আসানসোল, 7 জুন: জেলায় এখনও পর্যন্ত ফুড টেস্টিং ল্যাব নেই । জেলাবাসীর খাদ্যের সুরক্ষার কথা ভেবে নিয়ে আসা হয়েছে ভ্রাম্যমান ফুড টেস্টিং ল্যাবেরটরি । যার নাম দেওয়া হয়েছে 'ফুড সেফটি অন হুইলস' ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ ইউনুসের দাবি, এই ভ্রাম্যমান ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রাথমিকভাবে খাদ্যের গুণমান বিচার করতে সক্ষম । তাই সঠিক খাবার বিক্রয় হচ্ছে কি না, তা দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এই গাড়িতে থাকা ফুড সেফটি অফিসার ও অনান্য বিশেষজ্ঞরা খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করেন । কোথাও কিছু গরমিল দেখলেই আইনগত ব্যবস্থা নেন । কিন্তু আদৌ এই দাবি কতটা সত্য ?
জেলার বিজ্ঞানকর্মীরা জানাচ্ছেন, এইরকম কোনও গাড়ি তাঁদের চোখে পড়েনি । কার্যত রাস্তার ধারে ফুড স্টলে বিক্রি হচ্ছে বিপজ্জনক সব খাবার । যা কার্যত স্বাস্থ্যের পক্ষে চরম হানিকর ।
কীভাবে কাজ করে এই 'ফুড সেফটি অন হুইলস' ?
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এই গাড়ির বিষয়ে জানাতে গিয়ে বলেন, "এই গাড়িটিতে স্ক্রিন রয়েছে, মাইক রয়েছে । তার ফলে বিভিন্ন বাজার এলাকায় ঘুরে এই গাড়িটি ছবি দেখিয়ে ও মাইকের সাহায্যে বার্তা প্রচার করে মানুষজনকে সচেতন করে । কীভাবে সঠিক খাদ্য মানুষ গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে মানুষকে জানান দেওয়া হয় । পাশাপাশি এই গাড়িতে থাকেন একজন টেকনিশিয়ান এবং থাকেন একজন ফুড অফিসার । যদি হঠাৎ করে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ এই গাড়ির মধ্যে সেই নমুনা পরীক্ষা করার উপায় থাকছে ।"

ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (FSSI) থেকে এই অত্যাধুনিক এই গাড়িটি পেয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা । এই গাড়িতে খাদ্য পরীক্ষার জন্যে যাবতীয় সরঞ্জাম রয়েছে । একদিকে যেমন রয়েছে মাইক্রোওয়েভ, কম্পিউটার খাবার সংরক্ষণ করার জন্য ফ্রিজ, পাশাপাশি আগুন নেভানোর জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে ওই গাড়িতে । মূলত এই গাড়িতে দুধে ভেজাল মিশেছে কি না, কোন ভোজ্য তেল ব্যবহার হচ্ছে খাবারে, মিষ্টিতে নিষিদ্ধ রং মিশছে কি না, এ সব পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ ল্যবরেটরিতে ।

যদিও এই ভ্রাম্যমান গাড়িটি সমস্ত খাবার পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয় বলেই জেলার স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানা গিয়েছে । খাবারের গুণমান যাচাই করা, নমুনা সংগ্রহ করা, বা অভিযোগ খতিয়ে দেখার কাজ থাকে ফুড অফিসারের কাঁধে ৷ পাশাপাশি নজরদারির ক্ষেত্রে আরেক অন্তরায় হল পুরসভার খাদ্য পরীক্ষাগার ৷ ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগার এখানে নেই ৷ ফলে খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিষ খুঁজতে বেশির ভাগ নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠাতে হয় ৷
জেলায় নেই কোনও ফুড টেস্টিং ল্যাব
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরি হয়নি । যদিও আশার কথা শুনিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক । তিনি পশ্চিম বর্ধমান জেলায় একটি ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন । কিন্তু জমি বা সরকারি ভবন না পাওয়ার কারণে সেই কাজ এখনও পর্যন্ত করা যায়নি । যেহেতু ল্যাবরেটরি নেই, সেহেতু খাদ্যের গুণমান পরীক্ষার সামান্যতম কাজ হলেও এই ভ্রাম্যমান ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরির গাড়িটি করে থাকে ।
এতবড় জেলায় একটিই গাড়ি
পশ্চিম বর্ধমান জেলা বড় জেলা । দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা রয়েছে । আসানসোল ও দুর্গাপুর । শহর আসানসোল বা আসানসোল পুরনিগমে রয়েছে 106টি ওয়ার্ড । জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকানের সংখ্যাই প্রায় 60 হাজার । ফুটপাথে গজিয়ে ওঠা ফুড স্টল ধরলে সেটা লাখখানেক পেরিয়ে যাবে । প্রশ্ন উঠছে, এই এত খাবারের স্টল সঠিক খাবার বিক্রয় করছে কি না, তা নজরদারি চালানোর জন্য এই একটি গাড়ি যথেষ্ট কি?

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ ইউনুস বলেন, "হঠাৎ অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন বাজারে । সেখানে খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় । পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অভিযোগ এলেও দ্রুত এলাকায় পৌঁছে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয় । কিছু গরমিল দেখা গেলেই সেই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয় । জেলাশাসক আইনানুগ ব্যবস্থা নেন ।"
গাড়ির খোঁজ জানেন না বিজ্ঞানকর্মীরা
জেলায় যে এমন একটা গাড়ি রয়েছে, তার খোঁজ অনেকেই জানেন না । সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি বিজ্ঞানকর্মী, সমাজকর্মীদের কাছেও খোঁজ নেই জেলায় এরকম একটি খাদ্য সুরক্ষার জন্য গাড়ি রয়েছে ।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য তথা জেলার বিশিষ্ট বিজ্ঞানকর্মী কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, "রাস্তাঘাটে যে সমস্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক । কারণ আমাদের এই শহর দূষিত শহর । সেই দূষিত শহরের বাতাসে প্রচণ্ড বিষাক্ত কণা ঘুরে বেড়াচ্ছে । যা রাস্তার খোলা ফুড স্টলে যে সমস্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে তাতে মিশছে । আমরা বিভিন্নভাবে মানুষজনকে সচেতন করার চেষ্টা করি । বিভিন্ন স্কুলের বাইরে যে সমস্ত স্টল থাকে সেগুলিকে ঢেকে রাখার জন্য সচেতনতা চালাই । কিন্তু এই সমস্ত বিষাক্ত খাবার খেয়ে মানুষজনের স্বাস্থ্য খারাপের দিকে যাচ্ছে ।"

'ফুড সেফটি অন হুইলস' গাড়িটি নিয়ে কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এই ধরনের কোনও গাড়ির খোঁজ জানি না । যদি জেলায় এই ধরনের কোনও গাড়ি থাকে তাহলে তো ভালোই । আমরা সেই গাড়িটি নিয়ে মুভমেন্টও করতে পারব । বিভিন্ন জায়গায় যে বিষাক্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করতে এই গাড়িটি আমাদের সাহায্য করতে পারে । তাই জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব, বিষয়টি জনসমক্ষে আনুন এবং এই গাড়িটি সম্পর্কে আরও বেশি করে প্রচার করুন ।"