ETV Bharat / state

জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা একরত্তির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের - NBMC SAVES NEW BORN LIFE

আপাতত শিশুকে সুস্থ করে মায়ের কোলে ফেরানোর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তাররা ৷

NBMC SAVES NEW BORN LIFE
জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা একরত্তির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : June 21, 2025 at 8:14 PM IST

3 Min Read

শিলিগুড়ি, 21 জুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পর এবার বিরল অস্ত্রোপচার করে একরত্তির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের । জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা শিশুর প্রাণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁচালেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা । এবার সেই শিশুকে সুস্থ করে মায়ের কোলে ফেরানোর চিকিৎসা চলছে ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে শিশু মায়ের পেটে ভাসতে থাকে এবং মায়ের সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে শিশুর । কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ওই সমস্যা কাটয়ে জীবিত অবস্থায় শিশু জন্ম নিয়েছে । সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও এমন ঘটনা ঘটেছে । সেক্ষেত্রেও মা ও নবজাতক সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, 14 জুন সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন শিলিগুড়ি সংলগ্ন আশিঘরের বাসিন্দা দীপালী বর্মন রায় । তিনি 37 সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন । পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা দ্রুত সিজারের সিদ্ধান্ত নেন । ওইদিনই দুপুরে সিজার শুরু হয় । প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে চিকিৎসক তানিয়া দে, দেবলীনা ঘোষ ও দেবপ্রসাদ মণ্ডল ছিলেন । অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন চিকিৎসক অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় ও চিকিৎসক ঋচিক পাল ।

NBMC Saves New Born Life
সেই শিশুকে কোলে নিয়ে বসে এক আত্মীয় (নিজস্ব ছবি)

ড. সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "অ্যাবডোমেন ওপেন করতেই দেখি জরায়ু ছিঁড়ে সন্তান মায়ের পেটে ভাসছে এবং জীবিত রয়েছে । দীপালিদেবীর পেটে দেড় লিটার রক্ত জমে রয়েছে । আমরা দ্রুততার সঙ্গে শিশুকে পেটের থেকে বের করে আনি । পাশাপাশি জমে থাকা রক্তও বের করি । ক্ষতিগ্রস্ত ইউটেরাস বাদ দেওয়া হয় ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘দীপালিদেবীকে পাঁচ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয় । তাঁর অবস্থা কিছুটা সঙ্কটজনক থাকায় এইচডিইউতে রাখা হয় । তারপর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন । আড়াই কেজি ওজনের সদ্যোজাত কন্যাসন্তানেরও চিকিৎসা চলে শিশু বিভাগে । দু’জনেই এখন পুরোপুরি সুস্থ । শনিবার মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হতে পারে ।"

সাধারণত আগের সন্তান সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে জরায়ুর তলদেশ ছিঁড়ে গিয়ে শিশু বেরিয়ে আসে । আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথমবারেই 31 সপ্তাহের পর এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে । ছ’বছর আগে দীপালি বর্মন রায়ের সিজারিয়ান পদ্ধতিতে পুত্রসন্তান হয়েছে । দু’বছর আগে একটি কন্যাসন্তান হয়েছিল । তবে কিছুদিন পরেই শিশুটির মৃত্যু হয় । আগে সিজার হওয়ার কারণে দীপালিদেবীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে পারে ।

এদিন সদ্য মা দীপালি রায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, "পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল । বাড়ির লোক এখানে এনে ভর্তি করে । আমি এবং আমার সন্তান যে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে চলে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি । পরে যখনই শুনলাম, তারপর থেকে ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না ।"

আরও পড়ুন -

  1. 7 ঘণ্টায় বিরল অস্ত্রোপচারে 'কাটা' হাত জুড়লেন আরজি করের চিকিৎসকরা
  2. উত্তরবঙ্গে বিরল অস্ত্রোপচার ! প্রাণে বাঁচলেন ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ আক্রান্ত যুবতী
  3. বিরল অস্ত্রোপচার, তিন মাসের শিশুর লম্বা লেজ কাটলেন ডাক্তাররা

