ETV Bharat / state

চরমে সংঘাত ! শান্তনু সেনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরাতে চিঠি সুদীপ্ত রায়ের - SANTANU SEN

শান্তনু সেনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরানোর প্রস্তাব দিলেন সভাপতি সুদীপ্ত রায় ৷ অন্যদিকে তাঁর কাছে রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীকে অপসারণের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যভবন ৷

Santanu Sen
শান্তনু সেনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরানোর সুপারিশ সুদীপ্ত রায়ের (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 20, 2024, 1:47 PM IST

Updated : Nov 20, 2024, 3:09 PM IST

কলকাতা, 20 নভেম্বর: ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ ৷ শান্তনু সেনকে সরানোর সুপারিশ করলেন স্বয়ং মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায় ৷ অন্যদিকে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীকে অপসারণের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য ভবন ৷ এই মর্মে কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে । মানস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ।

ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলে সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন চিকিৎসক তথা প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন । তিনি ছাড়াও কাউন্সিলে সরকার মনোনীত আরও দু'জন প্রতিনিধি রয়েছেন । তাঁরা হলেন চিকিৎসক নির্মল মাজি ও চিকিৎসক সৌরভ পাল । কিন্তু কেবল চিকিৎসক শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায় ।

সুদীপ্ত রায়ের চিঠি নিয়ে শান্তনু সেনের বক্তব্য (ইটিভি ভারত)

সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শান্তনু সেনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরানোর প্রস্তাব দিলেন তিনি । সেই মর্মে স্বাস্থ্যসচিবকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুদীপ্ত রায় । ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, শান্তনু সেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের একাধিক বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন । তাই তাঁকে কাউন্সিল থেকে সরানো হোক ৷

Santanu Sen
শান্তনু সেনকে সরানো নিয়ে সুদীপ্ত রায়ের লেখা চিঠি (নিজস্ব ছবি)

তবে এই প্রেক্ষিতে দুটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে । সেই দুটো চিঠিতে আবার শান্তনু সেনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার দিনগুলির মধ্যে ফারাক রয়েছে ৷ একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সব বৈঠকে তিনি যোগ দেননি ৷ আবার অন্য আরেকটি চিঠিতে লেখা, জানুয়ারি থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত বৈঠকেগুলিতে অনুপস্থিত ছিলেন শান্তনু সেন ৷ দুটো চিঠি ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ।

Santanu Sen
শান্তনু সেনকে সরানো নিয়ে সুদীপ্ত রায়ের লেখা চিঠি (নিজস্ব ছবি)

পাশাপাশি ওই চিঠিগুলিতে শান্তনু সেনের বদলে অন্য কাউকে তাঁর জায়গায় নিয়ে আসার সুপারিশ করেছেন সুদীপ্ত রায় । ওই চিঠিগুলি প্রকাশ্যে আসার পরেই ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয় চিকিৎসক শান্তনু সেনের সঙ্গে ।

তিনি বলেন, "আমার চিঠি নিয়ে বিস্তর কিছু বলার আছে । তবে এই বিষয়ে আমি প্রকাশ্যে কিছু বলব না । কেন আমি বৈঠকে যাইনি বা আমার বক্তব্য কী, সেটা আমি স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানাব । আমার মনে হয়, আমার চিঠিটাও সমান গুরুত্ব দিয়ে উনি দেখবেন ।"

এই চিঠির বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসের সদস্য উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের কাছে যে চিঠিটা এসে পৌঁছেছে সেখানে বলা হয়েছে 9 এবং 10 অগস্ট বৈঠক হয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিলে । এমনকি বলা হয়েছে, সেই দু'দিনও শান্তনু সেন বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন । কিন্তু সরকারের কাছে যে চিঠি যাচ্ছে সেখানে এই দুটো দিনের কথার উল্লেখ নেই । 9 অগস্ট আরজি কর-কাণ্ড হয়েছিল । কেন এই দুটো দিন বাদ দেওয়া হল চিঠিতে ? তবে কি এর সঙ্গে অভয়া হত্যাকাণ্ডের কোনও যোগ আছে ?"

