ETV Bharat / state

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, লাঠিচার্জ ; গুজবের জেরে রণক্ষেত্র বারাসত - Barasat Incident

Mob Lynching in Barasat: ছেলেধরার গুজবে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে বারাসতজুড়ে । এদিন ছেলেধরা সন্দেহে গনপিটুনির জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বারাসত ।

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 19, 2024, 11:06 PM IST

Etv Bharat
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, লাঠিচার্জ (ইটিভি ভারত)

বারাসত, 19 জুন: ছেলেধরা সন্দেহে মহিলা ও তাঁর সঙ্গীকে গণপিটুনির জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল উত্তর 24 পরগনার জেলা সদর বারাসত ।পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের লাঠিচার্জ । কিছুই বাদ গেল না । পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে একসময় পুলিশকেই মাইকিং করে ঘটনাটিকে গুজব বলে প্রচার করতে হয় । গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে । এরপরই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । গুজব ছড়ানো এবং গণপিটুনির ঘটনা মোবাইলবন্দি করে রাখার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে । এর মধ্যে গণপিটুনির ঘটনাতেও কয়েকজন জড়িত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।

সম্প্রতি কাজিপাড়ায় নিখোঁজ 11 বছরের বালকের পচাগলা দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই ছেলেধরার গুজবে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে বারাসত জুড়ে ।এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণির মানুষ । যদিও, পুলিশের তরফে আগেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করে বলা হয়, এই ধরনের ঘটনার কোনও ভিত্তি নেই । পুরোটাই গুজব । যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে পুলিশের তরফে ৷

তারপরও কিন্তু ছেলেধরার গুজব চলছেই বারাসত শহর জুড়ে । তা স্পষ্ট এদিনের এই ঘটনা থেকেই । সূত্রের খবর, ছেলেধরার গুজবের জেরে বুধবার সকালে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বারাসতের কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকা । এদিন সকালে প্রথমে ছেলেধরার গুজব ছড়ায় বারাসত পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ায় । গুজবের জেরে সেখানে এক ব‍্যক্তিকে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত জনতা । সেই ঘটনার রেশ গিয়ে পড়ে পৌরসভার 22 ও 23 নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল কামাখ্যা মন্দির চত্বরে । সেখানেও ছেলেধরার গুজবে এক মহিলাকে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা ।

জানা গিয়েছে, এদিন সকালে কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে অটোতে উঠতে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা । সেই সময় আচমকাই অটো থেকে নামিয়ে তাঁকে ছেলেধরার তকমা দিয়ে মারধর করতে থাকে আমজনতা । কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিড় জমে যায় । সকলেই 'ছেলেধরা'কে দেখতে চান । মারধর ও গণপিটুনির খবর পেয়ে অকুস্থলে চলে আসে পুলিশ । কিন্তু উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপরেই পালটা চড়াও হয় । ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি ।রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা । পরিস্থিতি সামাল দিতে বারাসত এসডিপিও’র নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ছুটে আসে ঘটনাস্থলে । আসে র‍্যাফও । প্রথমে বুঝিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা হলেও তাতে কোনও কাজ না-হওয়ায় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শেষে লাঠিচার্জ করে পুলিশ ।সূত্রের খবর, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গীকে বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এর মধ্যে ওই মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক ।

স্বপ্না মিত্র নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "পুরোটা গুজব হতে পারে না কখনও । নিশ্চয় এর পিছনে কোনও না কোনও রহস্য রয়েছে । এলাকার লোকজন এটা নিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কিত । পুলিশের উচিত এই ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা সামনে আনা । নইলে এই ধরণের ঘটনা বাড়তেই থাকবে ।"

যদিও, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর তালুকদার অবশ্য দাবি করছেন, এর ঘটনার কোনও ভিত্তি নেই । সম্পূর্ণ সন্দেহের বশে এই সব করা হচ্ছে ।আমরা জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় আছি । কামাখ্যা মন্দিরের কাছে দু’জনকে খুব বাজেভাবে মারধর করা হয়েছে । রক্তারক্তি অবস্থা । কিছু উৎসাহী ছেলে সমাজমাধ্যমে মিথ্যে খবর ভাইরাল করছে । তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করছে । এরাই বিষয়টিকে ছড়াচ্ছেন । প্যানিক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বারাসতের এসডিপিও বিদ্যাগার আজিংকাকে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় এদিন । সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, "গুজবে বিশ্বাস করবেন না । এটা পুরোপুরি গুজব । কাজিপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন । এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই । বাচ্চা চুরির যে গল্প ছড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব । সেই গুজবকে বিশ্বাস করে গোলমাল চলছে । আমি আবারও বলছি, গুজবে বিশ্বাস করবেন না । এখানে প্রতিটি বাচ্চা নিরাপদে আছে ।" অন‍্যদিকে, গণপিটুনির ভিডিয়ো দেখে পুলিশ একে একে শনাক্ত করতে থাকেন অভিযুক্তদের । দুপুর অবধি এই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ।