শিলিগুড়ি, 21 জুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পর এবার বিরল অস্ত্রোপচার করে একরত্তির প্রাণ বাঁচিয়ে নজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের । জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা শিশুর প্রাণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁচালেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা । এবার সেই শিশুকে সুস্থ করে মায়ের কোলে ফেরানোর চিকিৎসা চলছে ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে শিশু মায়ের পেটে ভাসতে থাকে এবং মায়ের সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে শিশুর । কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ওই সমস্যা কাটয়ে জীবিত অবস্থায় শিশু জন্ম নিয়েছে । সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও এমন ঘটনা ঘটেছে । সেক্ষেত্রেও মা ও নবজাতক সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, 14 জুন সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন শিলিগুড়ি সংলগ্ন আশিঘরের বাসিন্দা দীপালী বর্মন রায় । তিনি 37 সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন । পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা দ্রুত সিজারের সিদ্ধান্ত নেন । ওইদিনই দুপুরে সিজার শুরু হয় । প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে চিকিৎসক তানিয়া দে, দেবলীনা ঘোষ ও দেবপ্রসাদ মণ্ডল ছিলেন । অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন চিকিৎসক অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় ও চিকিৎসক ঋচিক পাল ।

NBMC Saves New Born Life
সেই শিশুকে কোলে নিয়ে বসে এক আত্মীয় (নিজস্ব ছবি)

ড. সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "অ্যাবডোমেন ওপেন করতেই দেখি জরায়ু ছিঁড়ে সন্তান মায়ের পেটে ভাসছে এবং জীবিত রয়েছে । দীপালিদেবীর পেটে দেড় লিটার রক্ত জমে রয়েছে । আমরা দ্রুততার সঙ্গে শিশুকে পেটের থেকে বের করে আনি । পাশাপাশি জমে থাকা রক্তও বের করি । ক্ষতিগ্রস্ত ইউটেরাস বাদ দেওয়া হয় ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘দীপালিদেবীকে পাঁচ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয় । তাঁর অবস্থা কিছুটা সঙ্কটজনক থাকায় এইচডিইউতে রাখা হয় । তারপর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন । আড়াই কেজি ওজনের সদ্যোজাত কন্যাসন্তানেরও চিকিৎসা চলে শিশু বিভাগে । দু’জনেই এখন পুরোপুরি সুস্থ । শনিবার মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হতে পারে ।"

সাধারণত আগের সন্তান সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে জরায়ুর তলদেশ ছিঁড়ে গিয়ে শিশু বেরিয়ে আসে । আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথমবারেই 31 সপ্তাহের পর এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে । ছ’বছর আগে দীপালি বর্মন রায়ের সিজারিয়ান পদ্ধতিতে পুত্রসন্তান হয়েছে । দু’বছর আগে একটি কন্যাসন্তান হয়েছিল । তবে কিছুদিন পরেই শিশুটির মৃত্যু হয় । আগে সিজার হওয়ার কারণে দীপালিদেবীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে পারে ।

এদিন সদ্য মা দীপালি রায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, "পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল । বাড়ির লোক এখানে এনে ভর্তি করে । আমি এবং আমার সন্তান যে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে চলে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি । পরে যখনই শুনলাম, তারপর থেকে ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না ।"

আরও পড়ুন -

  1. 7 ঘণ্টায় বিরল অস্ত্রোপচারে 'কাটা' হাত জুড়লেন আরজি করের চিকিৎসকরা
  2. উত্তরবঙ্গে বিরল অস্ত্রোপচার ! প্রাণে বাঁচলেন ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ আক্রান্ত যুবতী
  3. বিরল অস্ত্রোপচার, তিন মাসের শিশুর লম্বা লেজ কাটলেন ডাক্তাররা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.