কলকাতা, 21 এপ্রিল: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা নিয়ে সম্প্রতি অশান্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা ৷ মৃত্যু হয় তিনজনের ৷ ঘরছাড়া বহু পরিবার ৷ লুটপাট, ভাঙচুর কোনও ঘটনাই বাদ নেই ৷ এবার সেই সমস্ত ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাল কংগ্রেস ৷ সেই সঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্তদের চাকরি ও ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ৷
সোমবার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ৷ তিনি বলেন, "আমরা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছি । ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি । প্রতিটি ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিক সরকার । তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করুক । রাজ্য সরকার এই প্রসঙ্গে কোনও পদক্ষেপ না-করলে ওই পরিবারগুলিকে আর বাঁচানো যাবে না ।"
তিনি আরও বলেন, "সুতির যে ছেলেটি মারা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী-সহ পরিবারের সদস্যরা পথে বসতে চলেছে । আর্থিক সংস্থানের জন্য তাঁর স্ত্রীকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক ৷ একইভাবে, মৃত বাবা ও ছেলের পরিবারের সদস্যকেও চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক । এছাড়া যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাঁদের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, ছাগল-হাঁস-গরু চুরি হয়েছে, তার সবকিছুর তদন্ত করে হিসেব করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক সরকারের তরফে । কংগ্রেসের তরফেও তাঁদের পাশে থাকার যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।"
মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী । পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগও তোলেন তিনি । অধীরের দাবি, "আক্রান্তদের জোর করে আনা হচ্ছে সরকারের মুখ বাঁচানোর জন্য । অথচ, তাঁদের ঘরবাড়ি কিছুই নেই । যাঁরা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাঁদের ওপর পুলিশ অত্যাচার করছে ।"
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, এই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজন জড়িত । তাই তিনি কখনও বিএসএফ, কখনও বাংলাদেশ তত্ত্ব খাড়া করছেন । আপনি মুসলিম সমাজের জন্য বদনাম এনে দিয়েছেন । আজ সারা দেশে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুধুমাত্র আপনার পুলিশের উদাসীনতার জন্য ।"
সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অলকা লাম্বা আবার মুর্শিদাবাদের ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনের মদত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । এদিন তিনি দাবি করেন, "ঘটনাস্থলে আমিও গিয়েছিলাম । নিহত এবং আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি । যেটুকু বুঝেছি বাংলায় যে প্রবাদ চালু রয়েছে, 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়'; সেটাই ঘটেছে মুর্শিদাবাদে । ওখানে জঙ্গি সংগঠনের মদত থাকতে পারে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে । সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হোক ।"
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়েছে সিপিএমের তরফেও । সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ দলের বাকি নেতারা ইতিমধ্যেই নিহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন । রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে তিন নিহতের পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য অর্থ সাহায্য় সংগ্রহ করেছেন ৷