নাজিরগঞ্জ (হাওড়া), 5 অগস্ট: নদী পথে যাত্রীদের যাতায়াতকে আরও সহজ, সুগম ও রোমাঞ্চকর করে তুলতে সম্প্রতি রাজ্য সরকার একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় কয়েকটি গঙ্গার ঘাটকে বিমান বন্দরের ধাঁচে আধুনিক টার্মিনাল গঙ্গার জেটি ঘাটে রূপান্তরিত করা হবে বলেই জানান হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
এই ঘাটগুলির মধ্যে অন্যতম হল কলকাতার মিনেলিয়াম পার্ক, হাওড়ার নাজিরগঞ্জ, হুগলির চুঁচুড়া, উত্তর 24 পরগনার পানিহাটি । প্রস্তাবিত এই ঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের প্রতীক্ষা বিশ্রামের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আধুনিক টিকেট কাউন্টার-সহ শৌচালয়, পানীয় জল, বিভিন্ন স্টল রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে । এখানে যাত্রীরা তাদের যাত্রাপথে ও গঙ্গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মানুষেরা নিভৃতে বসে তাদের অবসর সময় কাটাতে পারবেন ৷ এর সঙ্গেই থাকবে বিভিন্ন রকমারি খাবারের দোকান ।
তিন থেকে ছয় হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে তৈরি হবে এই টার্মিনাল । এতে থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া-সহ শৌচালয় । প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই পাঁচটি ঘাটকে আধুনিকরণ করতে প্রায় 200 কোটি টাকা খরচ হতে পারে ৷ এই পাঁচটি ঘাটের মধ্যে নাজিরগঞ্জ ফেরি ঘাটও রয়েছে ।
গঙ্গার দু’পাড়ে 44টি ঘাটের সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার । প্রতিটি ঘাটের জন্য 15-16 কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে জানা গিয়েছে । বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যেই দু’টি প্রকল্প রূপায়িত হবে। ইতিমধ্যে গঙ্গার দু’পাড়ে হাওড়া হুগলি এবং উত্তর 24 পরগনার বিভিন্ন ঘাটে নতুন ভাসমান জেটি তৈরি করা হয়েছে। পানিহাটি, ব্যারাকপুরের ধোবি ঘাট, মনিরামপুর, নবাবগঞ্জ, নৈহাটি প্রভৃতি ঘাটে ভিড় বাড়ছে দিনে দিনে । ঘাটের সৌন্দর্যায়ন ও সব জায়গায় জলযান আরও নিয়মিত হলে বহু মানুষ বিকল্প হিসেবে তা বেছে নেবেন বলে আশাবাদী দফতর।
এই খবরে তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে চলা নাজিরগঞ্জ ঘাটের এখানকার সাধারণ যাত্রীরা খুবই খুশি । যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে বলেই তারা মনে করছেন। বর্তমানে এই ঘাটে মহিলাদের শৌচালয়ের একটা সমস্যা আছে, এছাড়া রোদ-বৃষ্টির সময় দাঁড়াবার জায়গা থাকে না। তাই তারা মনে করছেন রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতে সকলেরই সুবিধা হবে। যদিও, আধুনিক হওয়ার কারণে ফেরি যাতায়াতের ভাড়া বৃদ্ধি হলে যাত্রীদের উপরে চাপ তৈরি হবে বলেও অভিমত যাত্রীদের।
এই নাজিরগঞ্জ থেকে কলকাতার মেটিয়াব্রুজ, হাওড়া, বাগবাজার লঞ্চ ঘাট ফেরি পরিষেবা চালু আছে । প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, এখন ঘাটগুলিতে সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। টার্মিনাল তৈরির জায়গা নির্দিষ্ট করে প্রকল্পের বিস্তারিত খুঁটিনাটি সহ পরিকল্পনার রিপোর্ট দ্রুত চূড়ান্ত করে নেওয়া হবে। প্রস্তাবিত টার্মিনালে যাত্রীদের প্রতীক্ষা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টিকিট কাউন্টার, টয়লেট সহ যাবতীয় সুবিধা থাকবে । মিলবে একাধিক স্টলে কেনাকাটার সুযোগ, পর্যাপ্ত পানীয় জল ।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, টার্মিনাল তৈরির জন্য এই পাঁচটি ঘাটকে বেছে নেওয়ার কারণ, এসব জায়গায় লঞ্চ ধরতে কাজের দিনগুলিতে রীতিমতো ভিড় হয় । একটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার পরও বহু যাত্রীকে ঘাটেই অপেক্ষা করতে হয় পরের লঞ্চের জন্য । সেই জায়গায় বসা বা সময় কাটানোর কোনও ব্যবস্থা না থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদের । চড়া রোদ বা বৃষ্টির সময়ের ভোগান্তি তো আছেই। তাই টার্মিনাল তৈরির ক্ষেত্রে এই ঘাটগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ৷
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ঘাট পরিদর্শন করছেন দফতরের আধিকারিকরা । যাত্রীদের ভিড়-সহ অন্যান্য গুরুত্ব বিচার করে পাঁচটি ঘাটকে বেছে নেওয়া হয়েছে টার্মিনাল তৈরির জন্য । মোট 44টি ঘাটের সৌন্দর্যায়নের অংশ হিসেবে পাড়ে বসার জায়গা, গঙ্গাস্নানের সুব্যবস্থা, বাচ্চাদের জন্য ছোট পার্ক তৈরি হবে। গঙ্গায় বানের শক্তি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ঘাটে ভাঙন ধরেছে। সেই কথা মাথায় রেখে জলপথ পরিবহণ দফতর আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে তৎপর বলে দাবি সরকারি কর্তাদের ।