মালদা, 18 অগস্ট: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছয় জনের ৷ আশঙ্কাজনক আরও দুই ৷ শনিবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার গৌড়বঙ্গ স্টেশন সংলগ্ন কাটাগড় এলাকায় 12 নম্বর জাতীয় সড়কে ৷ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্থ এসইউভি ও লরিকে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত ৷
ঘটনাটি ঘটে গতকাল রাত 11টা নাগাদ ৷ একটি এসইউভিতে কালিয়াচক থেকে মালদার দিকে আসছিলেন সাত যুবক ৷ প্রত্যেকের বয়সই 20 বছরের নীচে ৷ গৌড়বঙ্গ স্টেশন সংলগ্ন কাটাগড় এলাকায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক ৷ গাড়িটি মারাত্মক গতিতে একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে ৷ এসইউভির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় ৷ লরিটিও জাতীয় সড়ক থেকে বামদিকে নেমে যায় ৷ সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই ছিল, এসইউভিতে থাকা এক যুবকের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে বাইরে ছিটকে পড়ে ৷ এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে একাধিক দেহাংশ ৷ খবর পেয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই যুবককে মালদা মেডিক্যালে পাঠায় ৷ পরে মৃতদেহগুলিও মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয় ৷ মেডিক্যালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন আহত দুই যুবকের একজনের আজ সকালে মৃত্যু হয়েছে ৷ আর একজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷
হতাহতরা সকলেই কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের আলিপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ৷ মৃত ছয় যুবকের মধ্যে পাঁচ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে ৷ মৃতরা হলেন সাকিউল শেখ (18), পারভেজ শেখ (18), নইম শেখ (17), বিসরু শেখ (17) এবং মাসিদুর শেখ (18) ৷ মৃত আর একজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি ৷
গতকাল রাতে মেডিক্যালে উপস্থিত এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ কাসিরুদ্দিন বলেন, "সেই সময় আমি মালদা শহরে ছিলাম ৷ এলাকা থেকে ফোনে আমাকে দুর্ঘটনার খবর দেওয়া হয় ৷ আমি ঘটনাস্থলে না গিয়ে মেডিক্যালে চলে আসি ৷ আমার সামনেই পাঁচটি মৃতদেহ আসে ৷ বাকি দুই আহতকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ ওরা কী করতে মালদা আসছিল, কেউ জানে না ৷ ওদের বাবা-মা’ও বলতে পারবেন না ৷ ওদের বন্ধুবান্ধবের কাছে বিষয়টি জানা যাবে ৷"
হতাহতদের মেডিক্যালে নিয়ে আসার পর দৃশ্যতই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্মী পরিমল দাসকে ৷ তিনি বলেন, "দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই ৷ দেখি, পাঁচজন সেখানেই মারা গিয়েছে ৷ এসইউভিটি একটি লরির পিছনে সজোরে ধাক্কা মেরেছিল ৷ একজনের মুণ্ডু দেহ থেকে আলাদা হয়ে বাইরে ফুটপাথে এসে পড়েছিল ৷ লরিটিও রাস্তার বামদিকে নেমে যায় ৷ এসইউভিতে ঠিক কতজন ছিল আমরা বলতে পারব না ৷"
খবর পেয়ে রাতেই মেডিক্যালে চলে আসেন আলিপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মহম্মদ এসরাউল শেখ ৷ তিনি বলেন, "ওই সাতজনের মধ্যে আমার এক ভাগনেও রয়েছে ৷ ও এখনও বেঁচে আছে ৷ বাড়িতে খবর যায়, ভাগনের দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই ৷ তখনও ওখানে তিনটি লাশ পড়ে ছিল ৷ মেডিক্যালে এসে দেখি আরও দুটি লাশ নিয়ে আসা হয়েছে ৷ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানি না ৷ তবে এরা মালদা শহরে আসছিল ৷ কী কারণে, এখনও জানা যায়নি ৷ এরা সবাই বন্ধুবান্ধব৷ পরে সমস্তটা জানা যাবে ৷"
ইংরেজবাজার থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷ দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি দুটিও বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ তবে লরির চালক ও খালাসির সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে ৷"