কলকাতা, 29 এপ্রিল: স্কুলের মিড ডে মিলের রান্না মূলত হয় গ্যাস ওভেনে । তবে যত দিন যাচ্ছে, ততই ঊর্ধ্বমুখী রান্নার গ্যাসের দাম ৷ এদিকে, কাঠের জালে রান্নায় বাড়ে দুষণের মাত্রা ৷ এই দুইয়ের কথা মাথায় রেখেই বিকল্প পদ্ধতিতে মিড ডে মিলের রান্নার উদ্যোগ রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে । স্বনির্ভর হয়েই তারা পড়ুয়াদের জন্য তৈরি করবে মিড ডে মিল । সেইমতো রাজ্যে প্রথম একটি সরকারি স্কুলে বসানো হয়েছে রান্নার জন্য যন্ত্র, যা চলবে সৌরশক্তিতে । ইন্ডাকশন জাতীয় সেই যন্ত্রে হবে প্রায় 2200 জন পড়ুয়ার রোজকার রান্না ।
দমদম পার্কের কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে গত সোম এবং মঙ্গলবার এই পদ্ধতিতেই হয়েছে মিড ডে মিলের রান্না । রাজ্যের এই একটি মাত্র স্কুলেই পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে এই কাজ শুরু করেছে স্কুল শিক্ষা দফতর । আগামী দিনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ভাবনা রয়েছে অন্যান্য স্কুলেও ৷
গত বছরের বাজেটেই সৌরশক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার । পরিবেশ বান্ধব এবং বিদুৎ অপচয় রুখতে নেওয়া হয়েছিল 'প্রধানমন্ত্রী-সূর্য ঘর: বিনামূল্য বিদ্যুৎ যোজনা' প্রকল্প । কেন্দ্রীয় সরকারের পর এই নিয়ে রাজ্যেও শুরু হয়েছে কাজ । ইতিমধ্যেই স্কুলশিক্ষা দফতর প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্কুলে বসিয়েছে সৌর প্যানেল । আর এবার চালু করা হল 'ই-গ্রিন কুকিং'৷
এর ফলে স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নার পদ্ধতি হবে পরিবেশ বান্ধব ৷ পাশাপশি থাকবে আরও বেশকিছু সুবিধা । স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার খাঁন জানান, "আগে জ্বালানির সাহায্যে রান্না করা হত । এখন ব্যবহার করা হয় গ্যাস । কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই প্রবল মাত্রায় দূষণ হয় । সেই দূষণ থেকে বাঁচার উপায় হল সৌরশক্তির ব্যবহার । সেই কারণেই আমরা এই ই-গ্রিন কুকিং পদ্ধতি চালু করেছি ।"

প্রধান শিক্ষকের কথায়, স্কুলে যে সৌর প্যানেল বসানো রয়েছে সেখান থেকেই রান্নার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো চলছে । এর ফলে খরচও অনেকটাই কমবে । অন্যদিকে, যে সমস্ত কর্মী রান্নার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদেরকেও বাড়তি সুরক্ষা দেবে এই ব্যবস্থা ৷

প্রধান শিক্ষক বলেন, "এর ফলে কম সময়ে অনেক জনের রান্না হয়ে যাবে । গ্যাস থেকে আগুন লাগার যে ভয় থাকে, সেদিক থেকেও এই পদ্ধতি বেশি সুরক্ষিত হবে । বর্তমানে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা 200 থেকে 250 জনের রান্না করেছি । তবে গরমের ছুটির পর আমরা এরও বড় যে যন্ত্র, সেটা নিয়ে আসব । তখন পুরোদমে এই ভাবেই রান্না হবে ।" স্কুলশিক্ষা দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী, স্কুলগুলোর পরিস্থিতি দেখে প্রায় 3500 টি স্কুলে এই যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য সরকার ৷

কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে মিড ডে মিলের রান্নার কাজে যুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রঞ্জু নায়েক বলেন, "এর সাহায্যে রান্নায় আমাদের কোনও ভয় থাকবে না । খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে নির্ভয়ে রান্না করা যাবে । কিন্তু আমার মনে হয়েছে গ্যাসের থেকে একটু সময় বেশি লাগছে । তবে এতে রান্না করতে বেশ ভালো লাগছে ৷" রান্নার সময় বেশি লাগার কারণ হিসাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, "স্কুলে বিদ্যুতের কিছু কাজ বাকি আছে । পুরোদমে এই মেশিনে রান্না চালু হলে তখন বড় যন্ত্র আসবে । আর অল্প সময়েই রান্না হয়ে যাবে ।"