নৈহাটি, 13 এপ্রিল: মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া ! নববর্ষের শুরুতেই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাতে উপহার হিসেবে কৃষ্ণ পাথরে তৈরি বড়মার 'ছোট মূর্তি' তুলে দেবে নৈহাটি বড় কালী পুজো সমিতি । সেই পাথরের মূর্তি তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই বড়মার 'ছোট মূর্তি' হাতে পেয়ে যাবে মন্দির কমিটি। তারপর সাংসদ এবং বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে সেই মূর্তিটি পৌঁছে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ।
এ জন্য শুভদিন হিসেবে বাংলা নববর্ষকেই বেছে নিয়েছে নৈহাটি বড়মা মন্দির কমিটি । তাই, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নববর্ষের গোড়াতেই কৃষ্ণবর্ণের পাথরে তৈরি সেই ছোট মূর্তিটি তুলে দেওয়া হতে পারে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের হাতে। তবে, বড়মার সেই মূর্তি তুলে দেওয়ার আগে একদিকে যেমন মূর্তি শুদ্ধিকরণ করা হবে । অন্যদিকে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যবাসীর মঙ্গল কামনায় যজ্ঞও হবে মন্দিরে।

এই বিষয়ে মন্দির কমিটির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, "বাংলা নববর্ষের প্রথম দিকেই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে মূর্তিটি তুলে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে । এনিয়ে সাংসদ পার্থ ভৌমিক ও বিধায়ক সনৎ দে-র সঙ্গে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে । মুখ্যমন্ত্রীর হাতে বড়মার মূর্তি তুলে দেওয়ার আগে সেটি শুদ্ধিকরণ করা হবে । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যবাসীর মঙ্গল কামনায় যজ্ঞও হবে বড়মার মন্দিরে । মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে গর্বিত আমরা।"
গত বছর কালীপুজোর মাসে নৈহাটির বড়মার মন্দিরের পুজো দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে বিশাল আকারের বড়মার ছবি দিতে চেয়েছিল মন্দির কমিটি । কিন্তু সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর বাড়ি ছোট, তাই এত বড় ছবি নিতে পারবেন না। বড় কালী পুজো সমিতির কাছে মমতা বন্দোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন, বড় ছবি না-দিয়ে তাঁকে যেন বড়মার কোনও 'ছোট মূর্তি' উপহার হিসেবে দেওয়া হয় । যেটি তিনি বাড়িতে পুজো করবেন ।

মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে তাঁর পছন্দসই ছোট আকারের কৃষ্ণ পাথরে তৈরি বড়মার মূর্তি তুলে দিতে চলেছে নৈহাটি বড় কালী পুজো সমিতি । জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেপূরণ করতে শিল্পী শুভেন্দু সরকার দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে বড়মার এই ছোট মূর্তিটি তৈরি করছেন । তার কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে।বালেশ্বরী কালো পাথরে তৈরি মূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি ও চওড়া পাঁচ ইঞ্চি । চালচিত্রও তৈরি হয়েছে পাথর দিয়ে। মায়ের গায়ে অলংকার তৈরি করা হয়েছে পাথর খোদাই করে।
একুশ হাতের দীর্ঘদেহী এবং আজানুলম্বিত কেশ, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, দীঘল চোখ থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে তীব্র তেজ ! সোনায় মোড়া আলোকদ্যুতিময় নৈহাটির বড়মার সেই চাহনির সামনে যেন কুঁকড়ে যেতে বাধ্য সারাজীবনের সমস্ত গরিমা। প্রতি বছর কালী পুজোর সময় মায়ের এই রূপ দর্শনের জন্য ভিড় করেন লক্ষাধিক ভক্ত । এছাড়াও প্রতিদিন নৈহাটির অরবিন্দ রোডে বড়মার মন্দিরে পুজো দিতে উপচে পড়ে ভিড় । শতবর্ষের কালী পুজোয় একুশ হাতের দীর্ঘদেহী বড়মার পুজো দিতে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
101তম বর্ষের কালী পুজোয় নৈহাটির বড়মার মন্দিরে আসার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । কিন্তু নিজের বাড়িতে পুজো থাকায় সেই সময় তিনি আসতে পারেননি । পরে, 26 নভেম্বর পুজো দিতে বড়মার মন্দিরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । পুজো দিয়ে বেরিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বড়মার নামে নৈহাটি ফেরিঘাট, মন্দিরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি-সহ একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । সেই প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে।তারই মধ্যে এবার রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ইচ্ছেপূরণ করতে কৃষ্ণ পাথরে তৈরি বড়মার ছোট মূর্তি উপহার দিতে চলেছে নৈহাটি মন্দির কমিটি।