ETV Bharat / state

সবেমাত্র চাঙ্গা হচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন, পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের - PAHALGAM TERRORIST ATTACK

পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার পর থেকেই পর্যটকরা সেখানে যেতে চাইছেন না ৷ বাতিল হচ্ছে বুকিং৷ এই নিয়ে পর্যটক সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত ৷

PAHALGAM TERRORIST ATTACK
সবেমাত্র চাঙ্গা হচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন, পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 24, 2025 at 9:53 PM IST

10 Min Read

কলকাতা, 24 এপ্রিল: সবেমাত্র চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল কাশ্মীরের পর্যটন । বিশেষ করে লকডাউনের পর এবং সংবিধানের 370 অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ায় পর আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন ৷ সেখানকার ব্যবসায়ীরা তো লাভের মুখ দেখছিলেনই ৷ পাশাপাশি অন্যান্য জায়গার পর্যটন সংস্থাগুলোও কাশ্মীরে ট্যুর প্ল্যান করে লাভ করছিল ৷ কিন্তু মঙ্গলবার পহেলগাঁও-এর জঙ্গি হামলা কাশ্মীরের পর্যটনকে একেবারে খাদের কিনারায় এনে ফেলল ৷ একই সঙ্গে ক্ষতির সম্মুখীন দেশ-বিদেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও ৷

ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও ৷ তাঁরা এখন পর্যটকদের প্রশ্ন সামলাতে সামলাতে নাজেহাল ৷ কেউ টাকা ফেরত চাইছেন, তো কেউ কাশ্মীরের বদলে অন্য কোনও জায়গায় যেতে চাইছেন ৷ এদিকে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে ৷ হোটেল বুকিংয়ের কাজ শেষ ৷ এই পরিস্থিতিতে কী হবে, তা ভেবেই মাথায় হাত বাংলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের ৷

সবেমাত্র চাঙ্গা হচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন, পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (ইটিভি ভারত)

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে বরাবরই বেশি ৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে তো বটেই বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন ভূস্বর্গে বেড়াতে ৷ এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল, তাই কাশ্মীরের আবহওয়াও বেড়ানোর জন্য একেবারে আদর্শ ৷ তাই সেখানে এখন পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি ৷ তাছাড়া বাঙালিরা মূলত গরম ও পুজোর ছুটিতেই বেশি বেড়াতে পছন্দ করেন ৷ গরমের সময় শীতপ্রধান কোনও জায়গাতেই যাওয়ার লক্ষ্যই বেশি থাকে বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে ৷ কাশ্মীর সেই কারণে এপ্রিল-মে মাসে পর্যটকদের যাওয়ার আগ্রহ বেশি থাকে ৷

কুন্ডু স্পেশালের পক্ষ থেকে সৌমিত্রকুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, 22 মার্চ থেকে 15 মে পর্যন্ত আটটি ট্যুরের আগাম বুকিং ছিল । এক একটি ট্যুরে কমবেশি 45 জন পর্যটক থাকেন । বেশ কয়েকবছর হল আবারও পর্যটকদের কাশ্মীরে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে । তাই চার থেকে পাঁচ মাস আগে থেকেই বুকিং আসা শুরু হয়ে যায় । ইতিমধ্যেই তিনটি ট্রিপ শেষ হয়েছে । চতুর্থ যে ট্রিপটি এখন কাশ্মীরে গিয়েছে, সেটা পহেলগাঁও বুধবারই শ্রীনগরে ফিরেছে । আর তারপরেই পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা হয় ৷

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি বলেন, ‘‘পর পর আরও তিনটি ট্যুর কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ছিল । পরবর্তী ট্যুর বাতিল করা হয়েছে এবং বুকিং-এর পুর অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগামী 1 মে যে দলটির যাওয়ার কথা ছিল, সেই দলের অনেকেই বুকিং বাতিল করেছেন । আগামী মাসে কাশ্মীরে যে পর পর ট্যুরগুলো রয়েছে, সেগুলি খুব সম্ভবত বাতিল করা হবে । যেহেতু এবার সরাসরি পর্যটকের উপর হামলা করা হয়েছে, তাই ভয় থেকেই মানুষ হয়তো এখন কাশ্মীর ভ্রমণ এড়িয়ে যাবেন । বলাই বাহুল্য যে এরফলে পর্যটন ব্যবসা এক বড় ধাক্কা খেল ।’’

