ETV Bharat / state

ভালোবাসার টানে অবসরের 4 বছর পরেও স্বেচ্ছায় শ্রমদান গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয়ের - VOLUNTARY WORK BY RETIRED EMPLOYEE

স্কুলে একজন মাত্র গ্রুপ-ডি কর্মী থাকায় সমস্যা ৷ স্বেচ্ছায় কাজ করছেন সঞ্জয় নন্দী ৷ নেন না কোনও পারিশ্রমিক !

VOLUNTARY WORK BY RETIRED EMPLOYEE
ভালোবাসার টানে অবসরের 4 বছর পরেও স্বেচ্ছায় শ্রমদান গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয় নন্দীর ৷ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 30, 2025 at 9:05 PM IST

4 Min Read

চন্দননগর, 29 এপ্রিল: এসএসসি-র প্যানেল বাতিলের পর স্কুলগুলিতে গ্রুপ-সি ও ডি পদে কর্মী নিয়ে টানাপোড়েন চলছে রাজ্যজুড়ে ৷ জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষকে ৷ বহুক্ষেত্রে পড়াশোনার জন্য প্রাক্তন ছাত্ররা শিক্ষকতার কাজে এগিয়ে আসছেন ৷ কিন্তু, স্কুলের গ্রুপ-ডি’র কাজের জন্য কেউ এগিয়ে আসেন না ৷ কিন্তু, ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল চন্দননগর খলিসানী বিদ্যামন্দিরে ৷

2021 সালে এই স্কুল থেকে অবসর নিয়েছিলেন গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয় নন্দী (64) ৷ বাড়ি শ্রীরামপুর মাহেশের হিরণনগর কলোনিতে ৷ কিন্তু, অবসরের পরেও শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে চন্দননগর আসেন কাজ করতে ৷ পুরোটাই স্কুলের প্রতি ভালোবাসা থেকে ৷ তাই স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি ৷ তা-ও নাকি কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই ৷ যতদিন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন, ততদিন স্কুলে কাজ করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন ৷ এমন নয় যে, স্কুলে গ্রুপ-ডি’র অন্য কোনও কর্মী নেই ৷

ভালোবাসার টানে অবসরের 4 বছর পরেও স্বেচ্ছায় শ্রমদান গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয়ের (ইটিভি ভারত)

উল্লেখ্য, এই স্কুলে মোট সাড়ে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৷ আর স্কুলে দু’টি গ্রুপ-ডি’র পদ রয়েছে ৷ যার একটি খালি রয়েছে সঞ্জয় নন্দী অবসর নেওয়ার পর ৷ এত বড় স্কুলের দায়িত্ব একজনের কাঁধে ৷ মাত্র একজন ডি-গ্রুপ কর্মী থাকায় মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হতো ৷ স্কুলের ঘণ্টা বাজানো থেকে, জানালা-দরজা খোলা বন্ধ করা-সহ যাবতীয় কাজ করতে হতো একজনকেই ৷ আর সেই কর্মী না-এলে মাথায় হাত পড়ার জোগাড় হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৷

সেই সময় প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষকদের উপর সেই দায়িত্ব পড়ে যেত ৷ এই সমস্যার কথা জানার পর থেকেই নাকি সঞ্জয় নন্দী স্কুলের প্রতি ভালোবাসায় স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছেন ৷ সঞ্জয় নন্দী স্বেচ্ছায় কাজ করায় সুরাহা হয়েছে শিক্ষকদের ৷ অবসরের পর চার বছর ধরে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ৷

Voluntary Work by Retired Employee
অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ-ডি কর্মী সঞ্জয় নন্দী ৷ (নিজস্ব ছবি)

সঞ্জয় নন্দী বলেন, "আমি যখন এই স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম, তখন থেকেই স্কুলকে ভালোবেসে আসছি ৷ এখানকার স্কুলের ছাত্র থেকে শিক্ষক সকলের ব্যবহার খুব ভালো ৷ তাঁদের ভালোবাসার টানে আজও পড়ে আছি এই স্কুলে ৷ 1999 সালে এই স্কুলে প্রথম যোগ দিই ৷ 26 বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি ৷ বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের কথায় অবসর নেওয়ার পরেও, স্বেচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছি ৷ যতদিন শরীর সুস্থ থাকবে, ততদিন এভাবেই কাজ করে যাব ৷ স্কুলে অবসরের পরেও এ স্কুলে আসা নিয়ে অনেকে কথা বললেও, আমি কোনও গায়ে মাখি না ৷ আমার পরিবারের তরফেও কোনও বাধা নেই ৷ আমার যা পেনশন, সেই টাকায় চলে যায় ৷ অতিরিক্ত কোনও টাকা আমার প্রয়োজন নেই স্কুল থেকে ৷"

