কুলতলি, 17 জুলাই: সুড়ঙ্গে শেষ নয় ৷ তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সাদ্দাম লস্করের একের পর এক ‘কীর্তি’ সামনে চলে আসছে ৷ চুল ব্যবসায়ীর সঙ্গে 12 লক্ষ টাকার প্রতারণা, জাল নোটের ব্যবসা, আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের অভিযোগও সামনে এসেছে দক্ষিণ 24 পরগনার কুলতলির বাসিন্দা এই ‘কীর্তিমানের’ বিরুদ্ধে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সাদ্দামের প্রতারণার জাল শুধু দক্ষিণ 24 পরগনাতে নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে রয়েছে ৷
কুলতলির পয়তার হাটের বাসিন্দা সাদ্দাম লস্করের বিরুদ্ধে সোনার মূর্তি বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল ৷ সেই অভিযোগের তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় পুলিশকে ৷ গুলিও চালানো হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে ৷ পরে সাদ্দামের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে ঘরের নীচে সুড়ঙ্গের হদিশ পায় পুলিশ ৷ সেই সুড়ঙ্গ বাড়ির অদূরে খালে গিয়ে মিশেছে ৷ পুলিশের অনুমান, ওই পথেই পালিয়েছে সাদ্দাম ৷
তাঁকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ৷ পাশাপাশি তদন্ত চলছে ৷ সেই তদন্তের সূত্র ধরেই সাদ্দামের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ সামনে এসেছে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, নদিয়ার তেহট্ট থানার কুস্তিয়া গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে 12 লক্ষ টাকার প্রতারণা করেন সাদ্দাম ৷
পুলিশ জানতে পেরেছে যে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাথার চুল সংগ্রহ করেন ফেরিওয়ালারা । রঞ্জিত তাঁদের থেকে সেই চুল কিনে দিল্লিতে সরবরাহ করেন । এক ফেরিওয়ালার থেকেই মাসখানেক আগে রঞ্জিত জানতে পারেন, কুলতলির বাসিন্দা এক চুল ব্যবসায়ী এক সঙ্গে অনেক পরিমাণে চুল বিক্রি করতে চান । কথাবার্তা আরও এগোনোর পর রঞ্জিত জানতে পারেন যে দু’শো কেজি বিক্রি হবে ৷ প্রায় ছ’হাজার টাকা কেজি দরে দু’শো কেজি চুলের দাম ধার্য হয় প্রায় 12 লক্ষ টাকা ।
এর পর কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে এলাকায় এসে চুল দেখে যান রঞ্জিত । প্রথম দিন ট্রেনে এসেছিলেন তাঁরা । দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে তাঁদের নামতে বলা হয় । সেখানেই অটো পাঠিয়ে দেন সাদ্দাম । অটোয় কিছুটা যাওয়ার পর এক জায়গায় তিনজন ব্যক্তি এসে তাঁদের চুলের বস্তা দেখেন ৷ তা দেখে ফিরে যান রঞ্জিতরা ৷ নগদে কেনা-বেচা হওয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত হওয়ায় পরে আবার দক্ষিণ বারাসতে আসেন রঞ্জিত ৷
গত 30 জুন নিজের গাড়িতেই আসেন রঞ্জিত । সঙ্গে আনেন নগদ প্রায় 12 লক্ষ টাকা । রঞ্জিত জানান, ওদের কথা মতো এবারও দক্ষিণ বারাসত পেরিয়ে আরও বেশ কিছুটা এগিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছান তাঁরা । ততক্ষণে রাত হয়েছে । আগের বার যাঁরা নিতে এসেছিলে, তাঁরাই অপেক্ষায় ছিলেন । কথাবার্তা চলতে চলতে গাড়ি থেকে তাঁদের নামিয়ে জনা পাঁচেক লোক ঘিরে ধরে । তাদের দু’জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল ৷ টাকা দিতে বলে তারা । পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে টাকা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান রঞ্জিতেরা । যাওয়ার পথে রঞ্জিতদের হাতে একটি মূর্তি ধরিয়ে দেয় ওই দুষ্কৃতীরা । বলে দেয়, কোনও কারণে পুলিশ ধরলে যেন বলে যে মূর্তি কিনতে এসেছিলেন ।
এছাড়া সাদ্দামের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার, জাল নোটের ব্যবসা করার অভিযোগও উঠেছে ৷ পুলিশ সবটাই খতিয়ে দেখছে ৷ পুলিশের মতে, সাদ্দাম ধরা পড়লেই স্পষ্ট হবে যে তাঁর ‘সাম্রাজ্যের’ জাল কতদূর বিস্তৃত ৷