কলকাতা, 3 অগস্ট: ব্রিটিশ আমলে কলকাতার বড় অংশের নিকাশির জল গিয়ে পড়ত মহানগরের পূর্ব অংশের জলাভূমিতে । সেই জলাভূমি শুধুই নিকাশি জল ধারণ করত তেমনটা নয়, সেখানে মাছ চাষের মাধ্য়মে মানুষের আর্থিক উপার্জনের জায়গা ছিল ও লাগোয়া কৃষিকাজে সেই জল ব্যবহার হতো । জলাভূমি ঘিরে যে বিরাট সবুজের আচ্ছাদন ছিল, সেটাও সার্বিকভাবে কলকাতার পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলত ।
এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে কলকাতা পুরনিগমের নিকাশি বিভাগ । কলকাতার দক্ষিণ অংশে হবে পাঁচটি বৃহৎ জলাশয় বা রিটেনশন ট্যাঙ্ক, যা সংশ্লিষ্ট এলাকার নিকাশির জল ধারণ করবে । হবে মাছ চাষ । পাশাপশি জলাশয় ঘিরে হবে সবুজের আচ্ছাদন । আর এই সবটাই এলাকার পরিবেশে ফেলবে ইতিবাচক প্রভাব । যেমন প্রাকৃতিক উপায়ে জল-যন্ত্রণা মুক্তি ঘটবে, তেমনই কলকাতায় বেড়ে চলা দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে ।
কলকাতা পুরনিগমের সূত্রে খবর, এই পুরো প্রকল্পটি করতে খরচ হবে কম বেশি 100 কোটি টাকা । আর এই পুরো টাকাটাই আসছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিআরএমএ) থেকে ।
পুররনিগম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস আগে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরনিগমের নিকাশি দফতরের আধিকারিকরা । সেখানেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা বোঝানো হয় এনডিআরএমএ-র কর্মকর্তাদের । তারা এর বাস্তবিক দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী সময়ে তা পর্যালোচনা করেন । সম্প্রতি এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে এনডিআরএমএ । সেই বিষয়ে দিল্লির তরফে কলকাতা পুরনিগমকে জানানো হয়েছে । কলকাতা পুরনিগমের তরফে পুরো প্রকল্প অনুযায়ী জায়গা চিহ্নিতকরণ ও ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়েছে । আর কিছুদিনের মধ্যেই টেন্ডারের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে ।
ঠিক কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ?
এই বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক উপায়ে শহরের বিভিন্ন অংশের নিকাশির জল, বর্ষার জল ধারণ করা হবে । পরে সেই জল পাইপ লাইন মারফত খালে ফেলা হবে । কলকাতার মূলত জোকা, বেহালা, যাদবপুর এই সমস্ত সংযুক্ত এলাকায় পাঁচটি বিরাট জলাশয় খনন করা হবে । কয়েক বিঘা জমি নিয়েই এই জলাশয় তৈরি করা হবে । ধরে নেওয়া হোক এর গভীরতা হবে 10-15 ফুট । 6-10 ফুট জল থাকবে সব সময় । সেই জলাশয়ের আশপাশটা বাঁধানো হবে । একে ব্লু জোন বলা হচ্ছে ।
ওই আধিকারিক আরও জানান, এর চারপাশে বসানো হবে গাছ, যাকে গ্রিন জোন বলা হচ্ছে । এর মাঝেই থাকছে সুন্দর বসার জায়গা । থাকছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত আলো । ঠিক একটি ঝিলকে ঘিরে যেমন জলজ বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়, তার আশপাশের এলাকায় পরিবেশে যে ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, এখানেও তেমনটাই হবে ।
জলাশয়ে হবে মাছ চাষ । এলাকার চারপাশে বিভিন্ন নিকাশি নালার পাইপ জলাশয়ে যুক্ত করা হবে । 4-5 ফুট ফাঁকা অংশ বর্ষায় জল ভর্তি হয়ে যাবে । ফলে আশপাশে জমা জলের পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে দ্রুততার সঙ্গে । যতটুকু নামমাত্র জল থাকবে, সেটা নিকাশি নালার মাধ্যমেই পাম্পিং স্টেশন হয়ে বেরিয়ে যাবে ।
কলকাতা পুরনিগমের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘এরপরে আমরা এই জলাশয়ের সঙ্গে থাকা পাইপ লাইনের নব খুলে দেব, যাতে এই অতিরিক্ত 4-5 ফুট জল নিকাশি পাইপের মাধ্যমে পাম্পিং স্টেশন হয়ে বেরিয়ে যায় । ফলে বর্ষা বা নিকাশের অতিরিক্ত জল ধারণ হল । এলাকা জলমগ্ন হওয়া থেকে রক্ষাও পেল । আবার বায়ু থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণ ও অনেকটা কমলো । একে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় বলছি রিটেনশন ট্যাংক ।’’