অন্যদিকে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর অপসারণের সুপারিশ করে সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বিশেষ স্বাস্থ্যসচিব নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি জানিয়ে সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দিয়েছেন । সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, 2019 সালের নভেম্বর মাসের 1 তারিখ থেকে রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মানস চক্রবর্তী । ফলে তাঁকে বদল করে সেই জায়গায় নতুন কাউকে এই দায়িত্বে আনা হোক ।

Swasthya Bhawan
রেজিস্ট্রারের অপসারণ নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের তরফে সুদীপ্ত রায়কে দেওয়া চিঠি (নিজস্ব ছবি)

ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস ফোরাম স্বাস্থ্য ভবনের এই উদ্যোগকে আন্দোলনের জয় হিসেবে দেখছে । কারণ প্রথম থেকেই তারা মানস চক্রবর্তীর অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে । এই বিষয়ে চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মানস চক্রবর্তীকে যখন পুনর্বহাল করা হয়েছিল, তার সরকারি নথি নেই । আমাদের এই অভিযোগেরই সত্যতা এবার স্বীকার করা হয়েছে । আমরা প্রথম থেকেই বলেছি, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল দুর্নীতির আখড়া । সেটা আজ প্রমাণিত । এবার জলপাইগুড়িতে যেভাবে অধ্যাপক চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ স্বরূপ বৃহস্পতিবার আমরা স্বাস্থ্য ভবন ও মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনে জমায়েত করব ।"

উল্লেখ্য, চিকিৎসক মহলে নির্মল মাজি ও সুদীপ্ত রায় এক গোষ্ঠীর লোক এবং শান্তনু সেন অপর গোষ্ঠীর বলেই পরিচিত ৷ এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আগে থেকেই ছিল ৷ তবে আরজি করের ঘটনার পর তা চরমে ওঠে ৷ যেসময় চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে, তখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন সুদীপ্ত রায় ৷ পরে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, তিনি রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলেন ৷ তার মধ্যে ছিল আরজি কর হাসাপাতালও ৷

এ দিকে আরজি কর-কাণ্ডে প্রথম থেকেই সরব হন তৃণমূল নেতা তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন ৷ আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অপসারণের দাবি তোলা থেকে আরজি করে প্রতিবাদেও দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গেও শান্তনু সেনের বিরোধ ছিল বলে শোনা যায় ৷ কারণ তৎকালীন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন শান্তনু ঘনিষ্ঠ আখতার আলি । যদিও তারপরেও নিজের পদ থেকে সরেননি অধ্যক্ষ । পরে যদিওবা পদ যায় সন্দীপ ঘোষের ৷ তাঁকে আরজি কর মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন বাতিল নিয়েও প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তনু সেনই ৷

সেই পর্ব মিটলেও সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ সুদীপ্ত রায়ের পদক্ষেপ একাধিক প্রশ্ন তুলেছে ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নির্মল মাজি ও সৌরভ পাল নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিতেন কি না সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে দেওয়া চিঠিতে ৷ কেবল শান্তনু সেনের অনুপস্থিতির দিকটা চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে ৷ তাঁকে অপসারণের প্রস্তাব তাহলে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ?

পাশাপাশি সামনেই রয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন ৷ প্রথমে এই নির্বাচনে লড়বেন না বলে জানিয়েছিলেন শান্তনু সেন ৷ পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ৷ আইএমএ'র রাজ্য সম্পাদকের পদের জন্য মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি ।

চিকিৎসকমহল মনে করছে, আইএমএ'র ভোট ও আরজি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সুদীপ্ত রায়ের স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ৷ এরইসঙ্গে যে বিষয়টা নজর কেড়েছে তা হল চিকিৎসকদের ও স্বাস্থ্যসচিবকে দেওয়া দুটি চিঠিতে শান্তনু সেনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার আলাদা তারিখ ৷ কারণ চিকিৎসকদের হাতে আসা সুদীপ্ত রায়ের চিঠিতে 9 ও 10 অগস্ট বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ অপর চিঠিতে সেটা নেই ৷

এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যদি এপ্রিল পর্যন্ত ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠক হয়, তাহলে আরজি কর-কাণ্ডের পর সন্দীপ ঘোষ থেকে বীরূপাক্ষ বিশ্বাসদের বিরুদ্ধে কাউন্সিল যে পদক্ষেপ করেছে, তার কোনও বৈঠকই হয়নি ৷

কলকাতা, 20 নভেম্বর: ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ ৷ শান্তনু সেনকে সরানোর সুপারিশ করলেন স্বয়ং মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায় ৷ অন্যদিকে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীকে অপসারণের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য ভবন ৷ এই মর্মে কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে । মানস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ।

ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলে সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন চিকিৎসক তথা প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন । তিনি ছাড়াও কাউন্সিলে সরকার মনোনীত আরও দু'জন প্রতিনিধি রয়েছেন । তাঁরা হলেন চিকিৎসক নির্মল মাজি ও চিকিৎসক সৌরভ পাল । কিন্তু কেবল চিকিৎসক শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায় ।

সুদীপ্ত রায়ের চিঠি নিয়ে শান্তনু সেনের বক্তব্য (ইটিভি ভারত)

সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শান্তনু সেনকে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সরানোর প্রস্তাব দিলেন তিনি । সেই মর্মে স্বাস্থ্যসচিবকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুদীপ্ত রায় । ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, শান্তনু সেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের একাধিক বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন । তাই তাঁকে কাউন্সিল থেকে সরানো হোক ৷

Santanu Sen
শান্তনু সেনকে সরানো নিয়ে সুদীপ্ত রায়ের লেখা চিঠি (নিজস্ব ছবি)

তবে এই প্রেক্ষিতে দুটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে । সেই দুটো চিঠিতে আবার শান্তনু সেনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার দিনগুলির মধ্যে ফারাক রয়েছে ৷ একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সব বৈঠকে তিনি যোগ দেননি ৷ আবার অন্য আরেকটি চিঠিতে লেখা, জানুয়ারি থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত বৈঠকেগুলিতে অনুপস্থিত ছিলেন শান্তনু সেন ৷ দুটো চিঠি ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ।

Santanu Sen
শান্তনু সেনকে সরানো নিয়ে সুদীপ্ত রায়ের লেখা চিঠি (নিজস্ব ছবি)

পাশাপাশি ওই চিঠিগুলিতে শান্তনু সেনের বদলে অন্য কাউকে তাঁর জায়গায় নিয়ে আসার সুপারিশ করেছেন সুদীপ্ত রায় । ওই চিঠিগুলি প্রকাশ্যে আসার পরেই ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয় চিকিৎসক শান্তনু সেনের সঙ্গে ।

তিনি বলেন, "আমার চিঠি নিয়ে বিস্তর কিছু বলার আছে । তবে এই বিষয়ে আমি প্রকাশ্যে কিছু বলব না । কেন আমি বৈঠকে যাইনি বা আমার বক্তব্য কী, সেটা আমি স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানাব । আমার মনে হয়, আমার চিঠিটাও সমান গুরুত্ব দিয়ে উনি দেখবেন ।"

এই চিঠির বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসের সদস্য উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের কাছে যে চিঠিটা এসে পৌঁছেছে সেখানে বলা হয়েছে 9 এবং 10 অগস্ট বৈঠক হয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিলে । এমনকি বলা হয়েছে, সেই দু'দিনও শান্তনু সেন বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন । কিন্তু সরকারের কাছে যে চিঠি যাচ্ছে সেখানে এই দুটো দিনের কথার উল্লেখ নেই । 9 অগস্ট আরজি কর-কাণ্ড হয়েছিল । কেন এই দুটো দিন বাদ দেওয়া হল চিঠিতে ? তবে কি এর সঙ্গে অভয়া হত্যাকাণ্ডের কোনও যোগ আছে ?"

