কলকাতা, 16 এপ্রিল: রাজ্যে ‘বাংলা দিবস’ পালনের ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রধান বিরোধীদল বিজেপির তা নিয়ে আপত্তি ছিল। বিজেপির তরফে 20 জুন দিনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি উঠেছে। কিন্তু বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে পয়লা বৈশাখকেই বাংলা দিবস হিসেবে মান্যতা দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত বছর নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে বড় আকারে উদযাপন সম্ভব না হলেও, এ বছর কলকাতা থেকে জেলা— সর্বত্র পালিত হয়েছে বাংলা দিবস। একদিকে নববর্ষ, অন্যদিকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গৌরব— এই দুই মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বর্ণময় সাংস্কৃতিক আবহ।
মঙ্গলবার রবীন্দ্রসদন এবং লাগোয়া একতারা মঞ্চে আয়োজিত হয় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আগামী বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। তখন বাংলা দিবস আরও বড় করে পালিত হবে জেলায় জেলায়।” তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাখ্যা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট-আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ হিসেবেই। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনে শাসক দল যে ভালো ফল করতে চলেছে মন্ত্রীর বক্তব্যে তাই উঠে এসেছে।
ভক্তিগীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য পান্নালাল ভট্টাচার্য পুরস্কার দেওয়া হয় সরস্বতী দেবীকে। চিত্রকলা বিভাগে অনন্য অবদানের জন্য অবনীন্দ্র পুরস্কার পান স্বপ্নেশ চৌধুরী। চিত্রকলা বিভাগে অনন্য অবদানের জন্য বিনোদ বিহারী পুরস্কারে সম্মানিত হন ডঃ দেবাশিস ভট্টাচার্য। রামকিঙ্কর বেইজ পুরস্কার পেলেন ভাস্কর্যশিল্পী দিলীপ কুমার সাহা।
বাংলার যাত্রা মঞ্চে নাট্যাভিনয়ে নিজস্ব অবদান রাখার জন্য বীণা দাশগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার পান অভিনেত্রী শর্মিলা পাল। লোকসংস্কৃতিতে নিরলস সাধনার জন্য লালন পুরস্কার দেওয়া হয় শচীন্দ্রলাল সরকারকে। সাঁওতালি সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু পুরস্কার পান গৌরচন্দ্র মুর্মু। উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা পুরস্কারে সম্মানিত হন আকুলবালা সরকার। বনবিবি পালা ও গ্রামীণ নারীলোকসংস্কৃতিতে কাজের জন্য সুধী প্রভান পুরস্কার পান অনুজা অধিকারী মণ্ডল।
বাংলা ভাষায় অনন্য গবেষণার জন্য রবিন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার পান রণবীর সমাদ্দার। কথাসাহিত্যে বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সন্মাত্রানন্দন। গদ্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় আনন্দ গোপাল ঘোষকে। কাব্যসাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হন রাহুল পুরকায়স্থ। বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। নজরুলগীতিতে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে নজরুল স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হন রামানুজ দাশগুপ্ত।
শিশুসাহিত্যে বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার পান অশোককুমার মিত্র। বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পুরস্কারে ভূষিত হন শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য। বাংলা কাব্যসাহিত্যে সরলতা ও চিন্তনভিত্তিক রচনার জন্য রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার পান কবি সুবোধ সরকার। বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার জন্য বিশেষ বিভাগে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার পান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও লেখক সুশীল সেনগুপ্ত।
এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মানিত করা হয়। নৃত্যে অবদানের জন্য উদয়শঙ্কর পুরস্কার পান পলি গুপ্ত। যন্ত্রসঙ্গীতে আলাউদ্দিন পুরস্কার পান পণ্ডিত তরুণ ভট্টাচার্য। উচ্চাঙ্গসংগীতে গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার দেওয়া হয় বিদুষী ডালিয়া রাহুতকে। কন্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীতে সৃজনশীল জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ পুরস্কার পান পণ্ডিত কুমার বোস।
প্রসঙ্গত, বাংলা দিবস পালনের এই মঞ্চে ইন্দ্রনীল সেঞ্চ ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু , বিশিষ্ট কবি, জয় গোস্বামী-সহ আরও অনেকে। পুরস্কার বিতরণ ছাড়াও বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা বাংলার সংস্কৃতি ও পরম্পরা সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তুলে ধরেন এখানে।