কলকাতা, 26 এপ্রিল: পাকিস্তানের হাতে বন্দি বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে ফেরাতে পদক্ষেপ করুক রাজ্য সরকার ও রাজভবন । শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি পাঠিয়ে এমনটাই দাবি করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ।
এদিন তিনি চিঠিতে লেখেন, "হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পিকে সাউকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কবল থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং সম্ভাব্য সকল উপায় এবং পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের জন্য রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখেছি । ওই বিএসএফ কনস্টেবল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় পিকেটিং করার সময় ভুল করে প্রতিবেশী দেশে প্রবেশ করে যান, তখন থেকেই পাকিস্তান রেঞ্জার্স তাঁকে বন্দি করে রেখেছে । আমি ইতিমধ্যেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিকে এই বিষয়ে চিঠি লিখেছি । রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে তাঁর দ্রুত মুক্তির দাবি করছি ।"

কংগ্রেস নেতার আরও বক্তব্য, "পহেলগাঁও জঙ্গিহানার প্রেক্ষাপটে যখন সমগ্র দেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সেনা কনস্টেবল ঝন্টু আলি শেখ-এর শহিদ হওয়ার কারণে শোকের আবহ চলছে, তখন আমরা অবাক হয়েছি যে বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনায় একেবারেই নীরব । প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কোনও নেতাকে তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করতে দেখা যায়নি । কাউকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও দেখা যায়নি ।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘এটা থেকে কী আবার প্রমাণিত হয় না বাংলার বিজেপি একটি দেশবিরোধী শক্তি ? পাকিস্তানপন্থী শক্তি ? মাতৃভূমির জন্য লড়াই করা একজন বীর সন্তানকে হারিয়েছি, বিজেপি নেতৃত্ব কেন অন্তত প্রতীকী শ্রদ্ধা জানাতে আগ্রহী হয়নি ? এর থেকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের হত্যার প্রতি তাদের উদ্বেগ, মেরুকরণের একটি নোংরা খেলা ছাড়া অন্য কিছু নয় । আমরা বিজেপির দেশবিরোধী এবং বাঙালি-বিরোধী মানসিকতার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।"
শুভঙ্করের অভিযোগ, "পহেলগাঁও দুর্ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে জানা গেল যে গুলমার্গে বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবের 25তম বিবাহবার্ষিকী পালিত হয়েছে । অনুষ্ঠানে ভিভিআইপি-রা অংশগ্রহণ করেছিল । দুর্ভাগ্যবশত পর্যটক এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে নিশিকান্ত দুবের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল । জম্মু ও কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল এলাকায় কি এটি করা উপযুক্ত বলে মনে হয়?"

তাঁর আরও অভিযোগ, "কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। কেন নিশিকান্ত ডুবে বাড়িতে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল ? গোয়েন্দারা কেন বিফল হল । বিজেপি তো কেন্দ্র চালাচ্ছে । তাদের প্রতিনিধি কেন ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে বিজেপি গেল না ? তার জন্য আপনাদের পাকিস্তান চলে যাওয়া উচিত । এই ঘটনার জন্য আপনারা অপেক্ষা করছিলেন । 2026 সালে নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনারা রাজনীতি করছেন ।"
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল পহেলগাঁও-কাণ্ডে নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারীর পাসপোর্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে । এ বিষয়ে শুভঙ্করের বক্তব্য, "স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, এসবি, আইবি-র পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে । যদি ত্রুটিই থেকে থাকে, তাহলে কেন তৃণমূল কংগ্রেস আগে এই বিষয়ে সোচ্চার হয়নি ? বিতান অধিকারীর রাজনৈতিক পরিচয়ের পরে কেন এটি উত্থাপন করা হচ্ছে ? আমি মনে করি এটি ক্ষমতাসীন তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ ।"