কলকাতা, 17 মে: মিটিং আর আন্দোলন একসঙ্গে হতে পারে না । আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে শুক্রবার এমনটাই বললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । এদিন সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি ।
তিরঙ্গা যাত্রা শেষ করে এদিন সোজা সল্টলেকে চাকরিহারাদের ধিক্কার মঞ্চে যান তিনি । সঙ্গে ছিলেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ, বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচী-সহ আরও অনেকে । তিনি এবং তাঁর দল যে বঞ্চিত এবং চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অ-শিক্ষক কর্মীদের পাশে রয়েছেন সেই আশ্বাস দেন ।
চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য :
ধিক্কার সভা মঞ্চ থেকে তিনি বলেন যে, বৃহস্পতিবার যে বর্বরোচিত, অমানবিক, পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিবাদ করতেই এসেছি ৷ সকালে শাসক দলের গুন্ডাদের দ্বারা এবং সন্ধ্যাবেলায় শাসকদলের রেজিস্টার্ড গুণ্ডা অর্থাৎ পুলিশের দ্বারা যেভাবে আন্দোলনকারীদের রক্তাক্ত করা হয় সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে এসেছি ৷ বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, রাজনৈতিক পতাকা এবং কোনওরকম ভাষণ ছাড়াই সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এই আন্দোলনের পাশে থাকবে । তাই আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এখানে এসেছি । আমি এখানে বক্তব্য রাখার জন্য আসিনি । আপনাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য এসেছি ।"
তিনি এদিন আরও বলেন, "বর্তমান যে সমস্যা চলছে এবং যে জটিলতার স্মৃতি হয়েছে তার জন্য নবান্ন দায়ী । সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা বাছাই করার রাজ্য সরকারকে একাধিকবার সুযোগ দিয়েছে । কিন্তু সেটা হয়নি ।" পাশাপাশি তিনি আন্দোলনকারীদের নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার উপদেশ দেন এবং গণ-আন্দোলন সংঘটিত করার কথাও বলেন ।
এছাড়াও তাঁর বক্তব্য, "আমরা যদি দেখি আপনাদের দাবি যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত তাহলে আমরা ভোট চাই ভোট দাও না বলে আপনাদের দাবি নিয়ে সরব হব । একথা ঠিক যে এই তালিকায় অনেক অযোগ্যরাও আছে ৷ কিন্তু যারা যোগ্য তারাও বঞ্চিত হয়ে গেল । আপনাদের দাবিদাওয়া না মানা হলে রাজ্য বিধানসভা অচল করার দায়িত্ব আমার । আমরা আপনাদের জন্য রাজ্য বিধানসভা অচল করব । বিজেপি এই মঞ্চে বারে বারে ফিরে আসবে এবং এদের সঙ্গে রাত্রিযাপনও করবে ৷"
তবে চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু আরও বলেন, "আপনারা কেউ কেউ মিটিংও করবেন আবার আন্দোলনও করবেন, এই দুটো জিনিস একসঙ্গে হতে পারে না । আমি বেশি কিছু বলছি না । আমি এখানে কোনও বিতর্ক বাড়াতে চাই না । ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কফি-চা-ফিসফ্রাই খাওয়াটাও যেমন ঠিক নয়, তেমন তারপর সরকারের বিরুদ্ধে বলাটাও ঠিক নয় ।"
ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী :
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপ্রিম নির্দেশ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিএ-কে সরকারি কর্মচারীদের অধিকার বলে মনে করতেন না ৷ কিন্তু আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে যে সেটা মানুষের ন্যায্য অধিকার ৷ যদিও সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় এখনও বেরোয়নি, তবুও ডিএ আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারী পরিষদ-এর যে দীর্ঘদিনের লড়াই চলছে সেটা একটা বড় জয় পেল । সরকার জানত যে তারা এই মামলায় হারবে । এটা জানত বলেই কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন ৷ এই টাকাগুলো থাকলে মানুষের অনেক উপকারে লাগতে পারত । তাই সুপ্রিম কোর্ট আজ মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি পথে শিক্ষা দিয়েছে । সুপ্রিম কোর্ট আজ বলেছে যে, 'ঘেউ ঘেউ' মতো যেসব কথা মুখ্যমন্ত্রী ব্যবহার করেছেন সেগুলি আদালত সমর্থন করেন না । এগুলো বেআইনি কথা ।"