খলিসানী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শুভায়ন মিত্র বলেন, "এসএসসি প্যানেলের বাতিলের আগে থেকেই আমার স্কুলে গ্রুপ-সি পদে কোনও কর্মী নেই ৷ গ্রুপ-ডি পদে একজনই মাত্র সরকারি কর্মী রয়েছেন ৷ তার কখনও শারীরিক সমস্যা বা পারিবারিক সমস্যা হলে আমি এবং আমার শিক্ষকরাই গ্রুপ-ডি এর কাজ করি ৷ আমরা খুবই ভাগ্যবান 2021 সালে যিনি অবসর নিয়েছিলেন, তিনি গত চার বছর ধরে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন আমাদের স্কুলে ৷"

Voluntary Work by Retired Employee
চন্দননগরের খলিসানী বিদ্যামন্দির ৷ (নিজস্ব ছবি)

প্রধান শিক্ষকের দাবি, "তিনি স্কুলের প্রতি ভালোবাসা থেকে স্বেচ্ছায় প্রতিদিন আসেন ৷ তিনি বিনা পারিশ্রমিকে স্কুলের সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন । কোনও কিছু দিতে চাইলেও নিতে চান না ৷ তাঁর মতে পেনশনের টাকাটাই যথেষ্ট ৷ এত বড় মনের মানুষ আমি খুব কম দেখেছি ৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের স্ট্রং রুমের কাগজপত্র ও অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে, সবকিছুই করে দেন নির্দ্বিধায় ৷ সেই কারণেই তাঁর কাছে আমরা খুব কৃতজ্ঞ ৷ চার বছর ধরে তিনি এইভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন ৷ স্কুলের জিনিসপত্র যেমন, কাপ-ডিস থেকে স্ট্র্যাপলার, ফোঁড় সবই নখদর্পণে ৷ তাই খলিসানি বিদ্যামন্দিরে সঞ্জয় দা’র বিকল্প বা জুরি নেই ৷"

চন্দননগর, 29 এপ্রিল: এসএসসি-র প্যানেল বাতিলের পর স্কুলগুলিতে গ্রুপ-সি ও ডি পদে কর্মী নিয়ে টানাপোড়েন চলছে রাজ্যজুড়ে ৷ জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষকে ৷ বহুক্ষেত্রে পড়াশোনার জন্য প্রাক্তন ছাত্ররা শিক্ষকতার কাজে এগিয়ে আসছেন ৷ কিন্তু, স্কুলের গ্রুপ-ডি’র কাজের জন্য কেউ এগিয়ে আসেন না ৷ কিন্তু, ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল চন্দননগর খলিসানী বিদ্যামন্দিরে ৷

2021 সালে এই স্কুল থেকে অবসর নিয়েছিলেন গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয় নন্দী (64) ৷ বাড়ি শ্রীরামপুর মাহেশের হিরণনগর কলোনিতে ৷ কিন্তু, অবসরের পরেও শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে চন্দননগর আসেন কাজ করতে ৷ পুরোটাই স্কুলের প্রতি ভালোবাসা থেকে ৷ তাই স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি ৷ তা-ও নাকি কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই ৷ যতদিন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন, ততদিন স্কুলে কাজ করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন ৷ এমন নয় যে, স্কুলে গ্রুপ-ডি’র অন্য কোনও কর্মী নেই ৷

ভালোবাসার টানে অবসরের 4 বছর পরেও স্বেচ্ছায় শ্রমদান গ্রুপ-ডি’র কর্মী সঞ্জয়ের (ইটিভি ভারত)

