কলকাতা, 16 মে: চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বিধাননগরে বিকাশ ভবন চত্বরে ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উপর লাঠি চালিয়ে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে ৷ শুক্রবার অবশ্য পুরো পরিস্থিতির দায় আন্দোলনকারীদের উপর চাপিয়ে দিল রাজ্য পুলিশ ৷
এদিন এই নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম ৷ সেখানে সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘প্রথম বেআইনি কাজটা আন্দোলনকারীরাই করেছিল ৷’’
কেন এই কথা বললেন তিনি, সেই ব্যাখ্যাও এদিন দিয়েছেন এই পুলিশ আধিকারিক ৷ তিনি আসলে বৃহস্পতিবার দুপুরে তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তের গাড়ি আটকে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য করেছেন ৷ এদিন তিনি জানান, স্থানীয় এক নেতা ঘুরতে গিয়েছিলেন সেখানে ৷ তাঁকে চোর চোর বলা হয়েছিল ৷ এরপর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান । সেই সময় হালকা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে ৷
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন চত্বরে গেলে তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা ৷ সেই সময় সেখানে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ সব্যসাচীকে ঘিরে চোর-চোর স্লোগান ওঠে ৷ সেই সময় সব্যসাচীর অনুগামীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কাধাক্কি হয় বলে অভিযোগ ৷ ফলে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) যে এই ঘটনাটির কথা বলেছেন, তা সহজেই অনুমেয় ৷
এদিন সুপ্রতিম সরকার জানান, পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছে ৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেউ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর পথ আটকালাম কিংবা তাঁর গাড়ি আটকালাম ৷ তিনি জনপ্রতিনিধি হোক কিংবা অ্যাম্বুলেন্স হোক এটা কি আমরা করতে পারি ? প্রথম বেআইনি কাজটা আন্দোলনকারীরাই করেছিল ৷’’
এদিন রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে আয়োজিত ওই সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রতিম সরকার আরও জানান, পুলিশ বারবার শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার কথা বলেছিল ৷ কিন্তু আন্দোলনকারীরা শোনেননি ৷ যেহেতু আন্দোলনকারীরা চাকরি হারিয়েছেন, তাই তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে পুলিশ চুপ ছিল ৷
তিনি আরও জানান, বিকাশ ভবনের ভেতরে আটকে পড়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ এক তরুণী ঝাঁপও দেন ৷ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৷ তখন আটকে পড়াদের বের হতে দেওয়ার জন্য বারবার আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ করা হয় ৷ তার পরও কথা শোনা হয়নি ৷ সেই কারণেই প্রায় সাতঘণ্টা অপেক্ষা করার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওখান থেকে সরায় ৷ এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) বলেন, ‘‘বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে । এটা বলতে কোনও অসুবিধা নেই আমাদের ৷’’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম জানান, আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকা বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এই নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি সবার চাকরি গিয়েছে । তাই তাঁরা প্রতিবাদ করছেন । তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ না করে বিকাশ ভবনের সব গেটে তালা লাগিয়ে দেন ৷ এটা উচিত না ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেখানে বেশ কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ছিলেন ৷ শিক্ষকরা আমাদের সমাজের স্তম্ভ । তাঁদের থেকে এই সব আশা করি না ৷’’ একই সঙ্গে জাভেদ শামীমের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান করলে মিডিয়াকে পাওয়া যায় না । এটা আমাদের সিস্টেম ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয় যে ওঁদেরকে ওখানে বসতে দেব না । ওঁরা ওখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করুক । তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই ৷ তবে তাঁরা যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেন এবং পুলিশকর্মী-সহ অন্যান্য সরকারি আধিকারিকদের লাঠিপেটা করেন এবং ইট-পাথর ছুঁড়ে মারেন, সেটিও তো একেবারেই অনুচিত কাজ ৷’’