জলপাইগুড়ি, 26 মার্চ: জমি থেকে আলু তোলাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল । গুলি চালানোর অভিযোগ । দুই পক্ষের পরিবারের আটজন সদস্য ঘটনায় আহত হয়েছেন । ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার চড়িয়াপাড়ায় । গুলি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার একজন । রাজগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে ।
রাজগঞ্জ থানার আইসি অনুপম মজুমদার বলেন, "গুলি চালানোর অভিযোগ হয়েছে । আমরা একজনকে গ্রেফতার করেছি । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।"
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চড়িয়াপাড়াতে দুই পরিবারের সদস্যরা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু চাষ করেছিল । গত 23 তারিখ থেকে মাঠে আলু তোলার কাজ শুরু হয় । গাড়ি করে আলু হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই । সেসময় এক পরিবারের জমির উপর দিয়ে আর এক পরিবার আলু গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সমস্যার সূত্রপাত । অভিযোগ, শাহজাহান আলির জমির উপর দিয়ে ফয়জুল হকের পরিবার গাড়ি করে আলু বের করে নিয়ে যায় । কিন্তু ফয়জুল হকের সামনের জমির উপর দিয়ে শাহজাহান আলির পরিবার গাড়ি বোঝাই করে আলু নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ।
আরও অভিযোগ, এরপরেই আলু তোলা নিয়ে বিবাদকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার শাহজাহানের ভাইপো আজিজুল হককে ছুরি দিয়ে আঘাত করে ফয়জুল হকের পরিবার । তারপরেই দুই পরিবারের বিবাদ চরমে ওঠে । শাহজাহানের পরিবার ফয়জুল হকের পরিবারের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ । বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় । দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র ঝামেলার কারণে আহত হন আটজন ।
আত্মরক্ষার তাগিদে ফয়জুলের ভাই আব্দুল খালেক তাঁর রিভলবার থেকে গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ । গভীর রাতেই আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করে রাজগঞ্জ থানার পুলিশ । আব্দুল খালেক বলেন, "আমার বাড়িতে প্রচুর মানুষ চড়াও হয়েছিল । আমি আমার পরিবারের আত্মরক্ষার তাগিদে দুই রাউন্ড শূন্যে গুলি চালাই ।"
ওই পরিবারের সদস্য ফয়জুল হক অভিযোগ করেন, "জমির উপর দিয়ে আলু নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের বিবাদ । গতকাল রাতে আমার নাতনির উপর চড়াও হয় তারা । রাতে টিউশন পড়ে ফেরার পথে তার পথ আটকায় । তার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে । আমার বাড়িতে চড়াও হয় । বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করে । ওরা প্রথমে গুলি চালায় ৷ বাধ্য হয়ে আমার ভাই আত্মরক্ষার জন্য শূন্যে গুলি চালাতে বাধ্য হয় ৷"

আজিজুল ইসলাম বলেন, "আমি কয়েকদিন থেকেই হিমঘরে আলু ঢোকানোর জন্য বাইরে আছি । আমরা ছেলেরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না । সেই সুযোগে আমাদের বাড়িতে লুটপাট করে শাহজাহানের পরিবার । বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় । আমার বাবা আব্দুল খালেক আত্মরক্ষার তাগিদে গুলি চালায় । বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । আমাদের পরিবারের আহত হয়েছেন মহম্মদ রব্বানি, আজমির ইসলাম, আনারুল ইসলাম, সামসুল হক, লাবলি বেগম ।"
অন্যদিকে ওপর পরিবারের সদস্য শাহজাহান আলি বলেন, "আমরা কোনওরকম গুলি চালায়নি । এই এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমিতে আলুচাষ হয়েছে । আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা হয় আলু গাড়ি করে বের করতে একে অপরকে জমি ব্যবহার করতে দেবে । আমরা প্রথমে আলু বের করিনি । ওরাই আমাদের জমির ওপর দিয়ে আলু গাড়ি করে বের করে নিয়ে যায় । আমরা আলু বের করতে গেলেই আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয় ।"
তিনি আরও বলেন, "আমার ভাইপোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় । এরপরেই গ্রামের লোকেরা ক্ষেপে গিয়ে আক্রমণ করে ওদের বাড়িতে । নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে ভাঙচুর করে ৷ অথচ আমাদের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করছে । আমাদের বাড়ির তিনজন আজিমুল হক, রহমান আলি, তনিমা খাতুন আহত হয়েছেন ।"
জখম তনিমা বেগমের কথায়, "আমাদের আলু জমি থেকে গাড়ি করে বের করাকে কেন্দ্র করেই সমস্যা । আমাদের উপর গুলি চালিয়েছে ফয়জুল হলের পরিবার । আমরা শাস্তি চাই ওদের ।"