মেদিনীপুর, 13 এপ্রিল: শরীরজুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা, জ্বর, কাশি, হাঁটতে গিয়ে কষ্ট- সবকিছু একসঙ্গে ! যন্ত্রণায় ক্রমশ শয্য়াশায়ী হয়ে পড়েন ঝাড়গ্রামের সন্তোষ হেমব্রম ৷ জানা যায়, একজোড়া বিরল রোগে আক্রান্ত তিনি ৷ বছর একুশের ছেলের সেই শারীরিক কষ্টে দুশ্চিন্তায় পড়েন দিনমজুর পরিবার ৷ এবার তাঁদের মুখে হাসি ফোটালেন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৷ তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন সন্তোষ ৷
তিন বছর আগে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস ও অ্যান্টি-সিন্থেটেজ সিনড্রোম নামক দুই বিরল রোগে আক্রান্ত হন সন্তোষ ৷ স্নায়ুর জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় ক্রমশ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছিলেন তিনি ৷ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের চিকিৎসায় ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন সন্তোষ ৷ ছেলে সুস্থ হয়ে ওঠায় চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সন্তোষের পরিবার ৷
উল্লেখ্য, একসঙ্গে একজোড়া বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দেশে খুব কম ৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে অন্তত 7 কোটি মানুষ কোনও না কোনও বিরল রোগে আক্রান্ত । সেই তালিকায় রয়েছে নানা ধরনের অটো-ইমিউন ডিজঅর্ডার, জেনেটিক রোগ ও স্নায়ুর জটিল অসুখ । এইসব রোগ শনাক্ত করা যেমন কঠিন, চিকিৎসাও ততটাই জটিল । তবে, একসঙ্গে দুটি বিরল রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে কী হতে পারে, তা বোঝা যায় ঝাড়গ্রামের 21 বছরের যুবক সন্তোষ হেমব্রমের ঘটনায় ।
গত তিন বছর ধরে কোমরের ব্যথা, শরীরের জয়েন্টে ফোলাভাব, হাঁটাচলায় কষ্ট এবং শুকনো কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গে ভুগছিলেন সন্তোষ । স্থানীয় চিকিৎসায় কোনও স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি । পরে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় ৷ একাধিক শারীরিক পরীক্ষা করার পর জানা যায়, রোগটি আসলে সাধারণ নয় । অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস ও অ্যান্টি-সিন্থেটেজ সিনড্রোম নামক দুটি বিরল অটো-ইমিউন রোগে ভুগছেন সন্তোষ ।
প্রথমটি, মূলত মেরুদণ্ড ও জয়েন্টগুলিকে শক্ত করে দেয় ৷ দ্বিতীয়টি, পেশি দুর্বল করে ও ফুসফুসে প্রদাহ ঘটায় ৷ ধীরে ধীরে সন্তোষের চিকিৎসা শুরু করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৷ চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন তিনি ৷
উল্লেখ্য, একই সঙ্গে দুটি রোগ একজনের শরীরে বাসা বাঁধার ঘটনা বিশ্বে এই নিয়ে তৃতীয় ৷ বর্তমানে সন্তোষের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ও ইনফ্লিক্সিম্যাব ব্যবহার করা হয়েছে ৷ ফিজিওথেরাপি ও শ্বাস প্রশমনের প্রশিক্ষণও চলছে ৷ উপসর্গের উন্নতি দেখা গিয়েছে । সেই কারণে, সন্তোষের সেরে ওঠার বিশয়ে আশাবাদী চিকিৎসকরা ৷ বর্তমানে মেদিনীপুর হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডঃ যুগল কিশোর কর এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বিকাশ চন্দ্র শেঠের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে সন্তোষ ।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক স্পন্দন চৌধুরী বলেন, "এই রোগ সাধারণত পৃথিবীতে তৃতীয় বিরল । শরীরের তুলনায় পা রোগা । পা দুটি একসঙ্গে জুড়ে গিয়েছে । প্রায় 40 দিন আগে হাসপাতালে আসেন সন্তোষ ৷ পুরো বিষয়টি দেখে আমরা সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করি ৷ আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছেন সন্তোষ । আশা করি, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন তিনি ।"
রোগীর মা ফুলমনি হেমব্রম বলেন, "দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে সমস্যাটা শুরু হয় । আমরা বহু জায়গায় ওকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঘুরেছি ৷ কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি । তবে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠছে সন্তোষ ৷ চিকিৎসকদের অনেক ধন্যবাদ ।"