ক্যালিফোর্নিয়া, 19 মার্চ: আটলান্টিক মহাসাগরে তখন বিকেল ৷ নাসার তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা 6টার আশপাশে ৷ মহাকাশ থেকে প্যারাশুটে সমুদ্রের বুকে নেমে এল ড্রাগন ক্যাপসুল ৷ তাতে রয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর, রাশিয়ার মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ, নাসার নিক হেগ ৷ তাঁরা সবাই ক্রিউ-9 মিশনের সদস্য ৷ অবশেষে, ন'মাস মহাকাশে কাটিয়ে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা-বুচ ৷ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল ৷
বিজ্ঞানীরা এই অভিযান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৷ তাও প্রতিটা মুহূর্তে সঙ্গী ছিল উৎকণ্ঠা ৷ কারণ মহাকাশ অভিযান সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ ৷ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোনে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলছিলেন নাসার সিনিয়র বিজ্ঞানী বঙ্গসন্তান গৌতম চট্টপাধ্যায় ৷ এর আগে ইটিভি ভারতকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন 19 মার্চ ফিরবেন সুনীতা উইলিয়ামসরা ৷
নাসার এই সিনিয়র বিজ্ঞানীর কথায়, "আমরা জানতাম ওঁরা সুস্থভাবেই ফিরবে ৷ মহাকাশ অভিযানে সবসময়ই ঝুঁকি থাকে ৷ কখন কী ঘটে যায়, কিছু বলা যায় না ৷ তাঁরা যে ঠিকমতো পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছেন, এটা আমাদের সবার কাছে বিরাট আনন্দের খবর ৷ আমরা সবাই খুবই খুশি । নাসার নভশ্চররা মহাকাশে গিয়েছিলেন ৷ এর জন্য শুধু যে আমেরিকা, বা ভারতবাসী উদ্বিগ্ন ছিল, তা নয়, সারা বিশ্বের মানুষ দুশ্চিন্তায় ছিলেন ৷ বিজ্ঞান ও মহাকাশ অভিযান যে মানব সভ্যতাকে এক সূত্রে বেঁধেছে, সেটাই দেখাল । এটা ভেবে আমি খুব আনন্দিত ৷"
মহাকাশচারীদের শারীরিক পরিস্থিতি
গত বছরের 5 জুন আট দিনের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ৷ তাঁদের মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) থেকে যেতে হয় সুনীতা-বুচকে ৷ এরপর বারবার তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও তা কোনও না কোনও কারণে বাতিল হয়ে যায় ৷
মহাকাশ স্টেশনে সুনীতারা অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ভাসমান অবস্থায় ৷ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে ৷ দীর্ঘসময় আইএসএস-এ এভাবে থেকে যাওয়ায় তাঁদের শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা ৷ এই বিষয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা ৷
এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী গৌতম চট্টপাধ্যায়ের বক্তব্য, "মহাকাশে থাকতে থাকতে তাঁদের বোন ডেনসিটি (হাড়ের ঘনত্ব) কমে যায় ৷ শূন্য মাধ্যাকর্ষণে দীর্ঘ দিন ছিলেন তাঁরা ৷ তাই পেশির শক্তি কমে যায় ৷ তাই পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে ৷ আজ তাঁদের হিউস্টনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ এদিন ক্যাপসুল থেকে জাহাজে তোলার সময় সেখানে একটি চিকিৎসকের দল উপস্থিত ছিল ৷ সেখানে একবার শারীরিক সব পরীক্ষা হয়েছে ৷ এরপর হিউস্টনে নিয়ে গিয়ে আবারও পুরো শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে ৷ সেটা করা হয়েছে ৷ এবার এক-দু'দিনের মধ্যে তাঁরা বাড়ি চলে যাবেন ৷"
মহাকাশ অভিযানে গেলে মহাকাশচারীদের একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকে ৷ এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী গৌতম চট্টপাধ্যায় বলেন, "উৎকণ্ঠা ছিল ৷ তবে আমরা আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম ৷ আমরা জানি, কোনও মহাকাশচারী মহাকাশে গেলে তাঁদের সেই মানসিক প্রস্তুতি থাকে ৷ এক সপ্তাহের জন্য গেলে হয়তো আরও অনেক কিছু দিন সেখানে থাকতে হতে পারে ৷ এই স্পেসএক্স-এর মহাকাশযানে ফিরে আসার ব্যাপারটা পূর্বপরিকল্পিত ৷"