শিলিগুড়ি, 9 সেপ্টেম্বর: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে 'থ্রেট কালচার' থেকে শুরু করে বেলাগাম দুর্নীতি, অনৈতিক কারবার, নম্বর হেরফের-সহ একাধিক অভিযোগে এবার কড়া পদক্ষেপ করল তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের রেশ ধরে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেখানে সরকারি আধিকারিক, হাউজ স্টাফ-সহ একাধিক পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে হুমকি, নম্বরে কারচুপি ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। টানা বিক্ষোভ আন্দোলন সংগঠিত হয়। এরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করে পদক্ষেপ করে হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কমিটিতে ছিলেন, হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক, ইএনটি-র বিভাগীয় প্রধান রাধেশ্যাম মাহাতো, প্যাথলজির বিভাগীয় প্রধান বিদ্যুৎকৃষ্ণ গোস্বামী, ফার্মাকোলজির বিভাগের ডিন অনুপমনাথ গুপ্তা ও গাইনোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক গৌতম মুখোপাধ্যায়। তিনদিনের মাথায় সোমবার বিকেলে ওই কমিটি তদন্তের রিপোর্ট জমা দেয়। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কড়া পদক্ষেপ করে কলেজ কাউন্সিল। জানা গিয়েছে, কলেজের নতুন ডিন হিসেবে নিযুক্ত হন ফার্মা ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান অনুপম নাথ গুপ্ত ও অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির আহ্বায়ক এবং স্টুডেন্ট অ্যাডমিশন সেলের নোডাল অফিসার করা হয় প্যাথোলজির বিভাগীয় প্রধান বিদ্যুৎকৃ্ষ্ণ গোস্বামীকে।
এছাড়াও 12 জন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে তদন্তে কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা গেল কর্তৃপক্ষকে। তিন জন গ্রেড-এ অফিসারকে এদিন থেকে ছুটিতে পাঠানো হয় ৷ তাঁরা হলেন প্রাক্তন ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, প্রাক্তণ সহকারি ডিন সুদীপ্ত শীল এবং নিউরো মেডিসিনের আরএমও নীলাব্জ্য ঘোষ । তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ডিরেক্টর অফ মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে। ততদিন তাঁরা ছুটিতে থাকবেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত তিন হাউজ স্টাফের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়ে তাঁদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তাঁরা হলেন সাহিন সরকার, সাহিনুল ইসলাম এবং ঋতুরম্ভ সরকার। এদিকে, পাঁচ কলেজ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে ব়্যাগিং-সহ একাধিক অভিযোগে তাঁদের ডি-কলিজিয়েট বা বহিষ্কার করে কাউন্সিল। তাঁরা হলেন, পার্ট 1-এর ছাত্র জয় লাকড়া, ঐশী ঘোষ এবং সৃজা কর্মকার । পাশাপাশি পার্ট 2-এর পড়ুয়া তীর্থঙ্কর রায় ও অরিত্র রায়কে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে । এছাড়া সোহম মণ্ডল নামে এক ইন্টার্নের বিরুদ্ধে মার্কশিট ও নম্বর কারচুপির অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানাবে কলেজ কাউন্সিল।
অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, "তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এদিন কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকারি আধিকারিক, হাউসস্টাফ এবং ইন্টার্নের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। তিন সরকারি গ্রুপ এ অফিসারদের সামরিক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের ব্যাপারে বাকি সিদ্ধান্ত মেডিকেল কাউন্সিল নেবে। বেশ কিছু জায়গায় আমার নামেও অভিযোগ এসেছে। এদিন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এবং কলেজ কাউন্সিলের রেজুলেশন ধরে সেই রিপোর্ট ও মেডিকেল কাউন্সেলে পাঠানো হবে।"
এবিষয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হিরন্ময় রায় বলেন, "কিছুটা হলেও আজ কলেজ পরিষ্কার হল। তদন্ত কমিটি যাওয়ার পদক্ষেপ করছে তাতে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে যাদের বিরুদ্ধে এখনও পদক্ষেপ করা হয়নি তাদের যাদের দ্রুত পদক্ষেপ করা হয় আমরা সেই আশা রাখছি।"