এনিয়ে বারাসত জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, "তাপস মালাকার নামে এক ব‍্যাক্তি সরাসরি এই গণপিটুনির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । তা ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । এছাড়া আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ।প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব । কাউকেই রেয়াত করা হবে না ।"

বারাসত, 19 জুন: ছেলেধরা সন্দেহে মহিলা ও তাঁর সঙ্গীকে গণপিটুনির জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল উত্তর 24 পরগনার জেলা সদর বারাসত ।পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের লাঠিচার্জ । কিছুই বাদ গেল না । পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে একসময় পুলিশকেই মাইকিং করে ঘটনাটিকে গুজব বলে প্রচার করতে হয় । গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে । এরপরই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । গুজব ছড়ানো এবং গণপিটুনির ঘটনা মোবাইলবন্দি করে রাখার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে । এর মধ্যে গণপিটুনির ঘটনাতেও কয়েকজন জড়িত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।

সম্প্রতি কাজিপাড়ায় নিখোঁজ 11 বছরের বালকের পচাগলা দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই ছেলেধরার গুজবে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে বারাসত জুড়ে ।এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণির মানুষ । যদিও, পুলিশের তরফে আগেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করে বলা হয়, এই ধরনের ঘটনার কোনও ভিত্তি নেই । পুরোটাই গুজব । যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে পুলিশের তরফে ৷

তারপরও কিন্তু ছেলেধরার গুজব চলছেই বারাসত শহর জুড়ে । তা স্পষ্ট এদিনের এই ঘটনা থেকেই । সূত্রের খবর, ছেলেধরার গুজবের জেরে বুধবার সকালে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বারাসতের কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকা । এদিন সকালে প্রথমে ছেলেধরার গুজব ছড়ায় বারাসত পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ায় । গুজবের জেরে সেখানে এক ব‍্যক্তিকে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত জনতা । সেই ঘটনার রেশ গিয়ে পড়ে পৌরসভার 22 ও 23 নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল কামাখ্যা মন্দির চত্বরে । সেখানেও ছেলেধরার গুজবে এক মহিলাকে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা ।

জানা গিয়েছে, এদিন সকালে কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে অটোতে উঠতে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা । সেই সময় আচমকাই অটো থেকে নামিয়ে তাঁকে ছেলেধরার তকমা দিয়ে মারধর করতে থাকে আমজনতা । কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিড় জমে যায় । সকলেই 'ছেলেধরা'কে দেখতে চান । মারধর ও গণপিটুনির খবর পেয়ে অকুস্থলে চলে আসে পুলিশ । কিন্তু উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপরেই পালটা চড়াও হয় । ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি ।রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা । পরিস্থিতি সামাল দিতে বারাসত এসডিপিও’র নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ছুটে আসে ঘটনাস্থলে । আসে র‍্যাফও । প্রথমে বুঝিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা হলেও তাতে কোনও কাজ না-হওয়ায় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শেষে লাঠিচার্জ করে পুলিশ ।সূত্রের খবর, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গীকে বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এর মধ্যে ওই মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক ।

স্বপ্না মিত্র নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "পুরোটা গুজব হতে পারে না কখনও । নিশ্চয় এর পিছনে কোনও না কোনও রহস্য রয়েছে । এলাকার লোকজন এটা নিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কিত । পুলিশের উচিত এই ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা সামনে আনা । নইলে এই ধরণের ঘটনা বাড়তেই থাকবে ।"

যদিও, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর তালুকদার অবশ্য দাবি করছেন, এর ঘটনার কোনও ভিত্তি নেই । সম্পূর্ণ সন্দেহের বশে এই সব করা হচ্ছে ।আমরা জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় আছি । কামাখ্যা মন্দিরের কাছে দু’জনকে খুব বাজেভাবে মারধর করা হয়েছে । রক্তারক্তি অবস্থা । কিছু উৎসাহী ছেলে সমাজমাধ্যমে মিথ্যে খবর ভাইরাল করছে । তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করছে । এরাই বিষয়টিকে ছড়াচ্ছেন । প্যানিক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বারাসতের এসডিপিও বিদ্যাগার আজিংকাকে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় এদিন । সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, "গুজবে বিশ্বাস করবেন না । এটা পুরোপুরি গুজব । কাজিপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন । এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই । বাচ্চা চুরির যে গল্প ছড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব । সেই গুজবকে বিশ্বাস করে গোলমাল চলছে । আমি আবারও বলছি, গুজবে বিশ্বাস করবেন না । এখানে প্রতিটি বাচ্চা নিরাপদে আছে ।" অন‍্যদিকে, গণপিটুনির ভিডিয়ো দেখে পুলিশ একে একে শনাক্ত করতে থাকেন অভিযুক্তদের । দুপুর অবধি এই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ।

এনিয়ে বারাসত জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, "তাপস মালাকার নামে এক ব‍্যাক্তি সরাসরি এই গণপিটুনির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । তা ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । এছাড়া আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ।প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব । কাউকেই রেয়াত করা হবে না ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.