিপোর্ট পাঠানো হয় বলে জানা গিয়েছে দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে । পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, "বিষয়টি জানা নেই । খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে । তবে এরকম হয়ে থাকলে সরকারের টাকা তো অপচয় তো হচ্ছেই । এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।"

অন‍্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ বারিক বলেন, "বিষয়টি শুনেছি । যাতে শিক্ষা দফতরের নজরে আনা যায়, তা দেখা হবে ।"

পানিহাটি, 16 এপ্রিল: পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ৷ ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল উত্তর 24 পরগনার সোদপুরের দুই সরকারি স্কুলে । পঠন-পাঠন না হওয়ায় অন‍্যান‍্য স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি মেটানোর দাবিতে সরব এলাকাবাসী ।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি বাতিল হয়েছে রাজ্যে প্রায় 26 হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর । এর ফলে শিক্ষকের ঘাটতি দেখা গিয়েছে রাজ‍্যের বহু সরকারি স্কুলেই । এতে সমস্যায় পড়েছেন পড়ুয়ারা ৷ শিক্ষকের অভাবে পঠন-পাঠন কীভাবে চলবে । নির্দিষ্ট সময়ে আদৌও সিলেবাস শেষ হবে কি না, তা নিয়ে যখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষকরা, তখন অন্যরকম ছবি ধরা পড়ল সোদপুরের ওই দু'টি সরকারি স্কুলে ।

sodepur schools
পড়ুয়া না থাকায় ক্লাস করাতে হচ্ছে না শিক্ষকদের (নিজস্ব ছবি)

পড়ুয়া'র তুলনায় ওই দু'টি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় পঠন-পাঠনের চেয়ে সেখানে আড্ডাই বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ । তাই, অন‍্যান‍্য স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে সরকারি এই দু'টি স্কুল থেকে শিক্ষক বদলির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা । তাঁদের একটাই প্রশ্ন, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা নগণ্য সেখানে এতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রেখে দিয়ে কী লাভ হচ্ছে? সরকারি টাকা অপচয় না করে বরং যেসব স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি রয়েছে, সেখানে কেন তাঁদের পাঠানো হচ্ছে না? বদলি করা হলে তো সেই সব স্কুলের পড়ুয়ারাই উপকৃত হবেন?

sodepur schools
সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজে পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচ (নিজস্ব ছবি)

বাসিন্দারা যখন এই প্রশ্ন তুলছেন, তখন কিন্তু দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকই মুখে কুলুপ এঁটেছেন । সোদপুরের এইচবি টাউনের পাশেই রয়েছে সরকারি এই দুটি স্কুল । পাশাপাশি অবস্থিত ঘোলা ভুবনেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় এবং সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজ । এর মধ্যে ভুবনেশ্বরী স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে দাঁড়িয়েছে ৷ অথচ, স্কুলে শিক্ষিকার অভাব নেই । নয় নয় করে 19 জন । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যেখানে পড়ুয়াই নেই সেখানে শিক্ষিকারা কাদের পড়ান?

sodepur schools
ঘোলা ভুবনেশ্বরী স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্য (নিজস্ব ছবি)

যদিও এ নিয়ে শিক্ষিকাদের কেউই মুখ খুলতে চাননি । স্থানীয়দের দাবি, প্রায় সব শিক্ষিকাই প্রতিদিন স্কুলে আসেন । হাজিরা খাতায় সই করেন । এরপর টিচার্স রুমে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে, মোবাইল ঘেঁটে স্কুল টাইম শেষে যে যার মতন রওনা দেন বাড়িতে ।

একই অবস্থা সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তনেও । সেখানেও পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে পাঁচ জনে এসে ঠেকেছে । অথচ, এখানে শিক্ষক রয়েছেন 11 জন ৷ হাতে গোনা যে ক'জন ছাত্র রয়েছে তাঁরাও ঠিকমতো স্কুলে আসে না । তবে স্কুলে রোজই আসছেন শিক্ষকরা । হাজিরা খাতায় সই করে নির্দিষ্ট সময় স্কুলের টিচার্স রুমে থাকার পর আবার যে যার মতো বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন । পড়ুয়ার অভাবে কোনও ক্লাসই তাঁদের করাতে হচ্ছে না বলে অভিযোগ ।

তবে সেই অভিযোগ যে ফেলে দেওয়ার মতো নয়, তা কিন্তু দেখা গেল স্কুলে গিয়েই । সেখানে খোশ মেজাজে নিজেদের মধ্যে গল্পে মত্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী না আসার সুযোগে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত এলাকার কচিকাঁচারা । স্থানীয়দের অভিযোগ, এটাই প্রতিদিনের চিত্র । দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে দু'টি সরকারি স্কুল । অথচ প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই ।

অবিলম্বে প্রশাসনের বিষয়টির উপর নজর দিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসীরা । যদিও এই বিষয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক অমিত বিশ্বাস । শুধু তিনি বলেছেন, "আলাদা করে এ নিয়ে কিছু বলার নেই । এটা সকলেই জানে ।"

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ থাকলেও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ডিআই অফিসে রিপোর্ট পাঠানো হয় বলে জানা গিয়েছে দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে । পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, "বিষয়টি জানা নেই । খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে । তবে এরকম হয়ে থাকলে সরকারের টাকা তো অপচয় তো হচ্ছেই । এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।"

অন‍্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ বারিক বলেন, "বিষয়টি শুনেছি । যাতে শিক্ষা দফতরের নজরে আনা যায়, তা দেখা হবে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.