হাওড়া, 22 এপ্রিল: রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি হাওড়ায় প্রত্যাবর্তন হল ? মঙ্গলবার হাওড়া জেলা পরিষদের মেন্টর হিসেবে তাঁর নিয়োগের বিষয়টি সামনে আসার পরই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের এই জেলায় ৷ আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে কি আবারও তিনি সেই ডোমজুড় থেকেই প্রার্থী হবেন, উঠছে এই প্রশ্নও ৷
যদিও এত বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে ঢুকতেই নারাজ রাজীব ৷ তিনি বলছেন, “আমি বরাবর সরকারি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক থেকেছি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ । আমি হাওড়ার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই ।”
উল্লেখ্য, বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন, সেই বছরই প্রথমবার হাওড়ার ডোমজুড় আসন থেকে জিতে বিধায়ক হন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁকে সেচ ও জলপথ পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 2018 সাল পর্যন্ত তিনি ওই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন ৷ 2019 সালে তাঁকে বনমন্ত্রী করা হয় ৷
2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি আচমকা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন ৷ তৃণমূলের সঙ্গেও সমস্ত সংশ্রব ত্যাগ করেন ৷ তার পর যোগদান করেন বিজেপিতে ৷ বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ছবি হাতে তাঁকে কাঁদতেও দেখা গিয়েছিল সেই সময় ৷
ঘাসফুল প্রতীকে পর পর দু’বার জিতলেও 2021 সালে পদ্ম-প্রতীকে ডোমজুড় থেকে তিনি জিততে পারেননি ৷ ওই বছর 2 মে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর দুরত্ব বাড়তে শুরু করে ৷ এর পর তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে আসেন ৷ তিনি তৃণমূলে ফিরতেই শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক ৷
তাঁর বিরুদ্ধে আগেই তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারাই তোপ দেগেছিলেন ৷ হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে গদ্দার বলে কটাক্ষ করেছিলেন, যখন তিনি বিজেপিতে যোগ দেন ৷ দেবাংশু ভট্টাচার্য থেকে ডোমজুড়ের বর্তমান বিধায়ক কল্যাণ ঘোষও সরব হয়েছিলেন ৷ রাজীব তৃণমূলে ফেরার পর সেভাবে আর কেউ বিতর্তিত মন্তব্য করেননি ৷ বরং অনেকে তো আগের করা মন্তব্য অস্বীকার করেন ৷
যদিও বাংলার রাজনীতিতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি ৷ প্রথম দিকে তাঁকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, স্থানীয় নেতৃত্বের ক্ষোভ আঁচ করেই জেলার রাজনীতির বাইরে রাখা হয়েছিল রাজীবকে ৷ অবশেষে তিনি হাওড়ায় ফিরলেন ৷ গতকাল, সোমবার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজীবকে হাওড়া জেলা পরিষদের মেন্টর হিসেবে নিয়োগ করা হল ৷
সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর অবশ্য অতীতের তিক্ততা মনে রাখতে চান না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেটা অন্তত তাঁর কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে ৷ তিনি বলছেন, “না, না, তা ঠিক নয় । আমি আগে থেকেই হাওড়ায় থাকি । এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি ।” তিনি আরও বলেন, “আমি দলবিরোধী কোনো কাজ করিনি । নেত্রী যদি আবার সুযোগ দেন, আমি সবরকমভাবে তাঁর পাশে থাকব ।”
কিন্তু হাওড়ার রাজনীতিতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রাসঙ্গিক হওয়ায়, পুরনো দ্বন্দ্ব নতুন করে জেগে ওঠে কি না, সেটাই এখন দেখার ৷