শিলিগুড়ি, 21 জুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পর এবার বিরল অস্ত্রোপচার করে একরত্তির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের । জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা শিশুর প্রাণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁচালেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা । এবার সেই শিশুকে সুস্থ করে মায়ের কোলে ফেরানোর চিকিৎসা চলছে ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে শিশু মায়ের পেটে ভাসতে থাকে এবং মায়ের সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে শিশুর । কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ওই সমস্যা কাটয়ে জীবিত অবস্থায় শিশু জন্ম নিয়েছে । সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও এমন ঘটনা ঘটেছে । সেক্ষেত্রেও মা ও নবজাতক সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, 14 জুন সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন শিলিগুড়ি সংলগ্ন আশিঘরের বাসিন্দা দীপালী বর্মন রায় । তিনি 37 সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন । পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা দ্রুত সিজারের সিদ্ধান্ত নেন । ওইদিনই দুপুরে সিজার শুরু হয় । প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে চিকিৎসক তানিয়া দে, দেবলীনা ঘোষ ও দেবপ্রসাদ মণ্ডল ছিলেন । অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন চিকিৎসক অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় ও চিকিৎসক ঋচিক পাল ।

ড. সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "অ্যাবডোমেন ওপেন করতেই দেখি জরায়ু ছিঁড়ে সন্তান মায়ের পেটে ভাসছে এবং জীবিত রয়েছে । দীপালিদেবীর পেটে দেড় লিটার রক্ত জমে রয়েছে । আমরা দ্রুততার সঙ্গে শিশুকে পেটের থেকে বের করে আনি । পাশাপাশি জমে থাকা রক্তও বের করি । ক্ষতিগ্রস্ত ইউটেরাস বাদ দেওয়া হয় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দীপালিদেবীকে পাঁচ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয় । তাঁর অবস্থা কিছুটা সঙ্কটজনক থাকায় এইচডিইউতে রাখা হয় । তারপর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন । আড়াই কেজি ওজনের সদ্যোজাত কন্যাসন্তানেরও চিকিৎসা চলে শিশু বিভাগে । দু’জনেই এখন পুরোপুরি সুস্থ । শনিবার মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হতে পারে ।"
সাধারণত আগের সন্তান সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে জরায়ুর তলদেশ ছিঁড়ে গিয়ে শিশু বেরিয়ে আসে । আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথমবারেই 31 সপ্তাহের পর এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে । ছ’বছর আগে দীপালি বর্মন রায়ের সিজারিয়ান পদ্ধতিতে পুত্রসন্তান হয়েছে । দু’বছর আগে একটি কন্যাসন্তান হয়েছিল । তবে কিছুদিন পরেই শিশুটির মৃত্যু হয় । আগে সিজার হওয়ার কারণে দীপালিদেবীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে পারে ।
এদিন সদ্য মা দীপালি রায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, "পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল । বাড়ির লোক এখানে এনে ভর্তি করে । আমি এবং আমার সন্তান যে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে চলে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি । পরে যখনই শুনলাম, তারপর থেকে ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না ।"