হিঙ্গলগঞ্জ, 9 এপ্রিল: দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে খেয়াঘাট । বিডিও থেকে পঞ্চায়েত, সকলের দুয়ারে বারবার বেহাল খেয়াঘাট মেরামতের আবেদন জানানো হয়েছে । অভিযোগ, তার পরেও হেলদোল নেই প্রশাসনের । বেহাল খেয়াঘাটের সুরাহা না-হওয়ায় অগত্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছেন গৌড়েশ্বর নদীর দু'পারের কয়েকশো বাসিন্দা ।
উত্তর 24 পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের 11 নম্বর খেয়াঘাটের এটাই রোজনামচা । প্রশাসন কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় যথারীতি ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের । তাঁদের আশঙ্কা, বেহাল খেয়াঘাটে ওঠানামা করতে গিয়ে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তাই প্রশাসনের উচিত বেহাল এই খেয়াঘাট দ্রুত মেরামত করা, বলছেন গ্রামবাসীরা । যদিও দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে গৌড়েশ্বর নদী । এই নদী ভাগ করেছে দুই পঞ্চায়েতকে । নদীর ওপারে রয়েছে বিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত । এপারে রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েত । প্রতিদিনই দুই পঞ্চায়েতের অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন স্যান্ডেলবিল 11 নম্বর খেয়াঘাট ধরে । অথচ, খেয়াঘাটের অবস্থা তথৈবচ ! কোনও কিছুই অবশিষ্ট নেই সেখানে । যার ফলে নৌকা পেরিয়ে বেহাল খেয়াঘাট ধরে নিত্য যাতায়াত করতে হচ্ছে খেজুরবেড়িয়া, বিশপুর, বাইলানি-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের । এতে জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে । অথচ,গ্রামবাসীদের নিত্য সমস্যার কথা জেনেও তা মেরামত করতে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ ।

নদী পারাপারের জন্য কয়েক বছর আগে রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের 11 নম্বর খেয়াঘাটে বাঁশের একটি জেটি তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু,সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই জেটির অস্তিত্ব আজ আর নেই । কয়েকটি জায়গায় আবার বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে । তার মধ্যেই চলছে ঝুঁকির যাতায়াত । গৌড়েশ্বর নদীর এপারে রয়েছে ব্যাংক, বিডিও অফিস, স্কুল, কলেজ-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান । দৈনন্দিন কাজে ওপারের বাসিন্দাদের প্রতিদিন গৌড়েশ্বর নদী পেরিয়ে এপারে আসতে হয় । কিন্তু, খেয়াঘাটের অস্তিত্ব না থাকায় আপাতত বাঁশের পাটাতন, ইলেকট্রনিক পোল, বালির বস্তা ফেলে তার উপর দিয়েই প্রাণ হাতে নিয়ে একপ্রকার যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের ।

এই পরিস্থিতিতে গৌড়েশ্বর নদীর এপারে একটি পাকা খেয়াঘাট নির্মাণের দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা । যদিও বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই দাবি তাঁরা অনেক আগেই স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কাছে করেছিলেন । প্রশাসনের দুয়ারে বেশ কয়েকবার আবেদনও জানিয়েছিলেন । কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই মেলেনি বলে অভিযোগ ।
ফলে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের । এই বিষয়ে রেবা মল্লিক নামে এক বাসিন্দা বলেন, "এই খেয়াঘাটের উপর নির্ভরশীল দু'পারের অসংখ্য মানুষ । অথচ বেহাল খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের । ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে । আমরা চাই, দ্রুত এই খেয়াঘাট মেরামত করা হোক । যাতে সমস্যার সুরাহা হয় ।"

একই সুর শোনা গিয়েছে আরতি সরদার এবং তপন মণ্ডল নামে আরও দুই গ্রামবাসীর গলাতেও । তাঁদের কথায়,"এপারে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশাসনিক ভবন রয়েছে । আছে স্কুল, কলেজও । অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ বহু সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন এখান থেকে । সমস্যা তো হচ্ছেই । সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও । দ্রুত প্রশাসন সমস্যার সমাধান করুক, সেটাই চাই আমরা ।"
এদিকে, সামনেই হাজারি কালী মেলার উৎসব রয়েছে । সেই সময় খেয়াঘাটে উপচে পড়বে ভিড় । তখন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা ।
অন্যদিকে এ নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "ইতিমধ্যে বিষয়টি এসডিও এবং ডিএম-কে জানানো হয়েছে । উন্নয়নমূলক বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে । এ বিষয়ে যা পদক্ষেপ নেওয়ার তা সেচ দফতরের আধিকারিকই নেবে । আমাদের তরফে যতটুকু করার তা করা হয়েছে ।"