নৈহাটি, 24 মার্চ: বরফ কারখানার পাইপলাইন লিক করে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস। ঝাঁঝালো গ্যাসের গন্ধে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অনেকেরই। বিপদ বুঝে ঘর ছেড়েছেন এলাকাবাসী। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার নৈহাটির রাজেন্দ্রপুর এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল ও পুলিশ বাহিনী। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। সকাল থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টাও করছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মামুদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজেন্দ্রপুরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যেই 1988 সালে গড়ে ওঠে ওই বরফ কারখানাটি।অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঝেমধ্যেই ওই বরফ কারখানা থেকে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস লিক হয়। এ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উল্টে, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন সেই কারখানা চালিয়ে আসছেন মালিকপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ তুলে জনবহুল এলাকায় ওই কারখানা বন্ধ করার দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তারই মধ্যে রবিবার রাত থেকে ফের ওই বরফ কারখানার পাইপলাইন থেকে অ্যামোনিয়ার বিষাক্ত গ্যাস লিক হতে শুরু করে।
ক্রমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত গ্যাস। রাতে ঘুমের মধ্যেই বাসিন্দাদের শিয়রে উপস্থিত হয় বিপদ ৷ অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধে ঘুম ভেঙে যায়। অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়তে থাকেন। খবর পেয়ে সোমবার সকালে নৈহাটি দমকল কেন্দ্র থেকে দু'টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আসে শিবদাসপুর থানার পুলিশও। দমকল কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্যাস লিক হওয়ার কেন্দ্রস্থল খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে প্রথমে দমকল কর্মীদেরও কাজ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। পরে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দমকল কর্মীরা অ্যামোনিয়া গ্যাস লিকের উৎসস্থল খুঁজে বের করেন। তবে, চেষ্টা করেও গ্যাস লিক হওয়া বন্ধ করতে পারেননি তারা। সেই কারণে দমকলের তরফে খবর দেওয়া হয়েছে প্রযুক্তিবিদদের। তারা এসেই ওই পাইপলাইনের গ্যাসের লিক মেরামত করবেন বলে জানা গিয়েছে।
এই বিষয়ে দমকলের এক আধিকারিক বলেন, "এখানে এসে জানতে পারলাম রবিবার রাত থেকেই নাকি বরফ কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস লিক করছে ৷ অথচ, আমাদের খবর দেওয়া হয়েছে সোমবার সকালে। পাইপলাইনের যেখান থেকে ছিদ্র হয়ে এই বিষাক্ত গ্যাস বেরচ্ছে তা আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। কিন্তু, আমাদের পক্ষে সেই পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করা সম্ভব নয়। তাই, প্রযুক্তিবিদদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ওই কারখানার অনুমতির কাগজপত্র কিংবা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।"
এদিকে, বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তিনি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। এই বিষয়ে বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, "বরফ কারখানার সঠিক কাগজপত্র না থাকলে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ ও দমকল যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কারখানার পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামতের চেষ্টা করছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।"