কলকাতা, 12 এপ্রিল: বছর দশেক আগের কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে নামে এক ব্যক্তি ছ’মাস দিদির মৃতদেহের সঙ্গে একঘরে বসবাস করেছিলেন ৷ এর পর প্রিয়জনের মৃতদেহ আগলে রাখার খবর সামনে এলেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে রবিনসন স্ট্রিট-কাণ্ডের প্রসঙ্গ ৷ শনিবার দেহ আগলে রাখার এমনই একটি ঘটনার খবর চাউড় হতেই ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে 2015 সালের জুন মাসে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা ৷
যদিও শনিবার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা রবিনসন স্ট্রিট-কাণ্ডের চেয়েও ভয়ঙ্কর ৷ কারণ, রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে ছ’মাস ধরে স্বাভাবিকভাবে মৃত দিদির দেহ আগলে বসেছিলেন ৷ কিন্তু শনিবার জানা গিয়েছে যে মাকে খুনের পর ছেলে একই ফ্ল্যাটে থেকেছেন প্রায় দেড়দিন ৷ তার পর ঘটনাটি সামনে এসেছে ৷
উত্তর 24 পরগনার রাজারহাটের অভিজাত বৈদিক ভিলেজের মধ্যে থাকা আবাসনে এই ঘটনাটি ঘটেছে ৷ স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের মালিক রবীন বিশ্বাস জানান, শনিবার সকালে ওই আবাসনের এক বাসিন্দা তাঁর কাছে আসেন ৷ ওই ব্যক্তি তাঁকে নিজের মায়ের কথা জানান ৷ মা নিজেই ছুরি দিয়ে নিজেকে মেরে ফেলেছেন বলে ওই ব্যক্তি দাবি করেন ৷ রবীনকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন ৷
রবীন জানান, তিনি ভয় পেয়ে যান ৷ তিনি বিষয়টি আশপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জানান ৷ তখন এই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয় ৷ এর পরই পুলিশকে খবর দেওয়া হয় ৷ রাজারহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে ৷ রক্ত তাজা নয় ৷ ফলে খুন যে বেশ কয়েকদিন আগে হয়েছে, তা স্পষ্ট হয় এর থেকেই ৷
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এর পর ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৷ ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, তাঁর নাম সৌমিক মজুমদার ৷ নিহত মহিলা তাঁর মা ৷ মায়ের নাম দেবযানী মজুমদার ৷ বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মা নিজেই নিজেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলেন ৷
যদিও পুলিশের সৌমিকের বক্তব্য বিশ্বাস হয়নি ৷ তাই তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ নানা প্রশ্নে জেরবার করা হয় সৌমিককে ৷ তাঁর কথায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় ৷ বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি জানান যে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মাকে গলায় ছুরি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন ৷ তার পর থেকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন ৷
পুলিশ আপাতত খতিয়ে দেখছে, খুনের কারণ কী ? মা-ছেলের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে বিবাদ চলছিল কি না ! সৌমিককে গ্রেফতার করেছে রাজারহাট থানার পুলিশ ৷ তাঁকে জেরা করে আরও প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা চলছে ৷ তাছাড়া দেবযানী মজুমদারের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে ৷
এদিকে সৌমিক-দেবযানীদের প্রতিবেশী প্রসূন মুখোপাধ্যায় জানান, মানসিক ভারসাম্য ঠিক ছিল না বলে মনে হয় ৷ কথাবার্তা স্বাভাবিক ছিল না ৷ বিশেষ কথা হতো না ৷ বিশদে বলা সম্ভব নয় ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে এই বিষয়টি উঠে এসেছে ৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, সৌমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন ৷ নতুন কোথায় কাজ পাচ্ছিলেন না ৷ সেই কারণে ক্রমশ মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন ৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, সেই নিয়ে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে ৷