মথুরাপুর, 7 এপ্রিল: দোতলা স্কুল, স্কুলে ক্লাসরুমও রয়েছে পাঁচ থেকে ছ’টি ৷ কিন্তু, স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গুনে পাঁচজন ৷ আর শিক্ষকও মাত্র একজন ৷ এমনই দশা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুর 2 নম্বর ব্লকের পূর্ব জয়কৃষ্ণপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ৷ অভিযোগ, শিক্ষকের অভাবে এই স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা ৷
এমনকি বর্তমানে একমাত্র শিক্ষক কালীপদ মণ্ডলের বিরুদ্ধেও স্কুলে না-আসার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা ৷ তিনি নাকি মাসে 3-4 দিন স্কুলে আসেন ৷ তাই যে ক’জন পড়ুয়া রয়েছে, তাঁদেরও পঠনপাঠন লাটে উঠেছে বলে অভিযোগ ৷ উল্লেখ্য, 2011 সালে সুন্দরবন এলাকার পূর্ব জয়কৃষ্ণপুরে স্থানীয় বাচ্চাদের জন্য পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের জন্য চালু করা হয় এই জুনিয়র হাইস্কুল ৷
সেই সময় 50-60 জন পড়ুয়া নিয়ে স্কুল শুরু হয় ৷ শিক্ষকও ছিলেন বেশ কয়েকজন ৷ কিন্তু, 2013 সালে শিক্ষকের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় একজনে ৷ সেই থেকে পড়ুয়ার সংখ্যাও কমতে শুরু করে ৷ যা কমতে-কমতে মোট পাঁচজনে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ যার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে একটি ছাত্র এবং সপ্তম শ্রেণিতে চারজন ৷ বাকি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে কোনও পড়ুয়া নেই ৷
আর এর কারণ হিসেবে শিক্ষক না-থাকা ও যিনি রয়েছেন, তাঁর অনিয়মিত স্কুলে আসাকে দায়ী করেছেন অভিভাবক এবং স্থানীয়রা ৷ কেন কালীপদ মণ্ডল স্কুলে আসেন না, সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি নাকি জানিয়েছেন, স্কুলের নানা অফিসিয়াল কাজের জন্য তাঁকে সরকারি দফতরে ছুটতে হয় ৷ সেই কারণে সময় হয় না স্কুলে আসার ৷
এ নিয়ে স্কুলের অস্থায়ী কর্মী সবিতা ময়রা বলেন, "স্কুলে একজনই শিক্ষক আছেন ৷ উনি মাঝে মধ্যে আসেন ৷ স্কুলের পাশে যে বাড়ি আছে, ওখানে ফোন করে জানিয়ে দেন আসবেন কি না ৷ আমরা সেই মতো স্কুলে আসি ৷ কখনও বলে দেন, বাচ্চাদের খাবার দিয়ে ছেড়ে দিতে ৷ আর উনি মাঝেমধ্যে আসেন ৷ স্কুলে আর কোনও স্যার-ম্যাডাম নেই ৷"

স্থানীয় বাসিন্দা অতুল গায়েন বলেন, "স্কুলে একজন শিক্ষক ৷ তাও তিনি রোজ আসেন না ৷ ওই মাসে 3-4 দিন খুব বেশি হলে পাঁচদিন আসেন ৷ আমরা ওঁকে বলেছি স্কুলে পড়ুয়াদের আনতে কী করণীয় তা আমাদের বলতে ৷ শিক্ষক আনার জন্যও ব্যবস্থা নিতে বলেছি ৷ উনি তো স্কুলেই আসেন না ৷ নানা অজুহাত দেখান ৷ তাই এখানকার বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা অন্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন ৷"
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব জয়কৃষ্ণপুর জুনিয়র হাইস্কুলের একমাত্র শিক্ষক কালীপদ মণ্ডল ৷ তাঁর দাবি, "আমি রোজ স্কুলে আসি ৷ স্থানীয়রা কেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে বলছেন জানি না ৷ হয়তো ওঁদের আমার প্রতি কোনও ক্ষোভ আছে ৷ আর এই স্কুলের সব কাজ আমাকে করতে হয় ৷ এমনকি ঘণ্টাও আমি বাজাই ৷ একাধিকবার ব্লক অফিসে ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলার স্কুল শিক্ষা আধিকারিককে জানিয়েছি ৷ শিক্ষক নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা হয়নি ৷"

আর এ নিয়ে মথুরাপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রতিমা ভুঁইয়া বলেন, "আমি পূর্ব জয়কৃষ্ণপুর জুনিয়র হাইস্কুলের এই পরিস্থিতির কথা জানতাম না ৷ আপনাদের কাছেই শুনলাম ৷ পঞ্চায়েত সমিতির তরফ শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে পরিদর্শনে যাব ৷ কেন এই হাল, তা খতিয়ে দেখব ৷ সেই মতো বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতির সঙ্গে কথা বলে স্কুলটিকে যাতে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যায়, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই করব ৷"