রিষড়া, 28 এপ্রিল: পাক রেঞ্জার্সের কাছ থেকে বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার ৷ এর মধ্যেই পাঠানকোট যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন বিএসএফ জওয়ানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিজেই। স্বামীকে ফেরাতে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে যেতে রাজি পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ ৷
সোমবার পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ-সহ ছয়জনের একটি দল পাঠান কোটের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানা গিয়েছে। সেই জন্য নিজের ব্যাগও গুছিয়ে ফেলেছেন রজনী। তাঁর সঙ্গেই যাচ্ছে তাদের আট বছরের সন্তানও। আর পাঠানকোট যাওয়ার আগে তিনি জানিয়ে দিলেন, স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য যতদূর সম্ভব তিনি যাবেন। পাঠানকোটে কোনও কিছু সুরাহা না হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলেও জানিয়েছেন রজনী। তবে স্বামীকে তিনি যে করেই হোক ফিরিয়ে আনবেন ৷
অন্যদিকে, এদিন বিজেপি বিধায়কদের সামনেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ। তাঁর কথায়, ভারত সরকার পাকিস্তানকে চাপ দিক ৷ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনুক ৷ সোমবার সকালে বিজেপির তিন বিধায়ক পুড়শুড়া বিমান ঘোষ, কল্যাণীর অম্বিকা রায়, ভাটপাড়ার পবন সিং আসেন রিষড়া হরিসভার পুণম সাউয়ের বাড়িতে। সেখানে তাঁরা জওনের বাবা ও স্ত্রী-র সঙ্গে কথা বলেন। পরে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক আম্বা প্রসাদ এই বাড়িতে আসেন। যদিও BSF এর তরফে জানান হয়েছে পূর্নমের পরিবারকে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের তরফে এখনও কিছু আটক জওয়ান পুর্ণম কুমার সাউয়ের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। তাতেই উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে পরিবারের।
এদিন পূর্নমের স্ত্রী রজনী বলেন, "বিএসএফের তরফে আমাকে ফোন করে আমাকে সহযোগিতার কথা বলেছে। কিন্তু আমি কোনওভাবেই আস্থা রাখতে পারছি না । যেহেতু ছয় দিন পেরিয়ে গেল কী হলো বুঝতে পারছি না । যদি কোনও রেসপন্স না পাই তাহলে দিল্লির দরজায় কড়া নাড়ব। ওরা খালি বলছেন ও ঠিক আছে। কিন্তু ওতো ইন্ডিয়াতে নেই ,শত্রু দেশে রয়েছে । তাহলে আমি কী করে চিন্তা না করে থাকব। আমি মানছি আমার স্বামীর জন্য গোটা দেশ ভাবছে। কিন্তু কোনও কিছুই জানতে পারছি না। যে কারণে এই অবস্থাতেও আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে। আমি কোনও খবর পাচ্ছি না, যদি এটুকুও জানতে পারতাম উনি ঠিক আছেন তাহলে এই কন্ডিশনে আমি যেতাম না। তাহলে এই পরিস্থিতিতে আমি যেতাম না।
তিনি আরও বলেন, "কাশ্মীরে ঘটনার জন্য তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু সেই সমস্যা যদি এক বছর চলে, তাহলে আমার স্বামী কি এক বছর ধরে সেখানে আটকে থাকবে ? কী কারণে ধরে রেখেছে সেটাও তো জানাবে। একটা বিএসএফের জওয়ান 17 বছর চাকরি করছে তার লিমিটেশন সে জানে না ! ওরা বলছে বর্ডার পার করেছিল !"
সোমবার সকালে রিষড়ার বাড়ি থেকে কলকাতা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন রজনীরা। দুপুর 1টা 35 মিনিটে ফ্লাইট রয়েছে। তার আগে ইটিভি ভারতকে পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ বলেন, "আমি অন্তঃসত্ত্বা হলেও স্বামীর জন্য কষ্ট করতেও রাজি আছি। সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে সরকারের দরজায় দরজায় ঘুরব।" একই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনতে তিনি পারছেন না, ততদিন বাড়ি ফিরবেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত স্বামীর জন্য লড়ে যাবেন রজনী।
রবিবার রিষড়ার বাগখালে স্থানীয় মানুষরা পুর্নমকে ফিরিয়ে আনার জন্য পথসভা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ। পূর্ণমের পোস্টার হাতে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত মিছিলও করেন স্থানীয় মানুষ। সেখানেই বিজয় পাণ্ডে বলেন, "সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্ত আমরা চাইছি যত শীঘ্র সম্ভব পাকিস্তান ফিরিয়ে দিক আমাদের জওয়ানকে।"
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের সেনার হাতে আটক হন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ ৷ সরকারি সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার ওই বিএসএফ জওয়ান ভুল করে পঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন ৷ তখনই তাঁকে আটক করা হয় ৷ তাঁর মুক্তির বিষয়ে দু'দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে ৷