কলকাতা, 10 এপ্রিল: বাসে চড়লে বুঝবেনই না বাসে আছেন, নাকি বিমানে উঠেছেন ! বাসেই এখন মিলবে বিমানের মতো অনুভূতি । রাজ্যে চালু হল এমন এক বাস, যাতে থাকছে বায়ো টয়লেট, প্যান্ট্রি, বিনামূল্যে ওয়াইফাই-সহ আরও একাধিক পরিষেবা । আপাতত কয়েকটি রুটে চালু হলেও দ্রুত রাজ্যের একাধিক রুটে চালু হয়ে যাবে এই অত্যাধুনিক বাস ।
ঘড়িতে তখন রাত 9টা । রবীন্দ্র সদনের নির্ধারিত জায়গায় এসে থামল একটি পেল্লায় ঝাঁ চকচকে নতুন মডেলের ভলভো বাস । বেলুন এবং গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে বাসটি সুসজ্জিত । এই বাস যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে শিলিগুড়ি । ইটিভি ভারতের ক্যামেরাও যাত্রীদের সঙ্গে উঠে পড়ল বাসে । বাসের ভেতরের সাজসজ্জা দেখে প্রথমটায় মনে হবে যেন একটি আস্ত বিমান ।
বেশ কয়েকমাস আগে আরও একটি বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সির উদ্যোগে রাজ্যে চালু হয়েছে বায়ো টয়লেট যুক্ত বাস পরিষেবা । তবে রাজ্যে এই প্রথমবার বায়ো টয়লেট পরিষেবা যুক্ত ভলভো বাস চালু হল । রায়পুর ক্রুজার্স প্রাইভেট লিমিটেডের অধিকর্তা রাজিন্দর সিং জানিয়েছেন যে, দেশের কয়েকটি শহরে এই ধরনের ভলভো বাস থাকলেও মালটি অ্য়াক্সেল ভলভো বাসে এই ধরনের পরিষেবা যুক্ত হওয়া এটিই দেশে প্রথম । সাধারণত ভলভো বাস হয় ছয় চাকার, তবে মাল্টি-অ্যাক্সেল বাসে আটটি চাকা থাকে ।

2/2 ভলভো 9600 সিটার বাস । বাসের ভেতরে সিট থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা সবেতেই কালো ও লাল রংয়ের ব্যবহার চোখে পড়বে । আসনের ঠিক মাথার উপরেই রয়েছে রিডিং লাইটের ব্যবস্থা । এছাড়াও যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রয়েছে ইমার্জেন্সি বাটন এবং জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও । বাসের ভেতরে একটি আস্ত শৌচালয় রয়েছে, তবে স্বাভাবিক ভাবেই তা আকারে কিছুটা ছোট । তাই শৌচালয়ে গিয়ে যাত্রীদের কোনও সমস্যা হলে যাতে দ্রুত বাসে থাকা কর্মীদের জানানো যায়, তাই শৌচালয়েই রয়েছে কলিং বাটন ৷ যেটি টিপলে সঙ্গে সঙ্গে বাসের কর্মীরা সহায়তার জন্য চলে আসবেন ।

বাসের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এফএপিএস (Fire Alarming & Protection System)। বাসের উপরের দিকে লাগানো হয়েছে ওয়াটার স্প্রিংকলার । আর একটি বিশেষ জিনিস যা সাধারণত দূরপাল্লার বাসে দেখা যায় না, সেটিও রয়েছে এই বাসে ৷ তা হল, বাসের ঠিক মাঝামাঝি জায়গার দু'দিকেই গেট রয়েছে । আর সেই গেটের পাশেই রয়েছে শৌচালয় । শুধুমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতিতেই সম্পূর্ণ খুলে যাবে দু'পাশের মাঝের দরজা । রয়েছে জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও ৷ বাসের ভেতরে চারিদিকে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা । প্রতিটি আসনের সঙ্গে রয়েছে মোবাইল ও ল্যাপটপ চার্জিং ব্যবস্থা । এছাড়াও কাজ করার জন্য বা বিনোদনের জন্য যেমন রয়েছে এলইডি টিভি স্ক্রিন, তেমনই রয়েছে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা ।