সৌমিত্রকুমার কুন্ডু আরও জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও কাশ্মীরে ট্যুর হয়, যার বুকিং-এর বিজ্ঞাপন আর কয়দিনের মধ্যেই হয়তো প্রকাশ করা হত ৷ তবে আপাতত সেই বিষয়টি এখন স্থগিত রাখা হয়েছে ৷ তবে একেবারে বাতিল করা হয়নি । এর মধ্যে যদি ওখানকার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে ও পর্যটকদের জন্য আবারও অনুকূল হয়, তখন চিন্তা ভাবনা করা হবে ।

অন্যদিকে মেঘদূতম ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটানা বহু বছর কাশ্মীর অশান্ত পরিস্থিতি থাকার পর আবারও 2018 সালের পর থেকে আবার সেখানকার পর্যটন ফুলেফেঁপে উঠছিল । এমনকি কোভিড পরিস্থিতির পর বহু মানুষ সেখানে নিশ্চিন্তে বেড়াতে গিয়েছেন ৷ কারণ, যাঁরা কম টাকায় বিদেশের অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাঁদের অনেকেরই কিন্তু কাশ্মীর প্রথম পছন্দ ।’’

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও জানান, যেহেতু কাশ্মীর প্রায় সবটাই পর্যটনভিত্তিক ব্যবসার উপরে নির্ভরশীল সেই জন্য শুধুমাত্র এই পর্যটন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য আরও ছোট বড় ব্যবসা ওখানে শেষ কয়েক বছর খুব ভালো আর্থিকভাবে খুব লাভজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এই ঘটনার পরে এক ধাক্কায় কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা এবং এই পর্যটন ব্যবসাকে ঘিরে অন্যান্য যে সমস্ত ছোট বড় ব্যবসাগুলি গড়ে উঠেছিল, সেগুলি একটা বিরাট ধাক্কা খাবে ।

তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধুমাত্র কাশ্মীরের পর্যটন ক্ষেত্রেই নয়, কোভিডের সময় সবথেকে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছিল পর্যটন সংস্থা ও পর্যটন বিভাগ ৷ তাই তাই এই বিভাগটি সবেমাত্র আবার পুনরায় নিজেদের স্থিতাবস্থা ফিরে পাচ্ছিল ৷ আর তারই মধ্যে এমন ঘটনা আবারও পর্যটন সংস্থাগুলিকে আর্থিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে দিল । ইতিমধ্যেই বহু মানুষ কাশ্মীরের বুকিং বাতিল করেছেন ।’’

গ্লোব অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও সিইও কৌশিক ঘোষ জানিয়েছেন, ট্রাভেল-ট্যুরিজম সংস্থাগুলির থেকে অনেক বেশি ধাক্কা খাবে, কাশ্মীর ট্যুরিজম সেক্টর ৷ কারণ, যারা এই গরমে ঠিক করেছেন যে কোথাও না কোথাও যাবেন পরিবারকে নিয়ে, তাঁরা কাশ্মীর না হোক অন্য কোথাও যাবেন । কিন্তু কাশ্মীর গত কয়েক বছরের যেভাবে আবার পর্যটন সংস্থার ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই দিক থেকে দেখতে গেলে শুধু দেশের মানুষই নন বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসছিলেন । এক কথায় বলতে গেলে কাশ্মীরের পর্যটন ক্ষেত্র আপাতত আবারও সংকুচিত হয়ে পড়ল ।

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরের যে সমস্ত জায়গায় মানুষজন মূলত ঘুরতে যান, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণের কেন্দ্র হল পেহেলগাঁও । এর আগে পেহেলগাঁওতে এই ধরনের ঘটনা কখনও হয়নি । তাই যাঁরা জীবনে একবার হলেও কাশ্মীরে ঘুরতে যেতে চান, তাঁরা পেহেলগাঁও-কে পর্যটকদের জন্য বেশ সুরক্ষিত বলেই মনে করতো । এই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত 100 থেকে 130টি মতো বুকিং বাতিল হয়েছে । এছাড়াও কর্পোরেটদের যে দল নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলিও বাতিল করা হয়েছে ।’’

পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির নিয়ামতপুরের পক্ষীরাজ ট্যুর অ্য়ান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার পিন্টু পাত্র বলেন, "মে মাসে আমাদের দু’টি কাশ্মীর ট্যুর রয়েছে । কিন্ত এই জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পর্যটকরা আতঙ্কিত । তারা কাশ্মীর যেতে চাইছেন না । বহু পর্যটক তাদের আগাম বুকিং বাতিল করছেন । মে মাসে দু’টি ট্যুরের জন্য কাশ্মীরে হোটেল ও গাড়ি বুকিং করা হয়ে গিয়েছিল । সেগুলি বাতিল করতে গেলে অনেক টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা ।"

জানা গিয়েছে, এবছরের শুরু থেকেই আসানসোলের বহু ট্রাভেল সংস্থা পর্যটকদের নিয়ে কাশ্মীর গিয়েছিলেন । অনেকের আগামীর পরিকল্পনাও ছিল । গত 22 এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার একদিন আগেই কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন 30 জনের একটি পর্যটক দল । টিভিতে এই ঘটনা দেখার পর সবাই শিউড়ে উঠেছেন ।

সালানপুরের রূপনারায়ণপুরের ‘শুভেচ্ছা ভ্রমণ’ সংস্থার ব্যবস্থাপকরা জানাচ্ছেন, জম্মু-কাশ্মীর সফরের মধ্যে পহেলগাঁওয়ে পৌঁছে গেলে মনে হতো সবচেয়ে সুরক্ষিত । কিন্তু এই অবস্থায় সব বদলে গেল । এখন আর কোনোমতেই কাশ্মীর যাওয়া সম্ভব হবে না । আগামীর সব বুকিং বাতিল করতে হবে ।

শিল্পাঞ্চলের আরও একটি পরিচিত ভ্রমণ সংস্থা ‘ট্রাভেল এক্স’ পর্যটকদের নিয়ে 14 এপ্রিল কাশ্মীর থেকে ফিরে এসেছে ।
ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, 2003 থেকে অন্তত 30 বার কাশ্মীর ভ্রমণে পর্যটকদের নিয়ে গিয়েছে তারা । আগামী দু'বছর তারা কোনোভাবেই কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা তারা করবে না । সবাই চাইছেন পরিস্থিতি দ্রুত বদল হোক ।

আরেকটি প্রতিষ্ঠিত ভ্রমণ সংস্থা অন্নপূর্ণা ট্রাভেলসের কর্ণধার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে ফোনে বলেন, "19 এপ্রিল আমরা পর্যটক দল নিয়ে ঘুরে এসেছি । আরও দু’টি ট্যুরের পরিকল্পনা ছিল । আপাতত তা বাতিল করতে হয়েছে । 2005 থেকে কাশ্মীরে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার সূত্রে সেখানকার সমস্ত রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি । তবে পর্যটকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হননি । কারণ, সাধারণ ধারণা ছিল উগ্রপন্থীরা সরকারি নিরাপত্তা বিভাগের উপরে হামলা চালালেও কখনোই পর্যটকদের ক্ষতি করে না । এবার সেই ধারণাও বদলে গেল । ভরসার জায়গাটা চলে গেল ।"

হুগলির চুঁচুড়ার এক ট্যুর সংস্থার কর্ণধার আলোক পাঠক জানান, কাশ্মীরে যে আঘাত হল, তাতে বহু পর্যটকই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন । অনেকেই কাশ্মীর টুর বাতিল করতে চাইছেন । মে জুন জুলাই মাসে ট্যুর ছিল । এমাসেই একটি ট্যুর বিচারপতিদের একটি গ্রুপ ছিল, তাঁরা বাতিল করে হিমাচলে দিকে চলে যাচ্ছেন । আগামিদিনে যদি প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সমস্ত ট্যুর বাতিল করতে হবে ।