অন্যদিকে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর অপসারণের সুপারিশ করে সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বিশেষ স্বাস্থ্যসচিব নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি জানিয়ে সুদীপ্ত রায়কে চিঠি দিয়েছেন । সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, 2019 সালের নভেম্বর মাসের 1 তারিখ থেকে রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মানস চক্রবর্তী । ফলে তাঁকে বদল করে সেই জায়গায় নতুন কাউকে এই দায়িত্বে আনা হোক ।

Swasthya Bhawan
রেজিস্ট্রারের অপসারণ নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের তরফে সুদীপ্ত রায়কে দেওয়া চিঠি (নিজস্ব ছবি)

ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস ফোরাম স্বাস্থ্য ভবনের এই উদ্যোগকে আন্দোলনের জয় হিসেবে দেখছে । কারণ প্রথম থেকেই তারা মানস চক্রবর্তীর অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে । এই বিষয়ে চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মানস চক্রবর্তীকে যখন পুনর্বহাল করা হয়েছিল, তার সরকারি নথি নেই । আমাদের এই অভিযোগেরই সত্যতা এবার স্বীকার করা হয়েছে । আমরা প্রথম থেকেই বলেছি, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল দুর্নীতির আখড়া । সেটা আজ প্রমাণিত । এবার জলপাইগুড়িতে যেভাবে অধ্যাপক চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ স্বরূপ বৃহস্পতিবার আমরা স্বাস্থ্য ভবন ও মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনে জমায়েত করব ।"

উল্লেখ্য, চিকিৎসক মহলে নির্মল মাজি ও সুদীপ্ত রায় এক গোষ্ঠীর লোক এবং শান্তনু সেন অপর গোষ্ঠীর বলেই পরিচিত ৷ এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আগে থেকেই ছিল ৷ তবে আরজি করের ঘটনার পর তা চরমে ওঠে ৷ যেসময় চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে, তখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন সুদীপ্ত রায় ৷ পরে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, তিনি রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলেন ৷ তার মধ্যে ছিল আরজি কর হাসাপাতালও ৷

এ দিকে আরজি কর-কাণ্ডে প্রথম থেকেই সরব হন তৃণমূল নেতা তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন ৷ আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অপসারণের দাবি তোলা থেকে আরজি করে প্রতিবাদেও দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গেও শান্তনু সেনের বিরোধ ছিল বলে শোনা যায় ৷ কারণ তৎকালীন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন শান্তনু ঘনিষ্ঠ আখতার আলি । যদিও তারপরেও নিজের পদ থেকে সরেননি অধ্যক্ষ । পরে যদিওবা পদ যায় সন্দীপ ঘোষের ৷ তাঁকে আরজি কর মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন বাতিল নিয়েও প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তনু সেনই ৷

সেই পর্ব মিটলেও সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ সুদীপ্ত রায়ের পদক্ষেপ একাধিক প্রশ্ন তুলেছে ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নির্মল মাজি ও সৌরভ পাল নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিতেন কি না সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে দেওয়া চিঠিতে ৷ কেবল শান্তনু সেনের অনুপস্থিতির দিকটা চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে ৷ তাঁকে অপসারণের প্রস্তাব তাহলে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ?

পাশাপাশি সামনেই রয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন ৷ প্রথমে এই নির্বাচনে লড়বেন না বলে জানিয়েছিলেন শান্তনু সেন ৷ পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ৷ আইএমএ'র রাজ্য সম্পাদকের পদের জন্য মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি ।

চিকিৎসকমহল মনে করছে, আইএমএ'র ভোট ও আরজি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সুদীপ্ত রায়ের স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ৷ এরইসঙ্গে যে বিষয়টা নজর কেড়েছে তা হল চিকিৎসকদের ও স্বাস্থ্যসচিবকে দেওয়া দুটি চিঠিতে শান্তনু সেনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার আলাদা তারিখ ৷ কারণ চিকিৎসকদের হাতে আসা সুদীপ্ত রায়ের চিঠিতে 9 ও 10 অগস্ট বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ অপর চিঠিতে সেটা নেই ৷

এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যদি এপ্রিল পর্যন্ত ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠক হয়, তাহলে আরজি কর-কাণ্ডের পর সন্দীপ ঘোষ থেকে বীরূপাক্ষ বিশ্বাসদের বিরুদ্ধে কাউন্সিল যে পদক্ষেপ করেছে, তার কোনও বৈঠকই হয়নি ৷

Last Updated : Nov 20, 2024, 3:09 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.