আপাতত সুইডিশ সংস্থা ভলভো থেকে এই ধরনের ছয়টি সিটার বাস কেনা হয়েছে । একেকটি বাসের দাম 2 কোটি টাকার কিছু বেশি । উল্লেখ্য, এই ধরনের বাস নির্মাণের জন্য বরাত দিতে হয় । অর্থাৎ একইসঙ্গে অনেকগুলি এই ধরনের বাস তৈরি করা হয় না । যে সংস্থা বাস কিনতে চেয়েছে, তারা কী ধরনের ফিচার রাখতে চাইছে বাসে, সেসব জেনে তারপরেই বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয় বাসগুলো । অর্থাৎ প্রতিটি বাসই 'কাস্টম মেইড'।
আপাতত কলকাতা-শিলিগুড়ি রুটে চালু হয়েছে এই বাস পরিষেবা । কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দ্রুত কলকাতা-পুরী এবং কলকাতা-দীঘা রুটে পরিষেবা শুরু হবে ৷ তার পাশাপাশি যাত্রীদের থেকে কেমন সাড়া মিলছে তা দেখে, ভবিষ্যতে আরও একাধিক রুটে এই বাস পরিষেবা চালু করা হবে ।

রিকি শরাফ নামে বাসের এক যাত্রী ইটিভি ভারতকে জানালেন, "রাজ্যে এই ধরনের বাস প্রথম । এই বাসে চড়ে একেবারে বিমানের ভেতরে বসে থাকার মতো অনুভূতি হচ্ছে । দূরপাল্লার বাসে সফর করলে বাড়ি থেকে খাবার-দাবার নিয়ে আসার ব্যাপারে থাকে । কিন্তু এই বাসে যেহেতু প্যান্ট্রি রয়েছে তাই রাতের খাবারের চিন্তাও নেই ।"
আদর্শ নামে এক খুদে যাত্রী জানিয়েছে যে, "এই বাসে চড়ে খুব মজা হচ্ছে । বিশাল কাঁচের জানলার সামনে বসে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি ।"
আর এক মহিলা যাত্রী অনামিকা সিনহা বলেন যে, তিনি আগেও ভলভো বাসে সফর করেছেন ৷ কিন্তু বাসের মধ্যে শৌচালয় থাকায় তাঁদের মতো আরও মহিলা যাত্রীদের সুবিধা হবে বলেই জানান তিনি ।
অপর যাত্রী অগাস্টিন জানিয়েছেন যে, "এই বাসে চড়ে আমার দারুণ লাগছে । এই সিরিজের ভলভো বাসে আমি আগেও চড়েছি ৷ কিন্তু এই প্রথমবার প্যান্ট্রি ও বায়ো টয়লেটের সুবিধা রয়েছে দেখলাম । ভাড়া একটু কম হলে আরও ভালো হবে ।"
এজেন্সির অধিকর্তা রাজিন্দর সিং জানান, "গত এক বছর ধরে এই ধরনের বাস পথে নামানোর জন্য আলোচনা চলছিল । এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের বাস । যেহেতু ভলভো একটি সুইডিশ সংস্থা, তাই এই বাসে যে শৌচালয়টি লাগানো হয়েছে, সেটিও সুইডেন থেকেই এসেছে । এখন বিমানের শৌচালয়ে যেমন ভ্যাকুয়াম সাকশন ব্যবস্থা থাকে, ঠিক তেমন ব্যবস্থাই করা রয়েছে এই বাসের শৌচালয়ে ।"
অন্যান্য বাসের তুলনায় এই বাসগুলো যেমন অনেক বেশি আরামদায়ক, তেমনই যাত্রী নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক বেশি কার্যকরী । তাই বলাই বাহুল্য যে, রাজ্য পরিবহণের মানচিত্রে এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানের বাস পরিষেবা গণপরিবহণ ব্যবস্থায় অন্য মাত্রা যোগ করবে ।