আরেক ট্যুর সংস্থার কর্ণধার অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মে মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি ট্যুর ছিল । সব ক’টি ক্যানসেল হয়েছে । পুজোর বুকিং বাতিলের জন্য ফোন করছেন পর্যটকরা । সিকিম হিমাচল যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন । এই ট্যুরের ক্ষেত্রে 60 শতাংশ টাকা হোটেল ও গাড়ির মালিকদের অগ্রিম দিয়ে দিতে হয় । এখন যদি টাকা ফেরত দিতে হয়, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ব ।’’

হুগলির বৈঁচি থেকে একটি বাস পর্যটক নিয়ে সেই কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল একটি পর্যটন সংস্থার । আগামিকাল, শুক্রবার বিকেলে বাস ছাড়ার কথা ছিল বৈঁচি থেকে 50 জন পর্যটক নিয়ে । তার সব আয়োজন সারা হয়ে গিয়েছিল ।পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলায় পর্যটকদের নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই সব পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে । পর্যটন সংস্থার কর্ণধার অমিত দাস বলেন, ‘‘সরকার-সেনাবাহিনী যদি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে, তাহলে হয়তো যাওয়া সম্ভব । না হলে আপাতত কাশ্মীর ভ্রমণ বাতিল করতে হবে । কারণ, জেনেশুনে মানুষকে বিপদে ফেলা যাবে না ।’’

পর্যটক রমেন জয়ধর বলেন, ‘‘এর আগেও কাশ্মীর গিয়েছেন, তবে এই রকম ঘটনা শোনেননি । জঙ্গিরা এসে সরাসরি পর্যটকদের টার্গেট করে গুলি করে মারছে, ভাবলেও শিহরণ জাগে । ঘটনার পরই আমরা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি । তারা কী করে দেখা যাক ! এতগুলো মানুষের মৃত্যু মনের মধ্যে আতঙ্ক লাগছে ।’’

বর্ধমানে ট্রাভেল সংস্থার কর্ণধার রাজেন রানা বলেন, ‘‘মে মাস থেকে একাধিক কাশ্মীর ট্যুর ছিল । কিন্তু জঙ্গি হামলার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বন্ধ হয়ে যায় । এই পরিস্থিতিতে ট্যুর ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছি । তবে ইতিমধ্যেই আমাদের কাশ্মীরে গাড়ি হোটেল বুকিং করার জন্য পেমেন্ট করে দিতে হয়েছে । আমরা সেই টাকা ফেরত না পাওয়ায় পর্যটকদের সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে পারিনি ।’’

বর্ধমানের একটা ট্রাভেল সংস্থার কর্ণধার শান্তনু পাঁজা বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার কারণে কাশ্মীরের ছবিটা একদম বদলে গিয়েছে । শ্রীনগরও বন্ধ । সাধারণত সারাবছর ধরে কাশ্মীর ট্যুর চললেও ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পর্যটকেরা সাধারণত যেতে শুরু করে । তবে এপ্রিল মে মাসে সেখানে পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলক বেশি হয় । কারণ, এখন টিউলিপ টাইম । টিউলিপ ফুল ফোটে । সেই কারণে ভিড় হয় ।’’

তাঁর সংস্থা বড় হওয়ায় খুব একটা সংকটে পড়তে হচ্ছে না বলে শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন ৷ তিনি ইতিমধ্যেই পর্যটকদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন ৷ কিন্তু তিনিও বলছেন, ‘‘আমাদের চেয়েও বেশি ক্ষতি হচ্ছে কাশ্মীরীবাসীদের । এমনিতেই মাঝেমধ্যে জঙ্গি হামলার কারণে 20-25 বছর ধরে কাশ্মীর শেষ হয়ে যায় । পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । এখন সেখানকার রাস্তাঘাট ভালো । শান্তি ফিরেছিল । পর্যটনই সেখানে প্রধান ব্যবসা । এবারে সেখানে ব্যবসার টার্গেট ছিল তিন কোটি টাকা । গত মরশুমে 36 লক্ষ টাকা, তার আগের মরশুমে 26 লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছিল ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কাশ্মীরে ট্যুরিজম ছাড়া কিছু নেই । সেখানে কিছু মানুষের কাছে আপেলের বাগান আছে । সব শেষ হয়ে যাবে । কারণ, তাঁরা গাড়ি-ঘোড়া লোন করে কিনেছে । লোন নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেছে । ফলে বুকিং ক্যানসেল হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে সেখানকার সাধারণ মানুষ ।’’

