কলকাতা, 12 মে: 2034-35 সালের মধ্যে রাজ্যের বিদ্যুতের চাহিদা ছুঁতে পারে প্রায় 24 হাজার 757 মেগাওয়াট । কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (সিইএ)-র সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে এমনই দাবি করা হয়েছে । আগামী এক দশকে রাজ্যে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে প্রায় 6 হাজার 500 মেগাওয়াট । এই হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার নতুন 'পশ্চিমবঙ্গ শক্তি নীতি' তৈরি করতে চলেছে । পাশাপাশি, তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ দফতরের অধীনে একটি বিশেষ কৌশলগত পরিকল্পনা ইউনিট । যার লক্ষ্য হবে, রাজ্যের শক্তি নিরাপত্তা ও শক্তি পরিবর্তনের (energy transition) সুদূরপ্রসারী রূপরেখা তৈরি করা ।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, 2024-25 অর্থবর্ষে রাজ্যের কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট চুক্তিভিত্তিক ক্ষমতা (contracted capacity) 8 হাজার 244 মেগাওয়াট । আগামী দশকে তা বাড়িয়ে 14 হাজার 148 মেগাওয়াট করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । এর অর্থ, নতুন করে 5 হাজার 904 মেগাওয়াট ক্ষমতা যুক্ত করতে হবে রাজ্যকে । এর জন্য চারটি নতুন কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । যার মধ্যে একটি 1 হাজার 600 মেগাওয়াটের 'গ্রিনফিল্ড' প্রকল্পের টেন্ডার ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে । বাকি প্রকল্পগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ।
তবে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, পরিকাঠামো উন্নয়নে বড়সড় লগ্নিও জরুরি । সেই কারণেই 'স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ইউনিট' তৈরি করে নতুন শক্তি নীতির খসড়া বানানো এবং তাছাড়াও গত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নেওয়া নানা প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির (DISCOMs) পারফরম্যান্স পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় পরিকল্পনা খতিয়ে দেখার কাজ হাতে নিচ্ছে সরকার । যদিও রাজ্য প্রশাসন বলছে, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা এবং যোগান নিয়ে কোনও চিন্তার কারণ নেই, বরং রাজ্যের উৎপাদন উদ্বৃত্ত । তবে সবরকম প্রস্তুতি রাখতে চায় রাজ্য সরকার ।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে রাজ্যের জন্য দেউচা-পাচামি প্রকল্পের সাফল্য অত্যন্ত জরুরি । এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামিদিনে রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি থাকবে না । কিন্তু সবটার আগে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত একটি শক্তি নীতি । সে কারণেই, কীভাবে বিদ্যুৎ কিনবে রাজ্য-স্বল্প, মধ্য এবং না দীর্ঘ মেয়াদে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে এই ইউনিটের তরফে । কেন্দ্রীয় উৎপাদন কেন্দ্র বা স্বাধীন উৎপাদক (IPP), রাজ্যের ভিতরে হোক বা বাইরে-সব ক্ষেত্রেই খরচের দিকটা গুরুত্ব পাবে । রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যাতে অর্থনৈতিক দিক থেকেও টেকসই হয় এবং শিল্প-বাণিজ্যিক ক্ষেত্র সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পায়, সেদিকেও নজর দেবে নীতি-প্রণেতারা ।
রাজ্যের আরও এক বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে 'কার্বন মার্কেট' গঠনের রূপরেখা তৈরি । কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিতে এই কার্বন বাজার রাজ্যে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে শক্তি দফতর । এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের কথায়, "রাজ্যের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রটিকে আর্থিকভাবে আরও কতটা বাস্তবসম্মত করা যায় সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে । রাজ্য সরকার গোটা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস । কারণ বিদ্যুৎ এমন একটা ক্ষেত্র যেটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শিল্প সব প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয় । সেই কারণেই প্রয়োজন শক্তি খাতের কাঠামোগত সংস্কার । এমনটা করা গেলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ নিশ্চিত করে আরও দ্রুত রাজ্যের উন্নয়নে গতি আনা সম্ভব হবে ।"