কলকাতা, 29 এপ্রিল: প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নানা অছিলায় বেসরকারি বাসের থেকে ফাইনের নামে টাকা তুলছে ট্রাফিক পুলিশ । অভিযোগ করছেন একাধিক বাসমালিক । এমনকী এই বিষয়ে পরিবহণ দফতর থেকে শুরু করে লালবাজারে ট্রাফিক বিভাগকে জানানো হয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও কোনও কাজই হয়নি বলেই দাবি মালিকপক্ষের । তাই এবার এই জিনিস বন্ধ না হলে আন্দোলনের পথেই হাঁটতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনগুলি ।
তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা বেশ কয়েকবছর ধরে অত্যন্ত খারাপ । তার উপর 15 বছরের গেরোয় পড়ে বহু বাস বাতিল হয়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে ভাড়া বাড়েনি বাসের আর তারই মধ্যে গাড়ির কাগজপত্র থেকে শুরু করে জ্বালানি সবকিছুরই দাম বেড়েছে । তাই একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে ব্যবসা বজায় রাখা ।
তাঁদের দাবি, এই সবের মধ্যে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে পুলিশি হয়রানির জেরে । কখনও পলিউশান স্কোয়াড কিংবা আবার কখনও রেড স্কোয়াডের চাপে জরিমানার নামে টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে ।
সম্প্রতি ওয়েস্টবেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর সঙ্গে দুই ট্রাফিক পুলিশের বচসার ভিডিয়ো ভাইরাল হয় ৷ পরে জানা যায় যে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের রেড স্কোয়াড একটি গাড়িকে জরিমানা করে ৷ সেই নিয়েই বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রদীপনারায়াণ বসু ৷
প্রদীপনারায়ণ বসু জানান, ঘটনাটি বিটি রোডের রবীন্দ্রসেতুর কাছে ঘটে । অন্যান্য দিনের মতো ওই দিনও রেড স্কোয়াডের দু’জন পুলিশ আধিকারিক একটি বাসকে জরিমানা করে ৷ এই রুটে আগেও এই ধরনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল ৷ তাই মালিকরা বেশ কিছুদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন । ওইদিন এভাবেই একটি বাসকে জরিমানা করায়, তাঁরা ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের কাছে কারণ জানতে চান ৷ কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি ৷
তাঁর দাবি, ওই ঘটনার ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করার পরই হইচই পড়ে ৷ কলকাতার ডিসি (ট্রাফিক) তাঁকে ফোন করেন ৷ ওই ভিডিয়ো ডিলিট করে দেওয়ার অনুরোধ করেন ৷ ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলেও আশ্বাস দেন ওই পুলিশ আধিকারিক ৷ সেই আশ্বাস কার্যকরী না হলে ভবিষ্যতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাসমালিক সংগঠনের এই নেতা ৷
প্রদীপনারায়ণ বসুর দাবি, পলিউশান স্কোয়াড ও রেড স্কোয়াড যেভাবে টাকা তুলছে, তা একেরারে অনৈতিক । গাড়ির নথিপত্র না দেখে এরা নিজেদের ইচ্ছেমতো নো পার্কিং-এর কেস দিয়ে দিচ্ছে । ঠিক একইভাবে পলিউশান বিভাগ থেকে এসে আগে দেখা হয় যে নির্দিষ্ট একটি গাড়ির পলিউশনের কাগজপত্র ঠিক আছে কি না এবং গতি পরীক্ষা করে দেখা হয় যে সেই গাড়িতে দূষণের মাত্রা অনুমোদিত সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, তা যদি না হয় তাহলে বাসটিকে মেরামত করে আবারও 15 দিনের মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা করাতে বলা হয় । কিন্তু এখন আর নিয়মের তোয়াক্কা না করে গাড়িগুলোকে দাঁড় করিয়ে এলোপাথাড়ি পলিউশন ফেল বলে কেস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং বাস চালকদের থেকে জোর করে 500 টাকা করে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে ।
অন্যদিকে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভিত্তিহীন কিছু অভিযোগ দেখিয়ে পুলিশ ফাইন আদায় করছে । পুলিশের পক্ষ থেকে একতরফাভাবে গাড়ির উপর কেস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে । কারণ, যদি কোনও গাড়ির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেন, সেই ক্ষেত্রে প্রথম দু’পক্ষকে ডেকে একটা শুনানি হওয়া উচিত । কিন্তু এরা নিয়মের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে মামলা করছে ফাইন চাপিয়ে দিচ্ছে ।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন যে এই নিয়ে বহু বছর ধরে রাজ্য পরিবহণ দফতরের কাছে দরবার করা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি । এমনটাও দেখা গিয়েছে যে নির্দিষ্ট একটি দিনে যখন একটি বাস গ্যারেজে ছিল, সেই সময় ওই বাসের নামে কেস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
অন্যদিকে হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট বাস মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিখিলেশ মুখোপাধ্যায় জানান, গত সংগঠনের পক্ষ থেকে বারংবার চিঠি লেখা হয়েছে ৷ কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি । বাসমালিকরা যখন মৌখিকভাবে বিষয়টি ডিসি ট্রাফিক এর কাছে জানান, তখন ডিসি ট্রাফিক বাস মালিকদের সমস্ত সমস্যা জানিয়ে ইমেইল করতে বলেন ৷ কিন্তু সেই ইমেইল কিংবা চিঠির কোনও উত্তর মেলেনি ৷ সেটা গ্রিভান্স সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।
তিনি বলেন, ‘‘এরপরে বিষয়টি গ্রিভান্স সেলের কাছে গেলে, তারা অভিযোগকারী বাসমালিককে ডেকে পাঠান এবং একটি সুন্দর নাটক করে প্রথমে তাঁদেরকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখেন ৷ তারপরে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করাবেন বলে অনেকক্ষণ সময় নষ্ট করেন ৷ তারপর জানান যে সেই আধিকারিক কিংবা ডিসি ট্রাফিক কাজে ব্যস্ত, তাই অন্যদিন আসতে হবে । অনেক বছর ধরেই এই সব কাণ্ডকারখানা চলছিল ৷ কিন্তু সম্প্রতি পুলিশি পুলিশের এই টাকা তোলার বিষয়টি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরকমও দেখা গিয়েছে যে একেবারে সাদা জামা কাপড়ে কিছু ব্যক্তিকে প্রত্যেকটি মোড়ে বসিয়ে রাখা হয় ৷ যখন বাসগুলো চলে যায়, তখন তাঁরা সেই বাসের নম্বর টুকে রাখেন এবং সেই নম্বরে পরে একটি মিথ্যে কেস চলে যায় এবং জরিমানা করা হয় । জানা গিয়েছে যে স্থানীয় ট্রাফিক গার্ড থেকে এদের প্রতিদিনের কেসের কোটা বেঁধে দেওয়া হয় । তাই এই জুলুম যদি বন্ধ না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া বাস মালিকদের আর কোনও উপায় থাকবে না ।’’
বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক)-এর সঙ্গে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও এই প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত তাঁর থেকে কোনোরকম উত্তর মেলেনি ।