কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর: নবান্ন কিংবা স্বাস্থ্য ভবন, বৈঠকে থাকতেই হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। বুধবার নিজেদের অবস্থান মঞ্চ থেকে এ কথাই স্পষ্ট করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের কথায়, 'অভিভাবক', মুখ্যমন্ত্রীকেই তাঁদের সঙ্গে বসতে হবে আলোচনায়। বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান, বিচার চাইতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু কোনও সদর্থক ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। কিন্তু সেটা রাজ্যের অভিভাবক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। সেই বৈঠক নবান্ন হোক কিংবা স্বাস্থ্য ভবন, যেখানে খুশি হতে পারে ৷
মঙ্গলবারের পর বুধবারও জুনিয়র চিকিৎসকদের আলোচনার বসার জন্য আবেদন জানানো হয় রাজ্য সরকারের তরফে ৷ এদিন সন্ধ্যা 6টায় জুনিয়র চিকিৎসকদের 12 থেকে 15 জনের প্রতিনিধিদলকে নবান্নে ডাকা হয়েছিল ৷ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব এবং মুখ্যসচিবের তরফে ইমেল করা হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ৷ কিন্তু তাতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা পাল্টা চারটি শর্ত দেন। প্রথমত, অন্তত 30 জনের প্রতিনিধিদল বৈঠকে থাকবে। দ্বিতীয়ত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে। চতুর্থত, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।
এর আগে বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, "রাত 3.45 মিনিট সিএমও-তে মেল করার সময় ? এর পিছনে রাজনীতি নেই তো ?" এর উত্তরে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সাফ জবাব, রোদ, ঝড়, জল মাথায় নিয়ে রাস্তায় বসে আছেন তাঁরা। তাঁদের কাছে দিন-রাত সমস্তটাই এক। বরং যাঁরা এর মধ্যে রাজনীতি দেখছেন, তাঁরাই আসলে রাজনীতি করছেন বলেই দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের।
তাঁদের বক্তব্য, "এখানে কোনও রাজনীতি ছিল না। আমরা দ্রুত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কাজে ফিরতে চাই। আর এই অবস্থায় রাত 3.49-এ মেল করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করা আমাদের কাছে একমাত্র এমার্জেন্সি বিষয় ছিল। যেভাবে আমরা ভোর চারটেতেও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যাই, সেভাবেই রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অচলাবস্থা কাটাতে ভোর চারটের সময় ছুটে গিয়েছিলাম আমরা।"
প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। যতক্ষণ না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। পাঁচ দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি, আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতা চিকিৎসকের বিচার। এছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য সচিবকে পদ থেকে সরাতে হবে ৷ পাশাপাশি, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি করেছেন তাঁরা। তারই সঙ্গে ডিসি নর্থ এবং ডিসি সেন্ট্রালের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি, রাজ্যের প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সুস্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।