উল্লেখ্য, এই স্কুলে মোট সাড়ে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৷ আর স্কুলে দু’টি গ্রুপ-ডি’র পদ রয়েছে ৷ যার একটি খালি রয়েছে সঞ্জয় নন্দী অবসর নেওয়ার পর ৷ এত বড় স্কুলের দায়িত্ব একজনের কাঁধে ৷ মাত্র একজন ডি-গ্রুপ কর্মী থাকায় মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হতো ৷ স্কুলের ঘণ্টা বাজানো থেকে, জানালা-দরজা খোলা বন্ধ করা-সহ যাবতীয় কাজ করতে হতো একজনকেই ৷ আর সেই কর্মী না-এলে মাথায় হাত পড়ার জোগাড় হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৷

সেই সময় প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষকদের উপর সেই দায়িত্ব পড়ে যেত ৷ এই সমস্যার কথা জানার পর থেকেই নাকি সঞ্জয় নন্দী স্কুলের প্রতি ভালোবাসায় স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছেন ৷ সঞ্জয় নন্দী স্বেচ্ছায় কাজ করায় সুরাহা হয়েছে শিক্ষকদের ৷ অবসরের পর চার বছর ধরে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ৷

Voluntary Work by Retired Employee
অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ-ডি কর্মী সঞ্জয় নন্দী ৷ (নিজস্ব ছবি)

সঞ্জয় নন্দী বলেন, "আমি যখন এই স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম, তখন থেকেই স্কুলকে ভালোবেসে আসছি ৷ এখানকার স্কুলের ছাত্র থেকে শিক্ষক সকলের ব্যবহার খুব ভালো ৷ তাঁদের ভালোবাসার টানে আজও পড়ে আছি এই স্কুলে ৷ 1999 সালে এই স্কুলে প্রথম যোগ দিই ৷ 26 বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি ৷ বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের কথায় অবসর নেওয়ার পরেও, স্বেচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছি ৷ যতদিন শরীর সুস্থ থাকবে, ততদিন এভাবেই কাজ করে যাব ৷ স্কুলে অবসরের পরেও এ স্কুলে আসা নিয়ে অনেকে কথা বললেও, আমি কোনও গায়ে মাখি না ৷ আমার পরিবারের তরফেও কোনও বাধা নেই ৷ আমার যা পেনশন, সেই টাকায় চলে যায় ৷ অতিরিক্ত কোনও টাকা আমার প্রয়োজন নেই স্কুল থেকে ৷"

খলিসানী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শুভায়ন মিত্র বলেন, "এসএসসি প্যানেলের বাতিলের আগে থেকেই আমার স্কুলে গ্রুপ-সি পদে কোনও কর্মী নেই ৷ গ্রুপ-ডি পদে একজনই মাত্র সরকারি কর্মী রয়েছেন ৷ তার কখনও শারীরিক সমস্যা বা পারিবারিক সমস্যা হলে আমি এবং আমার শিক্ষকরাই গ্রুপ-ডি এর কাজ করি ৷ আমরা খুবই ভাগ্যবান 2021 সালে যিনি অবসর নিয়েছিলেন, তিনি গত চার বছর ধরে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন আমাদের স্কুলে ৷"

Voluntary Work by Retired Employee
চন্দননগরের খলিসানী বিদ্যামন্দির ৷ (নিজস্ব ছবি)

প্রধান শিক্ষকের দাবি, "তিনি স্কুলের প্রতি ভালোবাসা থেকে স্বেচ্ছায় প্রতিদিন আসেন ৷ তিনি বিনা পারিশ্রমিকে স্কুলের সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন । কোনও কিছু দিতে চাইলেও নিতে চান না ৷ তাঁর মতে পেনশনের টাকাটাই যথেষ্ট ৷ এত বড় মনের মানুষ আমি খুব কম দেখেছি ৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের স্ট্রং রুমের কাগজপত্র ও অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে, সবকিছুই করে দেন নির্দ্বিধায় ৷ সেই কারণেই তাঁর কাছে আমরা খুব কৃতজ্ঞ ৷ চার বছর ধরে তিনি এইভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন ৷ স্কুলের জিনিসপত্র যেমন, কাপ-ডিস থেকে স্ট্র্যাপলার, ফোঁড় সবই নখদর্পণে ৷ তাই খলিসানি বিদ্যামন্দিরে সঞ্জয় দা’র বিকল্প বা জুরি নেই ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.