মালদা, 19 জুন: এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর লালসার শিকার হল 10 বছরের এক নাবালিকা ৷ মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ৷ যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া ওই নাবালিকা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ এই ঘটনায় পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তার বউদি ৷ ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী ৷ তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ৷ যদিও নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শাসকদলের সক্রিয় কর্মী হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে গ্রেফতার করছে না ৷ তবে এই ঘটনায় ওই কর্মীর পাশে দল নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব ৷
ঘটনাটি গত শনিবারের৷ নাবালিকার বাড়ির লোকের অভিযোগ, সেদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁদের মেয়ে স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরে ৷ বইয়ের ব্যাগ ঘরে রেখেই পাড়ার কয়েকজন বাচ্চার সঙ্গে বাড়ির পাশে নদীতে স্নান করতে গিয়েছিল সে ৷ সেখান থেকে ফুসলিয়ে তাকে নদীর ধারে পাটখেতে নিয়ে যায় 30 বছর বয়সী ওই যুবক ৷ গ্রামেরই বাসিন্দা সে৷ সম্ভবত সেই কারণে নাবালিকার কোনও সন্দেহ হয়নি ৷ সেই পাটখেতেই মুখে গামছা বেঁধে মেয়েটিকে যৌন হেনস্তা করে ওই যুবক ৷ বেলা 3টে নাগাদ মেয়েটি বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে ৷ রাত 9টা নাগাদ খাবার খাওয়ার জন্য তাকে ঘুম থেকে তোলা হয় ৷
তখন সে জানায়, তার সারা শরীরে খুব ব্যথা ৷ সেকথা শুনে মেয়েটির বউদি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ তখনই সে সব ঘটনা খুলে বলে ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে বড় হাসপাতালে রেফার করে দেন ৷ সে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ শারীরিক পরীক্ষায় তার উপর যৌন হেনস্তার প্রমাণ মিলেছে ৷ মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রথমে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ কিন্তু পুলিশ এখনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ সকলের ৷
নাবালিকার দাদা বলেন, “সেদিন বোন, ভাইপো, আমার ছেলে একসঙ্গেই নদীতে স্নান করতে গিয়েছিল ৷ ওদের সামনে থেকেই বোনকে ওই যুবক পাটখেতে নিয়ে যায় ৷ প্রথমে ওরা কেউ কিছু বুঝতে পারেনি ৷ আসলে ওই যুবক একই গ্রামের বলে বাচ্চাদের কারও কোনও সন্দেহ হয়নি ৷ রাতে বোন সব ঘটনা খুলে বলে ৷ এখন বোন হাসপাতালে ভরতি ৷ পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে ৷ কিন্তু পুলিশ ওকে গ্রেফতার করছে না ৷ তৃণমূলের কর্মী বলেই কি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না ? পুলিশের উপর আমরা ভরসা হারিয়ে ফেলছি ৷ প্রয়োজনে আমরা থানা ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ করব ৷”
অভিযুক্ত যুবক বিবাহিত ৷ তার স্ত্রী বলেন, “সেদিন কী ঘটেছিল আমি কিছুই জানি না ৷ জানলে কি আমি স্বামীকে এই কাজ করতে দিতাম ! সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম ৷ গ্রামের লোকজন আমাকে জানায়, আমার স্বামী নাকি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ৷ বাড়িতে পুলিশ এসেছিল ৷ স্বামীর খোঁজ করছিল ৷ কিন্তু শনিবার থেকেই স্বামী ঘরের বাইরে ৷ কোথায় গিয়েছে, কিছু জানি না ৷ ওকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না ৷ পুলিশকে সেকথা জানিয়েছি ৷ পুলিশ বলে গিয়েছে, স্বামী ঘরে ফিরলে আমি যেন খবর দিই ৷”
নির্যাতিতা নাবালিকার স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “মেয়েটি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে৷ ওর সঙ্গে যে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারছি না ৷ যে এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তার রাজনৈতিক রং না দেখে পুলিশের উচিত দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা ৷”
যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ৷ তার খোঁজে তল্লাশি চলছে ৷ যেভাবেই হোক, তাকে গ্রেফতার করা হবে ৷