কলকাতা, 24 এপ্রিল: সবেমাত্র চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল কাশ্মীরের পর্যটন । বিশেষ করে লকডাউনের পর এবং সংবিধানের 370 অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ায় পর আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন ৷ সেখানকার ব্যবসায়ীরা তো লাভের মুখ দেখছিলেনই ৷ পাশাপাশি অন্যান্য জায়গার পর্যটন সংস্থাগুলোও কাশ্মীরে ট্যুর প্ল্যান করে লাভ করছিল ৷ কিন্তু মঙ্গলবার পহেলগাঁও-এর জঙ্গি হামলা কাশ্মীরের পর্যটনকে একেবারে খাদের কিনারায় এনে ফেলল ৷ একই সঙ্গে ক্ষতির সম্মুখীন দেশ-বিদেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও ৷

ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও ৷ তাঁরা এখন পর্যটকদের প্রশ্ন সামলাতে সামলাতে নাজেহাল ৷ কেউ টাকা ফেরত চাইছেন, তো কেউ কাশ্মীরের বদলে অন্য কোনও জায়গায় যেতে চাইছেন ৷ এদিকে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে ৷ হোটেল বুকিংয়ের কাজ শেষ ৷ এই পরিস্থিতিতে কী হবে, তা ভেবেই মাথায় হাত বাংলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের ৷

সবেমাত্র চাঙ্গা হচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন, পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (ইটিভি ভারত)

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে বরাবরই বেশি ৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে তো বটেই বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন ভূস্বর্গে বেড়াতে ৷ এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল, তাই কাশ্মীরের আবহওয়াও বেড়ানোর জন্য একেবারে আদর্শ ৷ তাই সেখানে এখন পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি ৷ তাছাড়া বাঙালিরা মূলত গরম ও পুজোর ছুটিতেই বেশি বেড়াতে পছন্দ করেন ৷ গরমের সময় শীতপ্রধান কোনও জায়গাতেই যাওয়ার লক্ষ্যই বেশি থাকে বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে ৷ কাশ্মীর সেই কারণে এপ্রিল-মে মাসে পর্যটকদের যাওয়ার আগ্রহ বেশি থাকে ৷

কুন্ডু স্পেশালের পক্ষ থেকে সৌমিত্রকুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, 22 মার্চ থেকে 15 মে পর্যন্ত আটটি ট্যুরের আগাম বুকিং ছিল । এক একটি ট্যুরে কমবেশি 45 জন পর্যটক থাকেন । বেশ কয়েকবছর হল আবারও পর্যটকদের কাশ্মীরে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে । তাই চার থেকে পাঁচ মাস আগে থেকেই বুকিং আসা শুরু হয়ে যায় । ইতিমধ্যেই তিনটি ট্রিপ শেষ হয়েছে । চতুর্থ যে ট্রিপটি এখন কাশ্মীরে গিয়েছে, সেটা পহেলগাঁও বুধবারই শ্রীনগরে ফিরেছে । আর তারপরেই পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা হয় ৷

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি বলেন, ‘‘পর পর আরও তিনটি ট্যুর কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ছিল । পরবর্তী ট্যুর বাতিল করা হয়েছে এবং বুকিং-এর পুর অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগামী 1 মে যে দলটির যাওয়ার কথা ছিল, সেই দলের অনেকেই বুকিং বাতিল করেছেন । আগামী মাসে কাশ্মীরে যে পর পর ট্যুরগুলো রয়েছে, সেগুলি খুব সম্ভবত বাতিল করা হবে । যেহেতু এবার সরাসরি পর্যটকের উপর হামলা করা হয়েছে, তাই ভয় থেকেই মানুষ হয়তো এখন কাশ্মীর ভ্রমণ এড়িয়ে যাবেন । বলাই বাহুল্য যে এরফলে পর্যটন ব্যবসা এক বড় ধাক্কা খেল ।’’

