কলকাতা, 11 এপ্রিল: পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটা একদিন হারিয়ে গিয়েছিল মায়ের চোখের সামনে থেকে । মা মহাজনের বাড়ি পৌঁছে দেখলেন ছেলে নেই । তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় পনেরোটা বছর । একে একে সব আশা মুছে গিয়েছিল । গ্রাম বলেছিল, ছেলে আর বেঁচে নেই । গয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছেলেরও পিণ্ড দেন মা । চোখের জলেই শেষ হয়েছিল সেই অধ্যায় । কিন্তু এবার সেই 'মৃত' ছেলেই ফিরছে মায়ের কোলে । বৃদ্ধা মায়ের কাছে তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে চলেছে হ্যাম রেডিয়ো ৷
ভোজপুর জেলার দেভরি মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ঝাজী দেবী । সংসার চলত তাঁরই দিনমজুরির টাকায় । স্বামী মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান । এরপর একরত্তি সন্তান সাগর মণ্ডল হারিয়ে যায় । 70 ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ওর মৃত্যুর কথা গ্রামে সবাই বলতো । বলতো, পিণ্ড না-দিলে বিপদ হবে । আমি সেই কথায় বিশ্বাস করেই গয়ায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ছেলেরও পিণ্ড দিলাম ৷”

পাশে দাঁড়ানো বড় ছেলে প্রমোদ মণ্ডল জানালেন, “ছোট ভাইটার নাম সবাই ভুলেই গিয়েছিল । আমরা ভেবেছিলাম, সে আর নেই । মা শুধু ওর কথা ভাবতো । কেউ যদি বলতো মাঠে দেখা গিয়েছে, মা সেই মাঠে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতো ।”
অবশেষে গত সপ্তাহে হাওড়া হাসপাতালে জখম অবস্থায় এক তরুণকে ভর্তি করায় পুলিশ । সে কথা বলতে পারে না, কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু হাসে । তারই ছবি আসে মাঝি নামে এক স্বেচ্ছাসেবীর হাতে । তিনি সেই ছবি পাঠান ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের কাছে । শুরু হয় অনুসন্ধান । এরপরই মিলে যায় পরিচয় ।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “আমরা এর আগেও অনেক হারিয়ে যাওয়া মানুষকে তাঁদের পরিবারে ফিরিয়ে দিয়েছি । রেলস্টেশন, হাসপাতাল, রাস্তা থেকে এইভাবে বহু মানুষকে চিহ্নিত করা গিয়েছে । আমাদের দলে স্বেচ্ছাসেবীরা অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ । সাগরের ক্ষেত্রে ঝাজী দেবীর কান্না আর ধৈর্যই আমাদের উৎসাহ জুগিয়েছে ।”
মা এখন কাজ বন্ধ রেখেছেন । বলছেন, “ছেলেটা ফিরুক, ওকে বুকে নিই, তারপর আবার মাঠে যাব ।” আসার ভাড়া নেই, কিন্তু ক্লাবই সমস্ত খরচ নিচ্ছে । যে ছেলেকে পিণ্ড দিয়েছেন, তাকেই এবার নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দেবেন, এই স্বপ্নেই বুক বেঁধেছেন বৃদ্ধা মা ৷