সৌমিত্রকুমার কুন্ডু আরও জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও কাশ্মীরে ট্যুর হয়, যার বুকিং-এর বিজ্ঞাপন আর কয়দিনের মধ্যেই হয়তো প্রকাশ করা হত ৷ তবে আপাতত সেই বিষয়টি এখন স্থগিত রাখা হয়েছে ৷ তবে একেবারে বাতিল করা হয়নি । এর মধ্যে যদি ওখানকার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে ও পর্যটকদের জন্য আবারও অনুকূল হয়, তখন চিন্তা ভাবনা করা হবে ।

অন্যদিকে মেঘদূতম ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটানা বহু বছর কাশ্মীর অশান্ত পরিস্থিতি থাকার পর আবারও 2018 সালের পর থেকে আবার সেখানকার পর্যটন ফুলেফেঁপে উঠছিল । এমনকি কোভিড পরিস্থিতির পর বহু মানুষ সেখানে নিশ্চিন্তে বেড়াতে গিয়েছেন ৷ কারণ, যাঁরা কম টাকায় বিদেশের অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাঁদের অনেকেরই কিন্তু কাশ্মীর প্রথম পছন্দ ।’’

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও জানান, যেহেতু কাশ্মীর প্রায় সবটাই পর্যটনভিত্তিক ব্যবসার উপরে নির্ভরশীল সেই জন্য শুধুমাত্র এই পর্যটন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য আরও ছোট বড় ব্যবসা ওখানে শেষ কয়েক বছর খুব ভালো আর্থিকভাবে খুব লাভজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এই ঘটনার পরে এক ধাক্কায় কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা এবং এই পর্যটন ব্যবসাকে ঘিরে অন্যান্য যে সমস্ত ছোট বড় ব্যবসাগুলি গড়ে উঠেছিল, সেগুলি একটা বিরাট ধাক্কা খাবে ।

তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধুমাত্র কাশ্মীরের পর্যটন ক্ষেত্রেই নয়, কোভিডের সময় সবথেকে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছিল পর্যটন সংস্থা ও পর্যটন বিভাগ ৷ তাই তাই এই বিভাগটি সবেমাত্র আবার পুনরায় নিজেদের স্থিতাবস্থা ফিরে পাচ্ছিল ৷ আর তারই মধ্যে এমন ঘটনা আবারও পর্যটন সংস্থাগুলিকে আর্থিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে দিল । ইতিমধ্যেই বহু মানুষ কাশ্মীরের বুকিং বাতিল করেছেন ।’’

গ্লোব অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও সিইও কৌশিক ঘোষ জানিয়েছেন, ট্রাভেল-ট্যুরিজম সংস্থাগুলির থেকে অনেক বেশি ধাক্কা খাবে, কাশ্মীর ট্যুরিজম সেক্টর ৷ কারণ, যারা এই গরমে ঠিক করেছেন যে কোথাও না কোথাও যাবেন পরিবারকে নিয়ে, তাঁরা কাশ্মীর না হোক অন্য কোথাও যাবেন । কিন্তু কাশ্মীর গত কয়েক বছরের যেভাবে আবার পর্যটন সংস্থার ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই দিক থেকে দেখতে গেলে শুধু দেশের মানুষই নন বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসছিলেন । এক কথায় বলতে গেলে কাশ্মীরের পর্যটন ক্ষেত্র আপাতত আবারও সংকুচিত হয়ে পড়ল ।

Pahalgam Terrorist Attack
পহেলগাঁও-র হামলায় মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরের যে সমস্ত জায়গায় মানুষজন মূলত ঘুরতে যান, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণের কেন্দ্র হল পেহেলগাঁও । এর আগে পেহেলগাঁওতে এই ধরনের ঘটনা কখনও হয়নি । তাই যাঁরা জীবনে একবার হলেও কাশ্মীরে ঘুরতে যেতে চান, তাঁরা পেহেলগাঁও-কে পর্যটকদের জন্য বেশ সুরক্ষিত বলেই মনে করতো । এই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত 100 থেকে 130টি মতো বুকিং বাতিল হয়েছে । এছাড়াও কর্পোরেটদের যে দল নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলিও বাতিল করা হয়েছে ।’’

পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির নিয়ামতপুরের পক্ষীরাজ ট্যুর অ্য়ান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার পিন্টু পাত্র বলেন, "মে মাসে আমাদের দু’টি কাশ্মীর ট্যুর রয়েছে । কিন্ত এই জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পর্যটকরা আতঙ্কিত । তারা কাশ্মীর যেতে চাইছেন না । বহু পর্যটক তাদের আগাম বুকিং বাতিল করছেন । মে মাসে দু’টি ট্যুরের জন্য কাশ্মীরে হোটেল ও গাড়ি বুকিং করা হয়ে গিয়েছিল । সেগুলি বাতিল করতে গেলে অনেক টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা ।"

জানা গিয়েছে, এবছরের শুরু থেকেই আসানসোলের বহু ট্রাভেল সংস্থা পর্যটকদের নিয়ে কাশ্মীর গিয়েছিলেন । অনেকের আগামীর পরিকল্পনাও ছিল । গত 22 এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার একদিন আগেই কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন 30 জনের একটি পর্যটক দল । টিভিতে এই ঘটনা দেখার পর সবাই শিউড়ে উঠেছেন ।

সালানপুরের রূপনারায়ণপুরের ‘শুভেচ্ছা ভ্রমণ’ সংস্থার ব্যবস্থাপকরা জানাচ্ছেন, জম্মু-কাশ্মীর সফরের মধ্যে পহেলগাঁওয়ে পৌঁছে গেলে মনে হতো সবচেয়ে সুরক্ষিত । কিন্তু এই অবস্থায় সব বদলে গেল । এখন আর কোনোমতেই কাশ্মীর যাওয়া সম্ভব হবে না । আগামীর সব বুকিং বাতিল করতে হবে ।

শিল্পাঞ্চলের আরও একটি পরিচিত ভ্রমণ সংস্থা ‘ট্রাভেল এক্স’ পর্যটকদের নিয়ে 14 এপ্রিল কাশ্মীর থেকে ফিরে এসেছে ।
ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, 2003 থেকে অন্তত 30 বার কাশ্মীর ভ্রমণে পর্যটকদের নিয়ে গিয়েছে তারা । আগামী দু'বছর তারা কোনোভাবেই কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা তারা করবে না । সবাই চাইছেন পরিস্থিতি দ্রুত বদল হোক ।

আরেকটি প্রতিষ্ঠিত ভ্রমণ সংস্থা অন্নপূর্ণা ট্রাভেলসের কর্ণধার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে ফোনে বলেন, "19 এপ্রিল আমরা পর্যটক দল নিয়ে ঘুরে এসেছি । আরও দু’টি ট্যুরের পরিকল্পনা ছিল । আপাতত তা বাতিল করতে হয়েছে । 2005 থেকে কাশ্মীরে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার সূত্রে সেখানকার সমস্ত রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি । তবে পর্যটকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হননি । কারণ, সাধারণ ধারণা ছিল উগ্রপন্থীরা সরকারি নিরাপত্তা বিভাগের উপরে হামলা চালালেও কখনোই পর্যটকদের ক্ষতি করে না । এবার সেই ধারণাও বদলে গেল । ভরসার জায়গাটা চলে গেল ।"

হুগলির চুঁচুড়ার এক ট্যুর সংস্থার কর্ণধার আলোক পাঠক জানান, কাশ্মীরে যে আঘাত হল, তাতে বহু পর্যটকই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন । অনেকেই কাশ্মীর টুর বাতিল করতে চাইছেন । মে জুন জুলাই মাসে ট্যুর ছিল । এমাসেই একটি ট্যুর বিচারপতিদের একটি গ্রুপ ছিল, তাঁরা বাতিল করে হিমাচলে দিকে চলে যাচ্ছেন । আগামিদিনে যদি প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সমস্ত ট্যুর বাতিল করতে হবে ।

আরেক ট্যুর সংস্থার কর্ণধার অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মে মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি ট্যুর ছিল । সব ক’টি ক্যানসেল হয়েছে । পুজোর বুকিং বাতিলের জন্য ফোন করছেন পর্যটকরা । সিকিম হিমাচল যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন । এই ট্যুরের ক্ষেত্রে 60 শতাংশ টাকা হোটেল ও গাড়ির মালিকদের অগ্রিম দিয়ে দিতে হয় । এখন যদি টাকা ফেরত দিতে হয়, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ব ।’’

হুগলির বৈঁচি থেকে একটি বাস পর্যটক নিয়ে সেই কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল একটি পর্যটন সংস্থার । আগামিকাল, শুক্রবার বিকেলে বাস ছাড়ার কথা ছিল বৈঁচি থেকে 50 জন পর্যটক নিয়ে । তার সব আয়োজন সারা হয়ে গিয়েছিল ।পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলায় পর্যটকদের নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই সব পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে । পর্যটন সংস্থার কর্ণধার অমিত দাস বলেন, ‘‘সরকার-সেনাবাহিনী যদি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে, তাহলে হয়তো যাওয়া সম্ভব । না হলে আপাতত কাশ্মীর ভ্রমণ বাতিল করতে হবে । কারণ, জেনেশুনে মানুষকে বিপদে ফেলা যাবে না ।’’

পর্যটক রমেন জয়ধর বলেন, ‘‘এর আগেও কাশ্মীর গিয়েছেন, তবে এই রকম ঘটনা শোনেননি । জঙ্গিরা এসে সরাসরি পর্যটকদের টার্গেট করে গুলি করে মারছে, ভাবলেও শিহরণ জাগে । ঘটনার পরই আমরা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি । তারা কী করে দেখা যাক ! এতগুলো মানুষের মৃত্যু মনের মধ্যে আতঙ্ক লাগছে ।’’

বর্ধমানে ট্রাভেল সংস্থার কর্ণধার রাজেন রানা বলেন, ‘‘মে মাস থেকে একাধিক কাশ্মীর ট্যুর ছিল । কিন্তু জঙ্গি হামলার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বন্ধ হয়ে যায় । এই পরিস্থিতিতে ট্যুর ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছি । তবে ইতিমধ্যেই আমাদের কাশ্মীরে গাড়ি হোটেল বুকিং করার জন্য পেমেন্ট করে দিতে হয়েছে । আমরা সেই টাকা ফেরত না পাওয়ায় পর্যটকদের সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে পারিনি ।’’

বর্ধমানের একটা ট্রাভেল সংস্থার কর্ণধার শান্তনু পাঁজা বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার কারণে কাশ্মীরের ছবিটা একদম বদলে গিয়েছে । শ্রীনগরও বন্ধ । সাধারণত সারাবছর ধরে কাশ্মীর ট্যুর চললেও ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পর্যটকেরা সাধারণত যেতে শুরু করে । তবে এপ্রিল মে মাসে সেখানে পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলক বেশি হয় । কারণ, এখন টিউলিপ টাইম । টিউলিপ ফুল ফোটে । সেই কারণে ভিড় হয় ।’’

তাঁর সংস্থা বড় হওয়ায় খুব একটা সংকটে পড়তে হচ্ছে না বলে শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন ৷ তিনি ইতিমধ্যেই পর্যটকদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন ৷ কিন্তু তিনিও বলছেন, ‘‘আমাদের চেয়েও বেশি ক্ষতি হচ্ছে কাশ্মীরীবাসীদের । এমনিতেই মাঝেমধ্যে জঙ্গি হামলার কারণে 20-25 বছর ধরে কাশ্মীর শেষ হয়ে যায় । পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । এখন সেখানকার রাস্তাঘাট ভালো । শান্তি ফিরেছিল । পর্যটনই সেখানে প্রধান ব্যবসা । এবারে সেখানে ব্যবসার টার্গেট ছিল তিন কোটি টাকা । গত মরশুমে 36 লক্ষ টাকা, তার আগের মরশুমে 26 লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছিল ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কাশ্মীরে ট্যুরিজম ছাড়া কিছু নেই । সেখানে কিছু মানুষের কাছে আপেলের বাগান আছে । সব শেষ হয়ে যাবে । কারণ, তাঁরা গাড়ি-ঘোড়া লোন করে কিনেছে । লোন নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেছে । ফলে বুকিং ক্যানসেল হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে সেখানকার সাধারণ মানুষ ।’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.